“বিপদে ধৈর্যধারণ ও আল্লাহর উপর ভরসা রাখাই কারবালার শিক্ষা”
চট্টগ্রাম: নগরীর জমিয়তুল ফালাহ জাতীয় মসজিদ প্লাজায় আহলে বাইত রাসুল (সা.) স্মরণে ১০ দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক শাহাদাতে কারবালার মাহফিলের চতুর্থ দিনে রোববার দেশি-বিদেশি আলোচক ও ইসলামী চিন্তাবিদরা বক্তব্য রেখেছেন।
বক্তারা বলেন, কারবালার ময়দানে আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর আহলে বাইতের নিষ্পাপ ও অবুঝ শিশু ও নারীরাও ক্ষুধা-তৃষ্ণায় ভুগছিল। তবে ধৈর্য হারাননি তারা। কঠিন পরিস্থিতিতেও পরম ধৈর্য ও ধৈর্যের পরিচয় দিয়ে তারা ধৈর্য ও ত্যাগের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। কঠিন সংকটেও সত্যকে আঁকড়ে থাকা, দ্বীনের পথ থেকে বিচ্যুত না হওয়া, ধৈর্য ধরে বিপদ-আপদ ও সব প্রতিকূলতার মোকাবিলা করা এবং সর্বাবস্থায় সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর ভরসা করাই কারবালায় শাহাদাতের শিক্ষা ও দর্শন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জমিয়তুল ফালাহ মসজিদের খতিব ইসলামী চিন্তাবিদ আল্লামা সৈয়দ আবু তালিব মুহাম্মদ আলাউদ্দিন। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, শিক্ষাবিদ-গবেষক প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী।
প্রধান অতিথি ডাঃ ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, কারবালার প্রান্তরে হযরত ইমাম হোসাইন (রা.) এর নেতৃত্বে নবী পরিবার ও আহলে বাইত রাসুল (সা.) পরিবারের নিষ্পাপ সদস্যরা ধৈর্য ও ত্যাগের অসামান্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। দ্বীনের পথে অনেক বাধা-বিপত্তি আসবে। কঠিন ধৈর্যের মাধ্যমে এর মোকাবিলা করাই কারবালার শাহাদাতের শিক্ষা ও দর্শন।
মাহফিলে স্বাগত বক্তব্য রাখেন শাহাদাত কারবালা মাহফিল ব্যবস্থাপনা পরিষদের চেয়ারম্যান ও প্রধান উদ্যোক্তা ও পিএইচপি ফ্যামিলির চেয়ারম্যান গবেষক সুফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। নবী পরিবারের দানশীলতা ও মানবসেবার দৃষ্টান্ত তুলে ধরে তিনি বলেন, নবী দোহিত্র হযরত ইমাম হাসান (রা.)-এর কাছে এসে এক ব্যাক্তি বলেন, আমি ঋণের বোঝায় ভারাক্রান্ত। কিন্তু ঋণ পরিশোধ করার সামর্থ্য আমার নেই। ঋণ নিয়ে মরতে হতে পারে। হযরত ইমাম হোসাইন (রা.) বললেন, তোমার ঋণের পরিমাণ কত? লোকটি বলল ৬০ হাজার দিরহাম। হজরত ইমাম হাসান (রহ.) পরিবারের কথা চিন্তা না করে পুরো ৬০ হাজার দিরহাম ওই ব্যক্তিকে দান করেন। এটি নবী পরিবারের দানশীলতা ও পরোপকারের এক অতুলনীয় উদাহরণ।
আন্তর্জাতিক বক্তা আল্লামা মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন আত তাহেরী হযরত ইমাম হোসাইন (রা.)-এর ত্যাগ ও ধৈর্য নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, হযরত ইমাম হোসাইন (রা.) ও আহলে বাইত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর মহান সদস্যদের ধৈর্য ও ত্যাগের সিঁড়ি বেয়ে আজ আমরা দ্বীন ইসলামের মহান আশীর্বাদে ধন্য হয়েছি। কঠিন ও প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও ধৈর্য না হারানো, দ্বীন ও সত্যের উপর অবিচল ও অটল থাকা হজরত ইমাম হোসাইন (রা.) এর দর্শন ও শিক্ষা এবং কারবালার শাহাদাত।
মিডিয়া ব্যক্তিত্ব আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ হাসান আজহারী আহলে বাইত রাসুল (সাঃ) এর শাহাদাতে কারবালার দর্শন নিয়ে আলোচনা করছেন। তিনি বলেন, শাহাদাতের কারবালা মাহফিল বিশেষ কোনো ব্যক্তির প্রচারের জন্য আয়োজন করা হয়নি।
পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন আন্তর্জাতিক কারী আহমাদ বিন ইউসুফ আল আজহারী। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন প্রফেসর ডক্টর আল্লামা জাফর উল্লাহ ও হাফেজ আল্লামা আহমদুল হক। অতিথি ছিলেন চকের সাবেক চেয়ারম্যান রাজনীতিবিদ আবদুচ ছালাম, গাউছিয়া কমিটির চেয়ারম্যান পেয়ার মোহাম্মদ কমিশনার, ছোবহানিয়া আলিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আল্লামা মুহাম্মদ হারুনুর রশীদ, পিএইচপি ফ্যামিলির পরিচালক ও মাহফিলের প্রধান সমন্বয়কারী মুহাম্মদ আলী হোসাইন সোহাগ, এমইবি গ্রুপের পরিচালক সোয়াইব রিয়াদ, জামিয়া আলিয়া সুনয় আল্লামা এর সিনিয়র আরবি প্রভাষক ড. হাশেম শাহ, জামিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া আরবি প্রভাষক আল্লামা গোলাম মোস্তফা মুহাম্মদ নুরুন্নবী।
এছাড়াও মাহফিলে পরিচালনা পর্ষদের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ, বিভিন্ন দরবারের সাজ্জাদানশীন ও আওলাদবৃন্দ এবং বিভিন্ন মাদ্রাসার আলেমগণসহ সকল স্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
মাহফিলের ৬ষ্ঠ দিন থেকে নারীদের পর্দাসহ মাহফিলে অংশগ্রহণের ব্যবস্থা থাকবে। মাহফিল sufitv.com, www.shahadat-e-karbala.com-এ লাইভ স্ট্রিমিং হচ্ছে।