• বাংলা
  • English
  • জাতীয়

    বিদ্যুৎ বিভ্রাট।রাজধানীতে স্বস্তি থাকলেও দুর্ভোগ পোহাচ্ছে গ্রামাঞ্চলে

    তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় লোডশেডিং ফিরে এসেছে। গ্রামে দিনরাত ৮-১০ ঘণ্টা বিদ্যুৎ নেই। কোথাও কোথাও প্রতি ঘণ্টায় বিদ্যুৎ যাচ্ছে। শহরগুলোতেও ৩-৪ ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে। চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন না হওয়ায় গত কয়েকদিনে দুই হাজার মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুতের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। কিন্তু রাজধানীবাসী স্বস্তিতে ।

    লোডশেডিংয়ের কারণে মে ও জুনের শুরুতে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে দেশের মানুষকে। বৃষ্টির কারণে জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে তাপমাত্রা কমতে শুরু করে। বিদ্যুতের চাহিদা কমে যায়। লোডশেডিংও কমেছে। ফলে জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত বিদ্যুৎ বিভাগও বেশ স্বস্তিতে ছিল। তখন বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা ছিল দৈনিক ১২ থেকে ১৩ হাজার মেগাওয়াট, লোডশেডিং ছিল ২০০-৩০০ মেগাওয়াট। তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে ৯-১০ জুলাই পর্যন্ত বিদ্যুতের চাহিদা বৃদ্ধি পায়। দৈনিক সর্বোচ্চ চাহিদা কখনও কখনও ১৫,০০০ মেগাওয়াট ছাড়িয়ে যায়। কিন্তু সেভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়েনি। বিদ্যুতের ঘাটতি বেড়েই চলেছে। কিছু দিন, বিশেষ করে মধ্যরাতে ২০০০ মেগাওয়াট পর্যন্ত লোডশেডিং হয়। রাজধানীতে এর প্রভাব এত বেশি ছিল না।

    গ্রাম ও পৌরসভা এবং জেলা শহরে লোডশেডিং বেশি হয়। তবে ছুটির দিন হওয়ায় গত দুই দিন শুক্র ও শনিবার বিদ্যুতের ঘাটতি কিছুটা কম ছিল।

    গত বৃহস্পতিবার রাত ১টায় বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা ছিল ১৪ হাজার ৭০০ মেগাওয়াট, লোডশেডিং ছিল ১৯০৫ মেগাওয়াট। গতকাল শনিবার বিকেল ৩টায় বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১৩ হাজার ৫৫০ মেগাওয়াট, লোডশেডিং ছিল ৪০৮ মেগাওয়াট। তবে রাতে লোডশেডিং বেড়ে যায়।

    আবহাওয়াবিদরা বলছেন, তাপমাত্রা আরও বাড়বে। এতে লোডশেডিং আরও বাড়বে বলে মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিস্থিতির উন্নতির বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) একজন সদস্য বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে সব ধরনের চেষ্টা করা হচ্ছে। আদানি, এস আলম প্ল্যান্ট থেকে আরও শক্তি নেওয়া হবে। বেসরকারি কেন্দ্রে উৎপাদন বাড়ানোর ব্যবস্থা করা হবে। শীঘ্রই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।

    লোডশেডিং কেন?

    সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বাগেরহাটের রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র যেটি ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করত, তা গত ১৬ জুলাই থেকে কারিগরি ত্রুটির কারণে বন্ধ হয়ে যায়। ট্রান্সমিশন লাইনের অসম্পূর্ণ নির্মাণের কারণে ভারতে আদানির কাডা প্ল্যান্ট থেকে ৭০০ মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ পাওয়া যায় না। বকেয়া বিলের কারণে ফার্নেস অয়েল আমদানি করতে পারছেন না বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র মালিকরা। ফলে কেন্দ্রগুলো পূর্ণ সক্ষমতায় চলছে না। আর সব ডিজেল চালিত বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র গত জুন মাস থেকে বন্ধ রয়েছে। ১২০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস এখন বিদ্যুতে সরবরাহ করা হচ্ছে; যা দৈনিক ২১৫ মিলিয়ন ঘনফুট চাহিদার প্রায় অর্ধেক হলেও এর বেশি গ্যাস দেওয়া সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে পেট্রোবাংলা। বর্তমানে বিদ্যুতের অভাবে তিন হাজার থেকে সাড়ে তিন হাজার মেগাওয়াট এবং প্রযুক্তিগত কারণে আরও তিন হাজার মেগাওয়াট কম হচ্ছে। যদিও দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২৪ হাজার ১৭১ মেগাওয়াট।

    গ্রামে বিদ্যুৎ আসে আর যায়

    ঢাকার বাইরে বিদ্যুৎ বিভ্রাট চরমে পৌঁছেছে। কোনো কোনো এলাকায় দিনে ৮-১২ ঘণ্টা লোডশেডিং থাকে। কোথাও কোথাও প্রতি ঘণ্টায় বিদ্যুৎ যাচ্ছে। গ্রামাঞ্চলের অবস্থা আরো ভয়াবহ। জেলা শহরগুলোতে ৩-৪ ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আওতাভুক্ত এলাকাগুলো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

    কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি জানান, শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর সোয়া ১২টা পর্যন্ত জেলা শহরে লোডশেডিং ছিল। নাগেশ্বরী উপজেলা সদরে বেলা ১১.৩০ থেকে দুপুর ১২.৪৫ এবং শনিবার সকাল ১০.৩০ থেকে ১২.৩০ পর্যন্ত লোডশেডিং ছিল। এ জেলার সীমান্তবর্তী চর রাজীবপুর ও রৌমারী উপজেলায় ২৪ ঘণ্টায় মাত্র ১৩ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে। শুক্রবার রৌমারীর দাঁতভাঙ্গা ইউনিয়নে রাত ১১টা থেকে সকাল পর্যন্ত মাত্র ২-৩ ঘণ্টা বিদ্যুৎ ছিল। কুড়িগ্রামের উলিপুরের গুনাইগাছ গাবতলা বাজারের ব্যবসায়ী উজ্জল মিয়া জানান, প্রতিদিন গড়ে ৫-৭ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে। রৌমারীর চরগোইটা পাড়ার বাসিন্দা বেলাল হোসেন বলেন, আমাদের ইউনিয়নে গড়ে ৩-৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে, বাকি সময় তা পাওয়া যায় না।

    কারেন্টের ভোল্টেজও খুব কম।

    চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, বিদ্যুতের চাহিদার অর্ধেক আবার কখনো চাহিদার এক-তৃতীয়াংশ বরাদ্দ দেওয়া হয়। বিভিন্ন এলাকায় লোডশেডিং হচ্ছে। পৌর এলাকার কলেজ শিক্ষক গোলাম মোস্তফা মামুন বলেন, ২৪ ঘণ্টায় অন্তত ৪-৫ বার লোডশেডিং হয়। প্রচণ্ড গরমে বিদ্যুত না থাকলে শিশুরা লেখাপড়া করতেও চায় না। সদর উপজেলার মহিপুর গ্রামের বাবুল হোসেন জানান, রাতে মাত্র ৮-১০ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে। পল্লী বিদ্যুতায়নের আওতায় থাকা ময়মনসিংহের গ্রামগুলো প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ সরবরাহের অর্ধেক পাচ্ছে। রংপুর অঞ্চলে এলাকাভেদে ২৪ ঘণ্টায় ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না।