বিদ্যুতের দাম আরও ৫ শতাংশ বাড়তে পারে।এ মাসেই গ্যাসের দাম বাড়তে পারে
ফেব্রুয়ারিতে আবারও ৫ শতাংশ বাড়তে পারে বিদ্যুতের দাম। এদিকে চলতি মাসে গ্যাসের দাম বাড়তে পারে। সরকারি সূত্রে এ আভাস পাওয়া গেছে।
বৃহস্পতিবার নির্বাহী আদেশে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ৫ শতাংশ বাড়ানো হয়। কিন্তু এই বৃদ্ধি লোকসান মেটাতে খুব একটা নয়। তাই আগামী মাসেও বিদ্যুতের দাম ৫ শতাংশ বাড়ানো হতে পারে। এভাবে ধীরে ধীরে বিদ্যুতের খুচরা মূল্য ১৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হবে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।
সূত্র জানায়, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে ঋণ পেতে ভর্তুকি কমানোর অংশ হিসেবে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। নিত্যপণ্য, শিল্প, পরিবহনসহ সব খাতে খরচ বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। অর্থনীতিতে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।
বেসরকারি প্ল্যান্ট ও আমদানি করা বিদ্যুৎ চড়া দামে কিনে কম দামে বিক্রি করায় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে (পিডিবি) প্রতি বছর হাজার হাজার কোটি টাকা লোকসান দিতে হয়। সিস্টেমের নামে শত শত কোটি টাকার বিদ্যুৎ চুরি হয়। এসব লোকসান মেটাতে রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানিটি সরকারের কাছ থেকে ভর্তুকি পায়। ২০২১-২২ অর্থবছরে, পিডিবি ২৯,৬৫৮ কোটি টাকা ভর্তুকি চেয়েছে। এ পর্যন্ত অর্থ মন্ত্রণালয় ছাড় করেছে ১৮ হাজার ৫৬১ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের (২০২২-২৩) জন্য পিডিবি ভর্তুকি প্রাক্কলন করেছে ৪৪.২০০ কোটি টাকা। সরকার চলতি অর্থবছরে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি হিসাবে ১৭.০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে।
লোকসান মেটাতে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) ২১ নভেম্বর বিদ্যুতের পাইকারি মূল্য (সাধারণ গ্রাহকদের জন্য প্রযোজ্য নয়) ১৯.৯২ শতাংশ বাড়িয়েছে। এরপর ৬টি বিতরণ কোম্পানি গ্রাহক পর্যায়ে গড়ে ২০ শতাংশ বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর আবেদন করে।
৮ জানুয়ারি তাদের আবেদনের ওপর গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানিতে বিইআরসির কারিগরি মূল্যায়ন কমিটির বিশ্লেষণ অনুযায়ী, পাইকারি মূল্য বৃদ্ধির কারণে বিতরণ কোম্পানিগুলোর অতিরিক্ত ব্যয় মেটাতে ৮,০০০ কোটি রুপি প্রয়োজন। এ জন্য কমিটি ১৫ দশমিক ৪৩ শতাংশ দাম বাড়ানোর সুপারিশ করেছে। বিইআরসি আদেশ ঘোষণার আগে তাড়াহুড়ো করে গত বৃহস্পতিবার রাতে এক নির্বাহী আদেশে বিদ্যুতের খুচরা মূল্য ৫ শতাংশ বাড়ানো হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এক দফায় বিদ্যুতের দাম ১৫ শতাংশ বাড়ানো হলে গ্রাহকদের ওপর বাড়তি চাপ পড়বে। এ কারণে ধাপে ধাপে তা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গ্যাস ও বিদ্যুতের ভর্তুকি কমানোর বিষয়ে গত সপ্তাহে বিদ্যুৎ বিভাগে একাধিক বৈঠক হয়েছে। প্রতি মাসে একটু একটু করে দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত রয়েছে। এ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জানুয়ারিতে ৫ শতাংশ বাড়ানো হয়। এরপর ফেব্রুয়ারিতে তা ৫ শতাংশ বাড়ানো হবে। এভাবে পর্যায়ক্রমে মোট দাম ১৫ শতাংশ বাড়ানো হবে। ভবিষ্যতে জ্বালানির দাম কমলে বিদ্যুতের দাম কমবে।
এ বিষয়ে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের কাছে জানতে চাওয়া হলে শুক্রবার কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে গত বৃহস্পতিবার বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ভর্তুকি কমাতে বিদ্যুতের দাম সমন্বয় করা হয়েছে। তবে পিডিবির লোকসানের তুলনায় দাম সামান্য বেড়েছে। তিনি এ সময় বলেন, এখন থেকে প্রতি মাসের প্রথম সপ্তাহে বিদ্যুতের দাম সমন্বয় করা হবে। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেল, কয়লা ও গ্যাসের দাম বাড়লে বিদ্যুতের দাম বাড়বে। জ্বালানির দাম কমলে বিদ্যুতের দামও কমবে। তিনি বলেন, প্রতি মাসে এই সমন্বয় করা হলে পিডিবির ওপর চাপও কমবে।
আগামী মাসে আবারও বিদ্যুতের দাম বাড়বে কিনা জানতে চাইলে বিদ্যুৎ সচিব হাবিবুর রহমান বিষয়টি স্বীকার বা অস্বীকার করেননি। তিনি বলেন, আগামীতে জানা যাবে। এ বিষয়ে এখনই কোনো মন্তব্য করতে চাই না।
গ্যাসের দাম: ৫ জুন গ্যাসের দাম বাড়ানো হয় ২২ শতাংশের বেশি। এরপরও এ খাতে লোকসান হচ্ছে বলে দাবি করছে পেট্রোবাংলা। তাই চলতি মাসেই নির্বাহী আদেশে গ্যাসের দাম বাড়ানো হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এ বিষয়ে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ ও জ্বালানি সচিব মোঃ খায়রুজ্জামান মজুমদারের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার বলেন, এই দায়িত্বে তিনি নতুন। সে এখনো পুরোপুরি জানে না।