জাতীয়

বিএফআইইউ প্রধান ক্ষমা চাইলেন।পাচার করা টাকা ফেরত আনা যাবে না কেন: হাইকোর্ট

দেশ থেকে পাচার হওয়া টাকা দেশে ফিরে আসবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে হাইকোর্ট বলেন, দেশ ভালো থাকলে আমরা সবাই ভালো থাকব। ভালোর জন্যই দেশ স্বাধীন হয়েছে। বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান মাসুদ বিশ্বাস হাইকোর্টে হাজির হয়ে দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চেয়ে এসব কথা বলেন।

আদালত আরও বলেছে, ভারত দ্বিপাক্ষিক চুক্তি করে বিদেশ থেকে পাচার করা টাকা ফেরত এনেছে। ভারত পারলে আমরা কেন পারব না? আমাদেরও চেষ্টা করতে হবে।

একই সঙ্গে মানিলন্ডারিং বিরোধী কার্যকর ব্যবস্থা গড়ে তুলতে বিএফআইইউকে একটি ‘রিসার্চ সেল’ গঠনের পরামর্শ দেন হাইকোর্ট। এছাড়া কোন দেশ থেকে বিএফআইইউ কর্তৃক মানি লন্ডারিং ও মানি লন্ডারিং সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আদালতে দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান এবং রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক।

গত ১০ আগস্ট জাতীয় প্রেসক্লাবে ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (ডিসিএবি) আয়োজিত ‘ডিসিএবি টক’-এ ঢাকায় নিযুক্ত সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত নাথালি শুয়ার্ড বলেন, বাংলাদেশ সরকার সুইজারল্যান্ডে জমা হওয়া অর্থের তথ্য চায়নি। কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তির জন্য সুইস ব্যাংক। সুইজারল্যান্ড সুইস ব্যাংকের ত্রুটি সংশোধনের জন্য কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। তবে তিনি বলেন, সুইজারল্যান্ডে কালো টাকা রাখার নিরাপদ জায়গা নয়।

সুইস রাষ্ট্রদূত বলেন, গত বছর সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে বাংলাদেশের প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা জমা ছিল। তবে উভয় দেশের সম্মতিতে ব্যাংকিং তথ্য আদান-প্রদান করা যায় এবং তা সম্ভব। তারা এটা নিয়ে কাজ করছে।

পরদিন বিষয়টি আমলে নিয়ে হাইকোর্ট রাষ্ট্রপক্ষ ও দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) স্বতঃস্ফূর্তভাবে কেন আমানতকারীদের তথ্য জমা দিয়েছে তা রাষ্ট্রপক্ষ ও দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) জানাতে বলেন। সুইস ব্যাংককে অনুরোধ করা হয়নি। তখন দুদক ও বিএফআইইউ-এর পক্ষ থেকে হলফনামা আকারে তথ্য আদালতে দাখিল করা হয়। সেই হলফনামায় যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করায় বিএফআইইউ প্রধানকে তলব করা হয়।

আজ হাজির হয়ে মাসুদ বিশ্বাস আদালতে দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, অসতর্কতার কারণে এমনটি হয়েছে। খসড়া প্রতিবেদন আদালতে পেশ করা হয়েছে। তিনি যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে প্রতিবেদন জমা দেন। এ ধরনের ভুলের পুনরাবৃত্তি হবে না বলে প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।

এ সময় আদালত বলেন, আদেশ বাস্তবায়ন প্রতিবেদন আরও সতর্কতার সঙ্গে পাঠাতে হবে। বিএফআইইউ প্রধান মাসুদ বিশ্বাস ক্ষমা চাইলে আদালত তাকে সতর্ক করে বলেন, ভবিষ্যতে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিএফআইইউর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এফআইইউ ও এগমন্ট গ্রুপের কাছ থেকে বিভিন্ন দেশে প্রায় ৬৭ জনের তথ্য চাওয়া হয়েছে। প্রতিবেদন দেখে আদালত বিএফআইইউ প্রধানের কাছে ৬৭ জনের নাম কীভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে তা জানতে চান। জবাবে মাসুদ বিশ্বাস বলেন, তিনি গণমাধ্যম ও অন্যান্য সংস্থা থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছেন। তখন আদালত বলেন, আপনার কাছে সঠিক তথ্য নেই। অনুমানের ভিত্তিতে তথ্য আদালতে দেওয়া যাবে না। মনে হচ্ছে অনুমানের ভিত্তিতে ৬৭ জনের নাম নির্ধারণ করা হয়েছে। কম হতে পারে, বেশিও হতে পারে। মাসুদ বিশ্বাস জানান, বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে তিনি নামগুলো পেয়েছেন।

অর্থ পাচারকারীদের নাম জানতে এবং টাকা ফেরত দিতে বিএফআইইউ-এর কোনো দ্বিপাক্ষিক চুক্তি বা কোনো দেশের সঙ্গে যোগাযোগ আছে কি না, এ প্রশ্নের জবাব দেননি মাসুদ বিশ্বাস।

বিএফআইইউ প্রধানকে মানি লন্ডারিং-বিরোধী ভারতীয় মামলা ‘রামজিৎ মালানি বনাম ইউনিয়ন অফ ইন্ডিয়া’ পড়ার পরামর্শ দিয়ে, আদালত বলেছে যে কেবলমাত্র চিঠির (বিভিন্ন দেশের এফআইইউসি-কে) প্রচলন যথেষ্ট নয়। আইনের মধ্যে যথাযথ প্রক্রিয়া এবং আন্তর্জাতিক মান অনুসরণ না করলে, আপনি ৫০ বছরেও অর্থ পাচার এবং পাচারকারীদের তথ্য পাবেন না। এরপর মাসুদ বিশ্বাস বিএফআইইউ-এর কার্যক্রম তুলে ধরে বলেন, ২০১৭ সাল থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত ৯৮৩টি গোয়েন্দা প্রতিবেদন দুদক, এনবিআর ও অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে জমা দিয়েছে।

আদালত এফআইইউ থেকে এফআইইউ চুক্তি হওয়া উচিত বলে মত দেয় এবং বলে যে ভারত দ্বিপাক্ষিক চুক্তি করে ৭৮৪ জনের অর্থ ফিরিয়ে এনেছে। টাকা ফেরত পেতে আপনি কি পদক্ষেপ নিচ্ছেন তা আমাদের জানান। একটি গবেষণা সেল তৈরি করুন এবং তথ্য দিন।

মন্তব্য করুন