রাজনীতি

বিএনপি-জামায়াতের হরতাল: ১৩ জেলায় সহিংসতা, নিহত ৪

বিএনপি-জামায়াতের ডাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতালে রোববার রাজধানী ঢাকাসহ অন্তত ১৩ জেলায় সহিংসতার ঘটনা ঘটে। চার জনের মৃত্যু হয়েছে। একটি যাত্রীবাহী বাসসহ অন্তত ১৪টি গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়। ভাঙচুর করা হয় পাঁচটিরও বেশি গাড়ি।

হরতাল চলাকালে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিএনপির নেতা-কর্মীরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে এবং একে অপরকে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া করে। লাঠিচার্জ ছাড়াও বিএনপি নেতাকর্মীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ টিয়ারশেল ও গুলি ছোড়ে। এসব ঘটনায় পুলিশসহ বিএনপির শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।

গতকাল সন্ধ্যায় এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে তিন দিনের অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

এর আগে হরতাল চলাকালে গুলশানের বাসা থেকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়। এছাড়া ১৯ জেলায় বিএনপি-জামায়াতের ৮০০ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

সকাল থেকেই রাজধানীর সড়ক-মহাসড়ক ফাঁকা দেখা গেছে। গণপরিবহন কম হলেও সিএনজি চালিত অটোরিকশা ও রিকশা চলাচল করে।

এছাড়া কিছু প্রাইভেট কারো নজর কেড়েছে। দীর্ঘ বিরতির পর বাসস্ট্যান্ডে বাস থামিয়ে অফিসগামী লোকজনসহ বিভিন্ন গন্তব্যে উঠতে দেখা গেছে। রাজধানীসহ সারাদেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে পুলিশ, বিজিবি ও র‌্যাবকে নিরাপত্তা দিতে দেখা গেছে।

গুলিস্তান, মতিঝিল, ফার্মগেট, উত্তরা, কুড়িল বিশ্বরোড, বনানী, মহাখালী ও মিরপুর যান। ঢাকার বাইরে উত্তরা থেকে দু-তিনটি বাস ছাড়তে দেখা গেছে।

হাউস বিল্ডিং মোড়ে ঘণ্টাখানেক অপেক্ষার পর বাসে ওঠেন আল আমিন। বললেন, ‘আমি সায়েন্স ল্যাবে যাব। খুব ভোরে রওনা দিলাম। বাস নেই। বাস আসতেই আমি কোনোমতে উঠতে পেরেছি।

মিরপুর-১০, ১১  এবং কালশী হয়ে উত্তরা অভিমুখী বেশ কয়েকটি বাসকে যাত্রী ভর্তি করে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা হতে দেখা গেছে। এছাড়া গণপরিবহন বিআরটিসি বাসও অন্যান্য দিনের তুলনায় বেশি দেখা যায়। জাহিদুল ইসলাম নামে অপর এক যাত্রী বলেন, ধর্মঘটের কারণে সড়কে কোনো গাড়ি নেই। আজ অফিস আছে, অনেকের পরীক্ষা আছে। এটি একটি চরম দুর্ভোগ।

সকাল থেকে বিকেল সাড়ে চারটার মধ্যে রাজধানীতে ছয়টি বাসে আগুন দেওয়া হয়। সকাল ৯টার দিকে বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে শেখর পরিবহনের একটি গাড়িতে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। সকাল ১০টা ২২ মিনিটে মোহাম্মদপুর টাউন হল বাজার এলাকায় পরিবর্তন পরিবহন নামের একটি যাত্রীবাহী বাসে এবং সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বংশালের তাঁতীবাজার মোড়ে বিহঙ্গ পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। ভোরে মোহাম্মদপুরের ময়ূর ভিলার বিপরীত পাশে একটি স্বাধীন বাস ও ডেমরার দেইল্লা বাসস্টেশন এলাকায় অসীম পরিবহনের একটি বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। রাজধানীর মোহাম্মদপুর বচিলায় বিহঙ্গ পরিবহনের একটি বাসে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা।

রাজধানীতে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে

ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের মোহাম্মদপুর জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) আজিজুল হক জানান, সকাল ১০টার দিকে মোহাম্মদপুরের আসাদ এভিনিউতে বাসে আগুন দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় আব্দুর রশিদ (৩৬) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়।

তবে বিএনপির দাবি, ওই ব্যক্তিকে ছাদ থেকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। বিএনপির ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক জানান, হরতাল মিছিল শেষে ফেরার সময় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আবদুর রশিদকে মারধর করে নির্মাণাধীন একটি ভবনের ছাদ থেকে ফেলে দেয়।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগের মোহাম্মদপুর অঞ্চলের সহকারী কমিশনার (এসি) আজিজুল হক বলেন, বাসটিতে আগুন লাগার পর সেখান থেকে একজন নির্মাণাধীন ভবনে ছুটে যান। এক ভবন থেকে অন্য ভবনে ঝাঁপ দিতে গিয়ে তিনি পড়ে যান এবং মারা যান। তবে তারা তদন্ত করে বিস্তারিত বলতে পারবে।

ডেমরা দেল্লা বাসস্টেশন এলাকায় ঘুমন্ত অবস্থায় বাসে আগুন দিলে চালকের সহকারী নাঈম (২২) মারা যায়। এ সময় রবিউল (২৫) নামে অপর এক পরিবহন শ্রমিক আহত হন। ডেমরা থানার এসআই সাইদুর রহমান জানান, ঘটনার পর নাঈমকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। কে বা কারা আগুন দিয়েছে তা জানা যায়নি বলে জানান ওই পুলিশ কর্মকর্তা।

লালমনিরহাট হামলায় আ. লীগ নেতার মৃত্যু

লালমনিরহাট সদর উপজেলার মহেন্দ্রনগর বাজারে জাহাঙ্গীর হোসেন নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। তিনি সদর উপজেলার গোকুন্দা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য ও সদর উপজেলা লোড-আনলোড শ্রমিক ইউনিয়নের যুগ্ম সম্পাদক বলে দাবি করেছে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের শান্তি মিছিলে অতর্কিত হামলায় জাহাঙ্গীরকে বিএনপির লোকজন কুপিয়ে হত্যা করেছে বলে দলটির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে।

এ ঘটনার প্রতিবাদে গতকাল বের হওয়া আওয়ামী লীগের বিক্ষোভ মিছিল থেকে বিএনপির তিনটি কার্যালয় ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এর আগে ভোরে আদিতমারী উপজেলা বিএনপি কার্যালয়েও হামলা হয়। হরতাল চলাকালে বিক্ষিপ্ত হামলা, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।