বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশ।কুমিল্লায় ফেনী বাগেরহাটে মিন্টুর বহরে হামলা
বিএনপির চলমান বিক্ষোভ সমাবেশকে ঘিরে সহিংসতা অব্যাহত রয়েছে। মঙ্গলবারও ফেনী, কুমিল্লা, বাগেরহাট, মুন্সীগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে হামলা ও সংঘর্ষে দলটির অর্ধ শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। ফেনীর দাগনভূঁয়ায় সমাবেশে যাওয়ার পথে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টুর গাড়িবহরে হামলায় অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। কুমিল্লার তিতাস ও বাগেরহাটের চিতলমারীতে সংঘর্ষে অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছে। মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় হামলায় বিএনপি ও ছাত্রদলের চার নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। ক্ষমতাসীনদের বাধায় কুমিল্লা, বাগেরহাট, লক্ষ্মীপুর ও মুন্সীগঞ্জের কর্মসূচি স্থবির হয়ে পড়ে। তবে রাঙ্গামাটি সদরে ১৪৪ ধারা জারি হওয়ার পর বিকল্প স্থানে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন জেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা।
জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি, পরিবহন ভাড়া বৃদ্ধি এবং ভোলায় ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের দুই নেতা নিহতের প্রতিবাদে গত ২২ আগস্ট থেকে দেশব্যাপী নানা কর্মসূচি শুরু করে বিএনপি। এসব কর্মসূচিকে ঘিরে দেশের বিভিন্ন স্থানে ক্ষমতাসীন দল ও পুলিশের মধ্যে বাধা, হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা বাড়ছে। এতে আহত হচ্ছেন বিএনপির অনেক নেতাকর্মী। প্রশাসন অনেক জায়গায় ১৪৪ ধারা জারি করছে। এসব হামলায় পুলিশ নেতাকর্মীদের ওপর হামলা ও গ্রেপ্তার করছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি।
বিএনপির দাবি, এ পর্যন্ত শতাধিক স্থানে হামলা হয়েছে। এ ছাড়া অর্ধশতাধিক স্থানে তাদের সমাবেশে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। এ পর্যন্ত শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আহত হয়েছেন অন্তত ৯০০ জন। হাজার হাজার নেতাকর্মীর নামে মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে।
ফেনী: কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল বিকেলে আলাইয়ারপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন স্থানে বিক্ষোভ সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে দাগনভূঞা উপজেলা বিএনপি। নিজ গ্রামে সমাবেশে যাওয়ার পথে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টুর গাড়িবহরে হামলা চালায় ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা। রহিম মোল্লা, সৈকত, মিলন, সোহাগ, মহিউদ্দিন, নূর ইসলাম, ফাহাদসহ বিএনপির অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। এ সময় তাদের অনেকের কাছ থেকে মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়া হয়।
পরে সমাবেশে এসে আবদুল আওয়ান মিন্টু বলেন, হামলা-মামলা, খুন-গুম করে কোনো লাভ হবে না। সরকারকে দ্রুত চলে যেতে হবে। তিনি অভিযোগ করেন, সমাবেশে যাওয়ার পথে আমার কনভয়কে উলঙ্গ করে হামলা করে গাড়ি ভাংচুর করা হয় এবং নেতাকর্মীদের আহত করা হয়।
সমাবেশে উপজেলা বিএনপির সভাপতি আকবর হোসেন অভিযোগ করে বলেন, সমাবেশে অংশ নিতে বাধা দিতে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কর্মীরা দুই দিন ধরে আমাদের নেতাকর্মীদের বাড়িঘরে হুমকি ও ভাংচুর করছে। মঙ্গলবার সকাল থেকে তারা উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে সশস্ত্র অবস্থান নিয়ে পথে পথে মারধর করে। যুবদলের আহ্বায়ক কবির আহমেদ ডিপলুর বাড়িতে হামলা, যুবদল নেতা দ্বীন মোহাম্মদ দেলুকে পিটিয়ে পা ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছে এবং উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক পেয়ার আহমদকে মসজিদে অবরুদ্ধ করেছে ক্ষমতাসীনরা।
কুমিল্লার তিতাসে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে বিএনপির অন্তত ১৫ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। পরে পূর্ব নির্ধারিত প্রতিবাদ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ বাতিল করা হয়। গতকাল উপজেলার গাজীপুরের হারুন-উর রশিদ গার্লস কলেজ সংলগ্ন মাঠে জনসভাকে ঘিরে বন্দরামপুর এলাকায় অবস্থান নেন বিএনপির শত শত নেতাকর্মী। তারা মিছিল নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে কড়িকান্দি বাজার থেকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এসে তাদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে সুমন মেম্বার, আক্তার বেপারী, মাহবুবুর রহমান সরকার, মোস্তাক মিয়া, ইসমাইল হোসেনসহ বিএনপির অন্তত ১৫ সদস্য আহত হন। পরে গুরুতর আহত সুমন মেম্বারকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
বাগেরহাটের চিতলমারীতে গতকাল সকালে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে বিএনপির অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। হামলার কারণে দলের পূর্ব পরিকল্পিত কর্মসূচি ব্যাহত হয়েছে বলে দাবি করেছে বিএনপি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল থেকে রামদা, হকি স্টিক ও লাঠিসোঁটা নিয়ে বিভিন্ন সড়ক দখল করে রাখে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা। উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবীব ঠান্ডা মাথায় বলেন, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে সমাবেশে বাধা দেয়ার পর তিন দিন ধরে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা হুমকি দিচ্ছেন। সকালে সাবেক ছাত্রদল নেতা শফিকুল ইসলাম বাবুকে মারধর ও তার মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয় যুবলীগ নেতাকর্মীরা। তাদের হামলায় কৃষক দলের নেতা শেখ মোহাম্মদ আলী, যুবদলের নেতা কামাল বিশ্বাস, বিএনপি নেতা মনিরুল ইসলামসহ ১৫ জন আহত হন। তবে চিতলমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বাবুল হোসেন খান বলেন, এ ধরনের হামলার ঘটনা ঘটেনি।