বিএনপির পদযাত্রা।সাত জেলায় ব্যাপক সংঘর্ষ, লক্ষ্মীপুরে কর্মী নিহত
সরকারের পতনের দাবিতে বিএনপির দেশব্যাপী পদযাত্রা কর্মসূচিকে ঘিরে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়েছে। কোথাও আওয়ামী লীগ-বিএনপির নেতাকর্মীরা, কোথাও কোথাও দ্বন্দ্ব ত্রিমুখী রূপ নেয়। পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। লক্ষ্মীপুরে পর্যায়ক্রমে সংঘর্ষ হয়েছে। সজিব নামে কৃষক দলের এক কর্মী নিহত হয়েছেন। বিএনপির দাবি, সজীবকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় তাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা অংশ নেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ বিভিন্ন স্থানে গুলি ও কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে। সাত জেলায় পুলিশসহ পাঁচ শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। পুলিশ অনেক বিএনপি নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে।
লক্ষ্মীপুরে পুলিশসহ দেড় শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। কিশোরগঞ্জে বিএনপির ৫০ কর্মী আহত হয়েছেন। খাগড়াছড়ি শহরে সংঘর্ষে অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছে। ১২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পিরোজপুরে পুলিশের লাঠিচার্জে ৩৪ বিএনপি নেতা আহত হয়েছেন। সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় বগুড়া শহর। আহত হয়েছেন শতাধিক। পুলিশের কাঁদানে গ্যাসের শেল ও শটগানের গুলিতে শব্দ-শক ও শ্বাসকষ্টে অর্ধশত ছাত্রী আহত হয়। তাদের মধ্যে 33 জনকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়েছিল। ফেনীতে সংঘর্ষে শতাধিক আহত হয়েছেন। জয়পুরহাটে সংঘর্ষে অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন।
মিরপুরে সংঘর্ষ: এদিকে রাজধানীর গাবতলী থেকে শুরু হওয়া বিএনপির পদযাত্রা মিরপুর বাংলা কলেজ গেট পার হওয়ার সময় বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়েছে। উভয় পক্ষই ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। এরপর শুরু হয় ধাওয়া। পরে বিএনপি সমর্থকরা একটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। সংঘর্ষ চলাকালে বাংলা কলেজের সামনে অনেক বিএনপি নেতাকর্মীর হাতে বড় বাঁশের লাঠি দেখা গেছে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আরিফ হোসেন নামের এক শিক্ষার্থী জানান, বেলা ১১টার দিকে বিএনপির মিছিলটি বাংলা কলেজ এলাকায় পৌঁছালে বিশৃঙ্খলা শুরু হয়। মিছিলটি ওই এলাকা দিয়ে যাওয়ার সময় বাংলা কলেজের ভেতর থেকে ঢিল ছোড়া হয় এবং সংঘর্ষ শুরু হয়। কয়েকজন আহত হয়েছেন। এ সময় কলেজের গেট ভাঙচুর করে বিএনপির নেতাকর্মীরা। এ সময় সড়কে থাকা একটি মোটরসাইকেলে আগুন দেওয়া হয়। মোটরসাইকেলটি বাংলা কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি রুবেল হোসেনের বলে জানা গেছে। সংঘর্ষের সময় সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
মিছিলে থাকা শ্রমিক দলের কর্মী আবিদ আলী বলেন, আমরা স্লোগান দিচ্ছি, এ সময় সরকারি দলের কর্মীরা কলেজের ভেতরে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। ধাওয়া দিলে তারা পিছু হটে। জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন মোল্লা। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মিরপুর বিভাগ জানিয়েছে, মিছিলে পাথর ছোড়ার কারণে কিছুটা উত্তেজনা সৃষ্টি হলেও কিছুক্ষণ পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
তবে রাজধানীতে বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচিতে অন্য এলাকায় কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। পুলিশের পক্ষ থেকে সর্বত্র এসকর্ট সুবিধা দেওয়া হয়েছে। বিএনপির মিছিল কর্মসূচিকে ঘিরে তাদের রুটম্যাপে পুলিশি নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। ডিএমপির পক্ষ থেকে মিছিলের পেছনে পিকআপ ভ্যানে করে দুটি ইউনিট নিয়ে যাওয়া হয়।
লক্ষ্মীপুরে মৃত্যু: লক্ষ্মীপুরে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের সংঘর্ষে কৃষকদল কর্মী সজীব নিহত হয়েছেন। এ সময় ৩০ পুলিশ সদস্যসহ বিএনপি ও আওয়ামী লীগের দেড় শতাধিক নেতাকর্মী আহত হন। শহরের পরিস্থিতি থমথমে। আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে র্যাব ও অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আহতদের অধিকাংশই বিএনপির নেতাকর্মী। বিকেলে লক্ষ্মীপুর বেসরকারি আধুনিক হাসপাতালের সামনে, সামাদ মোড়, বাগবাড়ি, তেরবেকী ও উত্তর তেহমুনি, চৌধুরী সুপার মার্কেট এলাকায় এসব সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, বিকাল ৪টার দিকে লক্ষ্মীপুর শহরে বিক্ষোভ মিছিল করে বিএনপি। অপরদিকে নগরীর উত্তর তেহমুনি থেকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা শান্তি মিছিল বের করে। এ সময় সংঘর্ষে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের ৩৫ নেতাকর্মী আহত হন। জেলা বিএনপির সদস্য সচিব হাসিবুর রহমান জানান, শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশ বাধা দেয়। নেতাকর্মীরা ব্যারিকেড ভেঙ্গে গেলে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে। এতে বিএনপির শতাধিক নেতা গুলিবিদ্ধ ও আহত হন। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের হামলায় ১৫ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। কৃষকদলের কর্মীদের নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করেছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম ফারুক পিংকু জানান, আওয়ামী লীগের ডাকা শান্তি সমাবেশে যাওয়ার পথে বিএনপির হামলায় ৩৫ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। গুরুতর আহত তিনজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বিএনপির কোন্দলে তাদের কর্মী নিহত হয়। পুলিশ সুপার মাহফুজ্জামান আশরাফ সাংবাদিকদের বলেন, বিএনপি নেতাকর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এ ঘটনায় পুলিশ কর্মকর্তাসহ ৩০ জন আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ গুলি ও কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করে।