বিএনপির দুটি গুণ, ভোট চুরি আর মানুষ খুন একটি নৌকার আকারে ৩,৫০০ বর্গফুটের বিশাল মঞ্চ।
দুপুর গড়িয়ে বিকেল। ঘড়িতে তখন ৩টা ৫। বন্দরনগরী চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক পলোগ্রাউন্ডের মাঠের মঞ্চে এসেছে বঙ্গবন্ধুকন্যা। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার দূরদৃষ্টি যতদূর যায়, সেখানে শুধু মানুষের ঢেউ। ভিড় থেকে ভেসে আসছিল ‘জয় বাংলা’ স্লোগান। ব্যানার, ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড হাতে রয়েছে উদ্যমী নেতাকর্মীরা। একপর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী চাটগাঁইয়া ভাষায় বলেন, ‘অনারা কেন আছন? বেয়াগগুন গম আছননি? আনারল্লাই পেট পুরেদ্দে, ইতাল্লাই আঁইসিদি। (কেমন আছেন? ভালো আছেন তো? আপনার জন্য আমার মন জ্বলছে, তাই দেখতে এসেছি)।’ প্রিয় নেতার ঠোঁটে চট্টলা আঞ্চলিক শব্দ শুনে মাঠ জুড়ে আনন্দের রংধনু ছড়িয়ে পড়ে। প্রধানমন্ত্রীও হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানিয়ে নেতাকর্মীদের ভালোবাসার জবাব দেন। পরে বঙ্গবন্ধুকন্যা দূরবীন দিয়ে জনসভায় মানুষের ভিড় দেখার চেষ্টা করেন।
গতকাল বিকেলে আওয়ামী লীগের জনসভার মধ্যমণি ছিলেন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে চট্টগ্রাম মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ যৌথভাবে এ জনসভার আয়োজন করে। দুপুর ২টা থেকে জনসভা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সকাল ৭টা থেকেই পলোগ্রাউন্ডে জড়ো হতে থাকেন নেতাকর্মীরা। পরে দুপুর থেকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা বক্তব্য দেন। চট্টগ্রামে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের মানুষের কাছে ভোট চান। এ সময় উপস্থিত জনতার কাছে প্রতিশ্রুতিও দেন তিনি। জনসভায় প্রায় ৫০ মিনিট বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী। তার পুরো বক্তব্যে ছিল বিএনপি, জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নানা অনিয়ম, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার চিত্র। এ সময় তিনি মুদ্রার রিজার্ভ নিয়ে বিভ্রান্তি দূর করার পাশাপাশি ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাস বাঁচানোর জন্য দেশবাসীর প্রতি অনুরোধ জানান। জনসভায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জামায়াত-বিএনপি খুনিদের দল, যুদ্ধাপরাধীদের দল। তারা যাতে বাংলার মাটিতে জনগণের ভাগ্য নিয়ে আর খেলতে না পারে, আমি নৌকা প্রতীকে ভোট চাই। কারণ, বিএনপি ক্ষমতায় এলে জনগণের ভাগ্য নিয়ে খেলা করে এবং মানুষের সম্পদ লুট করে। আওয়ামী লীগ শান্তির দল, গণতান্ত্রিক দল। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে দেশের উন্নয়ন হয়, মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন হয়। তাই আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে ভোট দিতে হবে। নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে জনসভায় বক্তব্য রাখেন, নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমানসহ কয়েকজন নেতা। মঞ্চে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, তথ্যমন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদ, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীসহ চট্টগ্রামের সিনিয়র নেতারা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বক্তব্যে গুজবে কান না দেওয়ার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘দেশের মজুদ নিয়ে গুজব রয়েছে। আমাদের এখনও ৩৪ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ রয়েছে। তারা (বিএনপি) ব্যাংকে টাকা নেই এমন গুজব ছড়িয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করছে। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনীতি অনেক দেশের চেয়ে ভালো। বেশ কিছুদিন ধরেই বিদ্যুতের সমস্যা রয়েছে। এই যন্ত্রণা আর থাকবে না। তবে আমি অনুরোধ করব- বিদ্যুৎ, পানি ও জ্বালানি ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়া উচিত।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন বক্তব্য রাখছিলেন, তখন পলো গ্রাউন্ডের ভেতরে-বাইরে লোকজন ছিল। তারা মনোযোগ দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য শুনছিলেন। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘ভোট পাবে না বলে নির্বাচনে না গিয়ে সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করতে চায় বিএনপি। তারা জানে, নির্বাচন হলে জনগণ তাদের ভোট দেবে না। তাই তারা নির্বাচন চায় না। তারা সরকারকে উৎখাত করে, তারা আশা করে যে কেউ এসে তাদের সম্পূর্ণ ঝাঁকুনি দিয়ে ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে, এটাই তাদের বাস্তবতা। তারা জনগণের কথা চিন্তা করে না।’ তিনি বলেন, ‘তারা (বিএনপি) নির্বাচনে যেতে চায় না। জিয়াউর রহমান যেমন জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে সংবিধান লঙ্ঘন করেছে, তেমনি আইন লঙ্ঘন করে সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখল করেছে। তারা মনে করে এভাবেই তারা ক্ষমতায় আসবে। এ কারণে তারা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা পছন্দ করে না। ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির জনসভা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘১০ ডিসেম্বর বিএনপির খুব প্রিয় তারিখ। মনে হচ্ছে তারা ১০ ডিসেম্বর ঢাকা শহর দখল করবে কারণ পদলেহান পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বন্ধু ছিল। আর আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাত করবে। আমি তাদের বলতে চাই, খালেদা জিয়া জনগণের ভোট চুরি করে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ক্ষমতায় এসেছিলেন। আর তিনি ভোট চুরি করে ক্ষমতায় এসেছেন বলেই তাকে বাংলাদেশের মানুষ তা মেনে নেয়নি।
সারা বাংলাদেশ ফুঁসে উঠেছিল। আমরা জনতার মঞ্চস্থ করেছিলাম। খালেদা জিয়া পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। দেড় মাসও পার হয়নি, খালেদা জিয়া পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। দীর্ঘক্ষণ জনসভাস্থলে অবস্থান করতে গিয়ে চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী হাঁফিয়ে উঠেন। এ কারণে অনেককে পোলোগ্রাউন্ড-সংলগ্ন সিআরবি এলাকায় গাছের নিচে শীতল ছায়ায় আশ্রয় নিতে দেখা যায়। অনেকে পলোগ্রাউন্ডের সামনের রাস্তায় বসেন। মাঠের পাশাপাশি বাইরেও এভাবেই প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য শোনেন নেতাকর্মীরা। বিএনপি-জামায়াত, স্বাধীনতাবিরোধী দল যাতে আবার ক্ষমতায় আসতে না পারে সেজন্য নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘তাদের আন্দোলন মানুষ হত্যার জন্য। বিএনপির দুটি গুণ আছে, ভোট চুরি আর মানুষ হত্যা; তারা এটা ভালো করতে।