বাসাভিত্তিক ডিজিটাল শিক্ষা জোরদার করা দরকার
আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় এনজিওগুলির ভূমিকা রয়েছে তবে এনজিওগুলিকে করোনার সময়কালে কোনও শিক্ষামূলক কার্যক্রম না চালাতে বলা হয়েছে। করোনায় শিক্ষার ক্ষয়ক্ষতি মেটাতে এখন গৃহ-ভিত্তিক ডিজিটাল শিক্ষা জোরদার করা দরকার। এটি করতে, শিক্ষার্থীদের একটি ডিজিটাল ডিভাইস, ইন্টারনেট সংযোগ, ডেটা এবং নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের প্রয়োজন হবে। সরকারকে বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়া উচিত। তবে ডিজিটাল
ডিভাইস এবং ডেটা বেসরকারী খাতও সরবরাহ করতে পারে। কর্পোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতার (সিএসআর) আওতায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা নির্বিশেষে প্রতিটি পরিবারকে কমপক্ষে একটি ডিভাইস সরবরাহ করা যেতে পারে। অনেক বেসরকারী সংস্থা এই কাজে এগিয়ে আসতে পারে।
প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা স্তর সহ আমাদের শিক্ষার্থীদের মোট সংখ্যা চার কোটি। উপবৃত্তি বিতরণের জন্য সরকারের একটি মডেল রয়েছে। সেই মডেলটি ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের হাতে ডিভাইস পৌঁছানো সম্ভব। ক্ষতির সমস্ত ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করতে রাজ্যকে অবশ্যই প্রস্তুত থাকতে হবে। শিক্ষার্থীদের অভাবী পরিবারগুলির তালিকাভুক্ত করে অর্থ ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সহায়তা করা উচিত।
ডিভাইসটি ব্যবহার করার ক্ষমতা অর্জন করাও গুরুত্বপূর্ণ। এই পাঠের ক্ষেত্রে দিন মজুর, শ্রমিক, কৃষক পরিবারের বাবা-মা এবং শিশুদের অভ্যস্ত ও প্রশিক্ষিত করার জন্য প্রতি এক এক শিক্ষককে পাড়ায় নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে। গ্রামে কয়েকটি বাড়ির আশেপাশে ২০০ জনের বেশি শিক্ষার্থী নাও থাকতে পারে। শিক্ষক তার বাড়িতে বসে এই শিক্ষার্থীদের সাথে যুক্ত থাকবেন। ক্লাসগুলি ঘন্টা এবং সময় দ্বারা ভাগ করা হবে। এর জন্য প্রতিবেশী মাসিক সময়সূচীও তৈরি করা যেতে পারে।
সমস্ত ছাত্রদের পর্যায়ক্রমে টিকা দিতে হবে শিক্ষকদেরও উৎসাহ দেওয়া দরকার। শিক্ষার্থীদের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ক্লাসরুমে ফিরিয়ে আনা দরকার। শিক্ষার ক্ষতি পূরণের জন্য সরকারের একটি দৃ় রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি প্রয়োজন। দুঃখের বিষয়, আমাদের এখানে সমস্ত সিদ্ধান্ত কেন্দ্রীভূত হয়। শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকরা শিক্ষার ক্ষেত্রে প্রধান অবদান রাখেন। তাদের মতামত চাওয়া হয় না। তাই অনেক সিদ্ধান্তই ঘাটতি থেকে যায়। শিক্ষাই একমাত্র ইস্যু নয়। শিক্ষা সমগ্র জাতির মেরুদণ্ড। সবারই তা ভাবতে হবে। প্রশ্নটি হচ্ছে, আমরা কি সেভাবে ভাবছি?
সরকারের অগ্রাধিকারের জায়গায় শিক্ষাব্যবস্থা আনতে হবে। এই মুহুর্তে আমরা শিক্ষাকে অগ্রাধিকার হিসাবে দেখছি না। তারপরে আমরা শিক্ষা থেকে প্রজন্মকে হারাব, এমন ক্ষতি যা আর কখনও তৈরি হবে না।
লেখক: গণ সাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রাক্তন উপদেষ্টা