বাধা পেরিয়ে ময়মনসিংহে বিএনপির বড় সমাবেশ
গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও শনিবার ময়মনসিংহে বিভাগীয় গণসংযোগে বড়সড় সমাবেশ করতে পেরেছে বিএনপি। আওয়ামী লীগের মহড়া ‘পাহারা’ পথে প্রতিবেশী জেলা ও উপজেলায় ভিড় ঠেকাতে উত্তেজনা বাড়লেও বড় ধরনের কোনো সংঘর্ষ হয়নি। পুলিশও বাধা দেয়নি বিএনপিকে। রাজপথে থেকে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ নেতারা।
ময়মনসিংহের পলিটেকনিক ডরমেটরি মাঠে দুপুর ২টায় বিএনপির গণসমাবেশ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও আগের দিন রাত থেকেই সমাবেশস্থলে অবস্থান নেন দলের কয়েক হাজার নেতাকর্মী। তারা মাঠে, ছাত্রাবাসের সিঁড়ির নিচে এবং সামনের রাস্তায় রাত কাটায়। মাদুরে ঘুমায়। সকাল ১০টার আগেই সমাবেশস্থল পরিপূর্ণ হয়ে যায়।
বাস চলাচল বন্ধ থাকলেও শেরপুর, জামালপুর, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ থেকে হাজার হাজার বিএনপি নেতাকর্মী ট্রেন ও নৌকায় সমাবেশস্থলে আসেন। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির কারণে অনেক দিন সমুদ্রপথে তেমন যাত্রী চলাচল না থাকলেও কাচারিঘাট, থানারঘাট হয়ে গতকাল হাজার হাজার মানুষ ময়মনসিংহ শহরে আসেন। বিভিন্ন উপজেলা থেকে অটোরিকশা, ভ্যানে ও পায়ে হেঁটে এসেছেন অনেকে। টাঙ্গাইল ও গাজীপুরের বিএনপি নেতারাও আসেন। অনেকে মাইক্রোবাস, ট্রাক, পিকআপ বোঝাই করেও আসেন।
বেলা ৩টার দিকে গণসমাবেশে আসা লোকজন পলিটেকনিক মাঠ ছাড়িয়ে চরপাড়া থেকে মাসকান্দা বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত সড়কে অবস্থান নেয়। বিএনপি নেতাদের দাবি, লাখ লাখ মানুষের সমাগম হয়েছে।
আগের দিন নগরজুড়ে পদযাত্রা ও মোটরসাইকেল মহড়া সত্ত্বেও বিএনপির সমাবেশস্থল থেকে দুই কিলোমিটার দূরে রেলওয়ে কৃষ্ণচূড়া চত্বরে আওয়ামী লীগের উপস্থিতি ছিল সীমাবদ্ধ। আওয়ামী লীগ নেতাদের অভিযোগ, বিএনপি তাদের ওপর হামলা করেছে। সংঘর্ষের পরও হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছে বিএনপি।
সমাবেশ ঠেকাতে ময়মনসিংহে প্রবেশের আগে ত্রিশাল উপজেলায় মহাসড়ক পাহারা দেন আওয়ামী লীগ কর্মীরা। তারা ময়মনসিংহগামী যানবাহন থামিয়ে যাত্রীদের নামিয়ে দেয়। তবে কোনো সংঘর্ষ হয়নি। শম্ভুগঞ্জের কাশিপুরে বিএনপির মিছিলে বাধা দিলে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
গফরগাঁওয়ে আওয়ামী লীগ শক্তিশালী অবস্থানে ছিল। এ উপজেলা থেকে জড়ো হওয়া বিএনপির কর্মী-সমর্থকরা সমাবেশে আসতে পারেননি। নেতারা আগে এসেছেন। গফরগাঁও থেকে ময়মনসিংহগামী যানবাহন চলাচল করেনি। আওয়ামী লীগের ‘প্রহরী’ ছিল সর্বত্র। এতে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। উথুরীতে মোবারক হোসেন নামে এক কমিউনিটি সেন্টারের কর্মী, যিনি বিএনপির সমাবেশে যাচ্ছেন সন্দেহে তাকে একটি অটোরিকশা থেকে নামিয়ে দেয় পাহারা দেওয়া যুবকরা। তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, তারা ফাহমি গোলন্দাজ বাবেলের সমর্থক। মোবারক হোসেনসহ ১২ শ্রমিক কিশোরগঞ্জ যাচ্ছিলেন। সবাইকে মারধর করা হয়। তবে এ বিষয়ে তারা জানেন না বলে জানিয়েছে পুলিশ।
গফরগাঁওয়ের মুখী এলাকায় আওয়ামী লীগের কর্মীরা একটি সিএনজি অটোরিকশা থামিয়ে ১৪০টি বাঁশের লাঠি ও ২০টি রডসহ চারজনকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে। তাদের বিএনপি নেতাকর্মীরা বলে পুলিশ। পুলিশ লাঠিসোঁটা নিয়ে সমাবেশে আসতে নিষেধ করলেও বিএনপি কর্মীরা শোনেনি। জাতীয় ও দলীয় পতাকা হাতে লাঠি বেঁধে গতকাল নগরজুড়ে মিছিল করেছে বিএনপি নেতাকর্মীরা। নেতাদের বক্তৃতায় উজ্জীবিত হয়ে কর্মীরা সমাবেশ ময়দানে লাঠিসোঁটা তুলে সরকারকে পতনের জন্য এক পর্যায়ে আন্দোলনে নামবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন।
মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক একেএম শফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল ‘ফয়সালা হবে পথে’ স্লোগান তুলেন; ‘রাজপথে রাজপথে’ স্লোগান দিয়ে দর্শকরা সাড়া দেন। বিএনপি মহাসচিব বলেন, আওয়ামী লীগ সবকিছুর মতো নির্বাচনকে ধ্বংস করেছে। টানা পাঁচ বছরের নির্বাচন সরকার পরিবর্তনের পথকে ধ্বংস করেছে। ২০১৪ সালে, বিনা ভোটে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল এবং ২০১৮ সালেও।
নির্বাচন কমিশন অনিয়মের কারণে গাইবান্ধার ভোট বাতিলের পর এই সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের কড়া সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, খুব ঢাকঢোল বাজছে- আমি নতুন নির্বাচন কমিশন দিয়েছি; এই নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনা করবে। আমরা আগেই বলেছি, ‘দলীয় সরকার থাকলে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না।’ গাইবান্ধায় এর প্রমাণ মিলেছে। ভোটকেন্দ্রে সিসিটিভি ক্যামেরা ছিল ১ হাজার ৩৮০টি। হাজার হাজার পুলিশ ছিল। কিন্তু দুপুরে ভোটগ্রহণ বন্ধ করতে হয় নির্বাচন কমিশনকে। কারণ, এ সরকারের অধীনে কখনোই সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, স্পষ্টভাবে বলছি, সরকারের অবিলম্বে পদত্যাগ করা উচিত। নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন কমিশন গঠন করে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। জনগণের সরকার গঠন করা হবে।