• বাংলা
  • English
  • জাতীয়

    বাণিজ্যমন্ত্রীর বক্তব্য।সিন্ডিকেটের মাথায় হাত বুলিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা অসম্ভব

    অবশেষে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি স্বীকার করলেন, দেশের পণ্যবাজারে সিন্ডিকেট কাজ করছে। ঈদের আগে সোমবার সংসদের বৈঠকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে দেওয়া বরাদ্দ পাস হয়। এর আগে বিভিন্ন ছাঁটাই প্রস্তাবের আলোচনায় বিরোধী দলের সদস্যরা বিরাজমান বাজার পরিস্থিতির জন্য বিশেষ করে বাণিজ্যমন্ত্রীকে ‘সিন্ডিকেটের মালিক’ হিসেবে অভিযুক্ত করে তার সমালোচনা করেন। সেই সমালোচনার জবাবে – মঙ্গলবার সামারার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে – মন্ত্রী সিন্ডিকেটের অস্তিত্বের কথা স্বীকার করে বলেন, ‘এটা সত্যি, বড় গ্রুপ একসঙ্গে অনেক ব্যবসা করে।’ এই সত্যবাদী বক্তব্যের জন্য বাণিজ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ।

    গত দুই বছরে, বিশেষ করে করোনা মহামারী কমে যাওয়ার পর থেকে পণ্যের বাজারে ক্রমাগত অস্থিরতা দেখা দিয়েছে; চাল, আটা, আটা, ভোজ্যতেল, চিনি ইত্যাদির দাম ইতিমধ্যেই সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে – বিশেষ করে সীমিত ও নিম্ন আয়ের মানুষের, এবং অদূর ভবিষ্যতে নিম্নমুখী পরিবর্তনের কোনো লক্ষণ নেই। বরং সম্প্রতি বিশেষ করে ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে পেঁয়াজ, রসুন, আদাসহ সব ধরনের মসলার দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। সরকার সব সময় বলে আসছে সব পণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ আছে, তাই দাম বাড়ানো হবে না। কিন্তু বাস্তবে এসব কথার প্রতিফলনও ঘটেনি। তাই এসবের পেছনে সিন্ডিকেট কাজ করছে বলে বিশ্লেষক ও বাজার পর্যবেক্ষকরা বলে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে। এমনকি ভোক্তাদের স্বার্থ দেখতে জাতীয় ভোক্তা সুরক্ষা অধিদপ্তর নামে সরকারি সংস্থাও বিষয়টি বিভিন্ন সময়ে স্বীকার করেছে। সম্প্রতি শিল্প প্রতিমন্ত্রী বিনা দ্বিধায় বলেছেন, ‘সিন্ডিকেটের কারণে’ বাজারে মানুষ ‘কান্নাকাটি’ করছে। কিন্তু এত কিছুর পরও অন্তত বাণিজ্যমন্ত্রী বা তার মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কখনোই সিন্ডিকেটের অস্তিত্ব স্বীকার করেননি। সে দিক থেকে ভোগ্যপণ্যের বাজারে কিছু বড় কোম্পানির প্রভাব বিস্তারের অভিযোগে মন্ত্রীর চুক্তির বিষয়টি অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ।

    কিন্তু সমস্যা হলো মজুতদারি বা মজুদদারির মাধ্যমে নিত্যদিনের বিভিন্ন পণ্যের দাম বৃদ্ধির এসব মালিকদের বিরুদ্ধে কোনো শক্ত ব্যবস্থা নিতে রাজি নন বাণিজ্যমন্ত্রী। সংসদের একই ভাষণে তিনি বলেন, টার্গেট রাখা দরকার, আমি (সিন্ডিকেটের মালিকদের) জেলে পুরেছি, জরিমানা করেছি। সেটা সম্ভব হতে পারে। কিন্তু হঠাৎ করেই যে সংকট তৈরি হবে, তা বহন করা আমাদের জন্য কঠিন হবে। অর্থাৎ বাণিজ্যমন্ত্রী মনে করেন, দুষ্ট লোকের শাস্তি হলে তারা আরও খারাপ কাজ করবে; তাই তাদের মাথায় ও পিঠে হাত দিয়ে বাবা-ছেলেকে ডেকে সাধ্যমতো বোঝানো উচিত। কিন্তু চোর কি ধর্মের গল্প শোনে? আর মুনাফাখোর ভোগ্যপণ্য ব্যবসায়ীরা যদি এতই নম্র হতেন তাহলে দেশে মজুদ রোধে আইন আছে কেন? মনে রাখতে হবে যে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে এই অপরাধের জন্য যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। ‘উৎপাদন, সঞ্চয়স্থান, স্থানান্তর, পরিবহন, সরবরাহ, বিতরণ এবং বিপণন (ক্ষতিকর কার্যকলাপ প্রতিরোধ) আইন-২০২০ নামে বিলে, যা ২২ জুন সংসদে উত্থাপিত হয়েছিল, মজুদ করার জন্য ১৪ বছরের কারাদণ্ডেরও আহ্বান জানিয়েছে। একটি নির্দিষ্ট পরিমাণের বাইরে খাদ্যদ্রব্য। আমরা এর আগেও প্রধানমন্ত্রীকে একাধিকবার এই আইনের বিষয়টি তুলে ধরে মজুদদারদের বিরুদ্ধে সতর্ক করতে শুনেছি। প্রধানমন্ত্রীর এসব হুঁশিয়ারি কি শুধুই কথা?

    বাণিজ্যমন্ত্রী বাজার নিয়ন্ত্রণকারী বড় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে খাদ্যপণ্যের দাম কমানোর চেষ্টা করলেও এখন পর্যন্ত তা ব্যর্থ প্রমাণিত হয়েছে। প্রথমে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবে তেল, চিনিসহ কয়েকটি পণ্যের ওপর আমদানি পর্যায়ে ভ্যাট ও শুল্ক কমানো হয়; কিন্তু খুচরা বাজারে এর কোনো প্রভাব দেখা যায়নি। এরপর দেখা যায়, ব্যবসায়ীদের প্রস্তাব মেনেই সরকার ভোজ্যতেল ও চিনির খুচরা মূল্য নির্ধারণ করেছে; সেটাও মানা হয়নি। বলা হচ্ছে, বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম বেড়েছে। কিন্তু আজ যখন বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেলের দাম ইউক্রেন যুদ্ধের আগের পর্যায়ে চলে যাচ্ছে, তখন দেশের বাজারে পণ্যটির দাম সে পর্যায়ে না গেলেও বেশ চড়া। আর চিনি কখনো কখনো বাজার থেকে উধাও হয়ে যায়; তারপরও সরকারকে তোতাপাখিদের ধমক দেওয়া ছাড়া আর কিছুই করতে দেখা যায় না – তাদের মধ্যে যথেষ্ট আছে -।

    কয়েক মাস আগে আমদানিকারকদের লোভে বাজার থেকে ভোজ্যতেল উধাও হয়ে গেলে বেশ কয়েকটি তেল কারখানায় অভিযান চালাতে দেখা যায় ভোক্তা বিভাগকে। কিন্তু কোনো ফল দিতে পারেনি। কিছু কারখানায় দায়ী কাউকে পাওয়া যায়নি, তাই ভোক্তা বিষয়ক দফতরের অভিযানকারীরা সঠিক হিসাব পায়নি।