• বাংলা
  • English
  • অর্থনীতি

    বাড়ছে না বিদ্যুতের চাহিদা

    গত কয়েক বছর ধরে দেশে বিদ্যুতের চাহিদা কমছে। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সাল থেকে বিদ্যুতের চাহিদা কমছে। ২০২৪ সালে গ্রীষ্ম মৌসুমে চাহিদা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩ শতাংশ কম ছিল। চলতি ২০২৫ সালে এখন পর্যন্ত গড় চাহিদা মাত্র ০.২৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। অর্থাৎ, ধারণা করা হচ্ছে যে এ বছরও বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ছে না। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে শিল্প খাতে স্থবিরতার কারণে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ছে না। কারণ শিল্প খাতের গতিশীলতাকে বিদ্যুতের চাহিদা বৃদ্ধির প্রধান নির্ধারক হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

    পিডিবির তথ্য অনুযায়ী, এ বছর দেশে বিদ্যুৎ খাতের মোট উৎপাদন ক্ষমতা ৩১ হাজার মেগাওয়াট হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এ বছর বিদ্যুতের প্রকৃত উৎপাদন ক্ষমতা ১৮ হাজার মেগাওয়াটে দাঁড়িয়েছে। যদিও কাগজে কলমে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) বলছে তাদের উৎপাদন ক্ষমতা ২৬ হাজার মেগাওয়াট। তবে, সাম্প্রতিক এক প্রশ্নের জবাবে জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান বলেছেন যে পিডিবি ২৬,০০০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার কথা বললেও প্রকৃত উৎপাদন ক্ষমতা ১৮,০০০ মেগাওয়াট।

    এদিকে, ১৮,০০০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার কথা বলা হলেও, জ্বালানি সংকট এবং আর্থিক সংকটের কারণে তাও উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলস্বরূপ, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) এ বছর বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা করেছে, যা দেখিয়েছে যে জানুয়ারিতে চাহিদা ছিল ১১,২২৬ মেগাওয়াট, যা গত বছর ছিল ১০,৭১৭ মেগাওয়াট। গত বছর, ফেব্রুয়ারিতে ছিল ১১,৬০০ মেগাওয়াট, মার্চে ১৪,৫০০ মেগাওয়াট এবং এপ্রিলে ১৬,৪০০ মেগাওয়াট। এই বছর, ফেব্রুয়ারিতে এই চাহিদা ১৩,১৩০ মেগাওয়াট, মার্চে ১৫,৭০০ মেগাওয়াট এবং এপ্রিলে ১৮,০০০ মেগাওয়াট নির্ধারণ করা হয়েছে।

    পিডিবি তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছে যে ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে বিদ্যুতের চাহিদা ১৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এরপর ২০২২ সালে বিদ্যুতের চাহিদা মাত্র ৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২৩ সালে চাহিদা ১০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু ২০২৪ সালের মার্চ-এপ্রিল মাসে চাহিদা বিয়োগ ৩ শতাংশ কমেছে। ২০২৫ সালের একই সময়ে চাহিদা মাত্র শূন্য দশমিক ২৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

    বিদ্যুতের চাহিদা হ্রাসের কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে পিডিবির একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, আমাদের সময়কে বলেন, বিদ্যুতের চাহিদা হ্রাস পেয়েছে এমন কথা সত্য নয়। মূলত, বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহে সংকট রয়েছে। কর্মকর্তা বলেন, যদিও বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে, যেহেতু চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ করা সম্ভব নয়, তাই সরবরাহ করা সম্ভব এমন একটি চাহিদা পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। কর্মকর্তা বলেন, শিল্প খাতের সম্প্রসারণের ফলে বিদ্যুতের দ্রুত চাহিদা তৈরি হয়। এখন শিল্প খাতে বিদ্যুতের চাহিদা মূলত স্থবির। ফলস্বরূপ, ২০২৫ সালের মধ্যে ৩১ হাজারের পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়নি।

    এদিকে, গত বছর বিদ্যুতের গড় চাহিদা ছিল ১৭ হাজার মেগাওয়াট। গড় বিদ্যুৎ উৎপাদন ছিল ১৫ হাজার মেগাওয়াট। গত বছরের ৩০ এপ্রিল সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন ছিল ১৬ হাজার ৪৭৭ মেগাওয়াট। ২০২৩ সালে, সর্বোচ্চ গড় দৈনিক বিদ্যুৎ উৎপাদন ছিল সেপ্টেম্বরে, ১৩,২০৮ মেগাওয়াট। এবং গড় উৎপাদন জানুয়ারিতে সর্বনিম্ন ৯,৬০০ মেগাওয়াটে নেমে আসে। বিদ্যুতের চাহিদা পরিমাপের ক্ষেত্রে, একটি নির্দিষ্ট সময়ের সর্বোচ্চ (পিক আওয়ার) এবং সর্বনিম্ন (অফ-পিক আওয়ার) উৎপাদন সাধারণত বিবেচনা করা হয়। সাধারণত, সন্ধ্যা থেকে রাত ১১ টা পর্যন্ত বিদ্যুতের পিক আওয়ার হয়। এই সময়ে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়।

    এই বছরের বিদ্যুৎ উৎপাদন পরিকল্পনায়, পিডিবি দেখিয়েছে যে মে মাসে বিদ্যুতের চাহিদা ১৮,০০০ মেগাওয়াট হবে, এরপর চাহিদা ধীরে ধীরে কমবে। জুন মাসে ১৭,৮৬০ মেগাওয়াট, জুলাই মাসে ১৭,৬০০ মেগাওয়াট, আগস্টে ১৭,২০০ মেগাওয়াট, সেপ্টেম্বরে ১৭,২১০ মেগাওয়াট, অক্টোবরে ১৬,২৮০ মেগাওয়াট, নভেম্বরে ১৪,৩১০ মেগাওয়াট এবং ডিসেম্বরে ১২,২১০ মেগাওয়াট।

    Do Follow: greenbanglaonline24