• বাংলা
  • English
  • অর্থনীতি

    বাজেট ২০২৩-২৪,সামাজিক নিরাপত্তার ৩০ শতাংশ সঞ্চয় বন্ড এবং পেনশনের সুদ রয়েছে

    আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে সামাজিক সুরক্ষার জন্য বরাদ্দ কিছুটা বেড়েছে। তবে এর ৩০.৫৯ শতাংশ সরকারি কর্মচারী এবং তাদের পরিবারের পেনশন এবং সঞ্চয়পত্রের সুদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা প্রিমিয়ামে ব্যয় করা হবে।

    অর্থনীতিবিদরা দীর্ঘকাল ধরে সামাজিক নিরাপত্তা বরাদ্দ থেকে পেনশন এবং সঞ্চয় বন্ড বাদ দেওয়ার এবং দরিদ্র ও দুর্বল জনগোষ্ঠীর জন্য বরাদ্দ বাড়ানোর পক্ষে কথা বলেছেন। বাজেটের আগে ঢাকায় আসা আইএমএফ মিশনও একই সুপারিশ করেছে।

    তবে, অর্থ বিভাগ যুক্তি দেয় যে গ্রেড ১ থেকে কর্মকর্তাদের পেনশন সর্বশেষ বেতন স্কেল অনুযায়ী সামাজিক নিরাপত্তা খাতে প্রতিফলিত হয় না। ১০ থেকে ২০ গ্রেডের বেশিরভাগ কর্মচারী নিম্ন আয়ের। এ বিবেচনায় এসব কর্মচারীর পেনশন আর্থ-সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় দেখানো হয়েছে। তবে, পেনশন খরচের ৮৩ শতাংশ এই কর্মচারীদের পিছনে যায়।

    গবেষণা সংস্থা সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক সেলিম রায়হান বলেন, পেনশন, সঞ্চয়পত্র ছাড়াও সরকারের কিছু ভর্তুকি ও অন্যান্য কার্যক্রম সামাজিক নিরাপত্তার অন্তর্ভুক্ত। সব মিলিয়ে প্রস্তাবিত সামাজিক নিরাপত্তা বরাদ্দের ৬০ শতাংশ অন্য কর্মসূচিতে যাবে। প্রকৃত দরিদ্রদের জন্য মাত্র ৪০ শতাংশ হবে।

    তিনি আরও বলেন, যদিও বাজেটে অনেক কর্মসূচি যুক্ত করে অনেক বরাদ্দ দেখানো হয়েছে যা প্রকৃত সামাজিক নিরাপত্তা নয়, কিন্তু দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য বরাদ্দ একেবারেই অপ্রতুল। তাছাড়া সুবিধাভোগী বাছাইয়ে ত্রুটির কারণে যারা এ ধরনের ভাতা পাওয়ার যোগ্য নন তারাও পাচ্ছেন। অনেকেই যোগ্য হলেও পাচ্ছেন না। সব মিলিয়ে সত্যিকারের দরিদ্ররা সামাজিক নিরাপত্তা থেকে আরও বেশি পড়ে যাবে। এ ছাড়া ভাতার বর্তমান হারও খুবই কম। ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতির কারণে নিম্ন আয়ের মানুষ বর্তমানে অনেক চাপের মধ্যে রয়েছে।

    এমন পরিস্থিতিতে তাদের কিছুটা স্বস্তি দিতে প্রকৃত সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বাড়াতে হবে।

    চলতি অর্থবছরের বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ করা হয়েছে ১ লাখ ১৩ হাজার ৫৭৬ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরের বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ বাড়িয়ে ১ লাখ ২৬ হাজার ২৭২ কোটি টাকা করা হয়েছে। এই বরাদ্দ মোট বাজেটের 16.58 শতাংশ এবং মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) 2.52 শতাংশ। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে যা ছিল ১৭ দশমিক ৮১ শতাংশ ও ২ দশমিক ৬৫ শতাংশ।

    বরাদ্দ বিশ্লেষণে দেখা গেছে, আগামী অর্থবছরের পাশাপাশি চলতি অর্থবছরেও এ বিষয়ে ১১৫টি কর্মসূচির কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী ও তাদের পরিবারের পেনশনের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ২৭ হাজার ৪১৪ কোটি টাকা, যা সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির মোট বরাদ্দের ২১ দশমিক ৭১ শতাংশ। অর্থাত্ মোট বরাদ্দের মধ্যে ১০টি ব্যয় হবে এ খাতে। সঞ্চয়পত্রের সুদের হারে সামাজিক নিরাপত্তা প্রিমিয়াম হিসেবে ১১ হাজার ২১৭ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এ দুটি খাতে মোট ব্যয় হবে ৩৮ হাজার ৬৩১ কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের ৩০ শতাংশের বেশি। ন্যাশনাল সেভিংস সার্টিফিকেট ব্যাঙ্ক লোনের হারের চেয়ে বেশি সুদের অফার করে। সুদের একটি অংশ সরকার সামাজিক নিরাপত্তা বরাদ্দ থেকে প্রিমিয়াম হিসাবে প্রদান করে।

    সামাজিক নিরাপত্তা বরাদ্দ থেকে কৃষি ভর্তুকি বাবদ ২১ হাজার ৭০০ কোটি টাকা রাখা হয়েছে। সরকার কর্তৃক পরিচালিত বিভিন্ন তহবিল এবং সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণসহ ক্ষুদ্র অবকাঠামো নির্মাণে ব্যয় করা হবে। এসএমই খাতে ৫ হাজার কোটি টাকার সুদ ভর্তুকি রয়েছে।

    বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সামাজিক নিরাপত্তার জন্য অতিরিক্ত ব্যয় করার প্রবণতা আরও অনেক খরচ যোগ করছে। প্রকৃত অর্থে, সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির বরাদ্দ খুবই কম। এ ছাড়া সুবিধাভোগী নির্বাচন প্রক্রিয়ায় জটিলতা, বাস্তবায়ন পর্যায়ে নানা ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে এ কর্মসূচির প্রভাব প্রত্যাশার চেয়ে অনেক কম।

    ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আসিফ শাহান বলেন, দীর্ঘদিন ধরে সরকার এ খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর নামে কিছু অপ্রাসঙ্গিক খাত যুক্ত করছে। তাই বাজেটে বরাদ্দ বড় দেখানো হলেও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য কাঙ্খিত হারে বরাদ্দ বাড়ছে না। ফলে করোনা মহামারী এবং ইউক্রেনের যুদ্ধের কারণে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি পেলেও শহর ও গ্রামের অনেক দরিদ্র মানুষকে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় আনা সম্ভব হচ্ছে না। একই সঙ্গে বর্তমানে যাদের ভাতা দেওয়া হচ্ছে, তার পরিমাণও প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল।

    আগামী অর্থবছরে পেনশন ছাড়াও বয়স্ক, বিধবা ও স্বামীদের ভাতাসহ 9টি কর্মসূচিতে সরকার প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা নগদ দেবে।