• বাংলা
  • English
  • অর্থনীতি

    বাজেট-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী ।জনগণের কথা মাথায় রেখে বাজেট দিয়েছি

    নির্বাচন সাধারণ মানুষের জন্য, বাজেটও সাধারণ মানুষের জন্য। সেভাবেই বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে। সরকার প্রতিটি বাজেট দেয় জনগণের কথা মাথায় রেখে। বাজেট বাস্তবায়নে সরকার ব্যর্থ হবে না।

    শুক্রবার বিকেলে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এ মন্তব্য করেন। এতে উপস্থিত ছিলেন কৃষিমন্ত্রী মো. আবদুর রাজ্জাক, শিক্ষামন্ত্রী ড.দীপু মনি, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রীর অর্থ উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান, পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী মো. শামসুল আলম, মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন, এনবিআর চেয়ারম্যান রহমাতুল মুনিম, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার, অর্থ সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন প্রমুখ। বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ৭৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী।

    টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকারের বর্তমান মেয়াদের এটাই শেষ বাজেট। বিশ্লেষকরা মনে করেন, জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে অন্যবার বাজেটে জনসন্তুষ্টির জন্য নানামুখী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এবারও তিনি অনুপস্থিত। বাজেট ও নির্বাচন নিয়ে এমন পর্যালোচনার বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রীর পাশাপাশি কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাকও প্রশ্নের জবাব দেন।

    অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, নির্বাচন ও বাজেট পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। একটি ছাড়া অন্যটি নিষ্ক্রিয়। নির্বাচনী রিটার্ন পাসের জন্য বাজেট কার্যকর হতে পারে। সরকারের বাজেট দেশের মানুষের জন্য, নির্বাচনও দেশের মানুষের জন্য। সরকার ধনী-গরিব উভয়ের জন্য বাজেট প্রস্তাব করেছে।

    এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা (আওয়ামী লীগ) ২০২৩ সালের শেষের দিকে বা আগামী বছরের শুরুতে যে নির্বাচনে জিততে চাই। এ জন্য জনগণকে খুশি করতে নতুন বাজেটের প্রস্তাব করা হয়েছে। সরকার প্রতিটি নির্বাচনে জিততে চায়। তাই প্রতিটি বাজেট নির্বাচনকে সামনে রেখে দেওয়া হয়।

    এবারের বাজেটে নির্বাচনের বিষয়টি নিয়ে অবশ্যই চিন্তাভাবনা করা হয়েছে।

    বাজেট ও আইএমএফ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, আইএমএফের পরামর্শে তিনি বাজেট দেননি। আইএমএফ শুধু ঋণই দেয় না, তারা প্রকল্প বাস্তবায়নের গতি বাড়াতে কিছু পরামর্শও দেয়। আমরা তাদের পরামর্শ গ্রহণ করেছি যা আমরা প্রয়োজনীয় বলে মনে করেছি। এগুলো বাস্তবায়নে সরকার সফল হবে। যারা আইএমএফের সাথে কাজ করেন তারা ভালো করেই জানেন। তারা শুধু অর্থ দিয়েই সাহায্য করে না, বিভিন্ন অর্থনৈতিক সংস্কারেও সাহায্য করে। তাদের কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। তারা সদস্য দেশগুলোকে ব্যালেন্স শীট ব্যবস্থাপনার বিষয়ে পরামর্শ দেয়। আয় ও ব্যয়ের হিসাব সঠিকভাবে প্রস্তুত করার পরামর্শ দেয়। এই পরামর্শগুলো অর্থনীতির জন্য ভালো।

    তিনি বলেন, ‘আমরা এখন বিশ্বের সবার সঙ্গে যুক্ত। এখানে কারো আলাদা থাকার সুবিধা নেই। আমদানি করলে কারো লাগবে, রপ্তানি করলে কারো লাগবে। তাছাড়া আইএমএফ থেকে ঋণ নেওয়ার পরিমাণ দেড় মাসের রেমিট্যান্সের সমান। তাই এই ঋণ নিয়ে চিন্তার কিছু নেই।

    বাজেট বাস্তবায়ন সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, গত চার বাজেটে যেসব প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল তা বাস্তবায়ন হয়েছে। এ সময় সরকার ৩ কোটি মানুষকে কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। এর বিপরীতে কর্মসংস্থান হয়েছে ২ কোটি ৪৫ লাখ লোকের। কোনো ক্ষেত্রেই সরকার ব্যর্থ হয়নি। আগামীতে বাজেট বাস্তবায়নে সরকার ব্যর্থ হবে না। ২০০৯ সালে সরকারের রাজস্ব ছিল ৫৯ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। এখন শুধু এনবিআরের রাজস্ব বেড়েছে ২ লাখ ৯৫ হাজার কোটি টাকা। ৫৯ হাজার কোটি থেকে ৩ লাখ কোটিতে পৌঁছানো সম্ভব হলে আগামী বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবে।

    সংবাদ সম্মেলনে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি সবচেয়ে বেশি উঠে আসে। প্রায় ৯ শতাংশ মূল্যস্ফীতি ধরে রাখতে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্তের আয় না বাড়ায় মানুষ অস্বস্তিতে পড়েছে। এ অবস্থায় প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশে রাখার প্রাক্কলন করা হয়েছে। এটা অর্জনে কী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে- এমন প্রশ্নের সরাসরি উত্তর অর্থমন্ত্রীসহ কেউ না দিলেও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পণ্যের দাম বৃদ্ধিকে দায়ী করেছেন তারা।

    অর্থমন্ত্রী বলেন, আমরা নিজেরাই মূল্যস্ফীতি নিয়ে চিন্তিত। গোটা বিশ্ব এখন মুদ্রাস্ফীতির কবলে। আমরা খাওয়া বন্ধ করতে পারি না। খাবার ছাড়া মানুষ রাখা যায় না। মূল্যস্ফীতির কারণগুলি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। প্রয়োজন অনুযায়ী শুল্ক-কর ছাড় দেওয়া হচ্ছে। ভবিষ্যতেও তা অব্যাহত থাকবে। এ ছাড়া সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির কার্যক্রম বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে।