বাজারে নাকাল ক্রেতা
চাল, ভোজ্যতেল, ময়দা, চিনি, মুরগী, মাছ, মাংস ও শাকসবজির দাম বেড়ে যাওয়ায় ক্রেতারা চাপে পড়েছেন। একের পর এক পণ্য যুক্ত হচ্ছে দাম বৃদ্ধির তালিকায়। এমন উত্তাপের মধ্যে শবেবারাতের বাজার করতে হচ্ছে। আর রমজান মাস শুরু হবে দুই সপ্তাহের মধ্যে। এরই মধ্যে আবারও বেড়েছে করোনার সংক্রমণ। এমতাবস্থায় দরিদ্র ও নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণির লোকেরা বেকায়দায় পড়েছে।
আগের বছরগুলিতে, রমজানে চালের দাম স্বাভাবিক ছিল, তবে এবার এটি অস্বাভাবিক। ব্যবসায়ীরা বলছেন আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধির কারনে। তারা কিছু পণ্য সরবরাহের ঘাটতির কথাও বলছেন। তবে রমজানে ভোগ্যপণ্য বহনকারী জাহাজগুলি একের পর এক চট্টগ্রাম বন্দরে আসছে। ব্যবসায়ীরা দ্রুত এই পণ্যগুলি খালাস করছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, রমজানের আগে সরবরাহের কোনও অভাব নেই। সমস্ত পণ্য পর্যাপ্ত স্টক আছে। সাম্প্রতিক এক অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সী বলেন যে আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ার কারণে দাম আগের তুলনায় কিছুটা বেশি নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে ভোজ্যতেল সহ সকল পণ্যের পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকবে। রমজানে পণ্যের দাম বাড়ার যৌক্তিক কারণ নেই।
বাণিজ্যসচিব ড. মোঃ জাফর উদ্দিন বলেন, ভোজ্যতেলের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। এর পরেও যদি এটি বেশি দামে বিক্রি হয় তবে বাজার পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে রমজান মাসে তেলের দাম সহনীয় হবে। বাণিজ্য সচিব বলেন, মন্ত্রণালয় আমদানি, সরবরাহ ও শেয়ারের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করছে। ইতোমধ্যে রমজানের বর্ধিত চাহিদার সমস্ত পণ্য দেশে এসেছে। এদিকে রমজানের আগে প্রতিদিন পণ্য আমদানিতে ন্যূনতম স্তরে এলসি মার্জিন রাখার জন্য ব্যাংককে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
করোনার মহামারীর প্রভাব জনজীবনে সংকটকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। এর সাথে বাজারের উত্তাপ বাড়ছে দুর্ভোগকে। রাজধানীর উত্তর পাইরেবাগের বাসিন্দা রিকশা চালক শফিকুল ইসলাম জানান, করোনার বাড়ছে আবার। এ কারণে প্রতিদিন গড়ে ৩০০ টাকা আয় করা কঠিন মাসে ৯ হাজার টাকা কিন্তু ঘর ভাড়া দিতে হচ্ছে ৫ হাজার টাকা। বাকি ৪,০০০ টাকার মধ্যে এক বস্তা মোটা চাল কিনতে ২,৫০০ টাকা খরচ হয়। বাকি দেড় হাজার টাকা কোনওভাবেই কাঁচাবাজারের দাম মেটাতে পারছেন না। এর জন্য কম খেয়ে থাকছেন বা মাঝে মাঝে ঋন নিতে হচ্ছে।
গবেষণা সংস্থা সানিমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, করোনার কারণে অনেক লোক চাকরি হারিয়েছে। দ্বিতীয় তরঙ্গ শুরু হওয়ার সাথে সাথে নতুন অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ানো দরিদ্রদের উপর চাপ বাড়িয়েছে। সানেমের জরিপের তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন যে করোনার কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আয় কমেছে। নতুন গরিব বেড়েছে। এই পরিস্থিতিতে রমজানের সময় পণ্যগুলির দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে সরকারকে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া দরকার।
কনজিউমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির বলেন, রমজানের আগে বেশ কয়েকটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েছে। করোনায় জনগণের আয় হ্রাস পাচ্ছে। এই সময়ে পণ্যের দাম এত বেশি বেড়েছে যে সাধারণ মানুষ তাদের পুষ্টির চাহিদা মেটাতে লড়াই করছে।
চালের দাম বাড়ানো: বেসরকারী খাতকে চালের দাম নিয়ন্ত্রণের সুযোগ দেওয়া হলেও বাজারে কোনও প্রভাব পড়ছে না। উল্টোটা বেড়েছে। বর্তমানে ক্রেতারা মোটা চাল কিনতে ৪৮ থেকে ৫০ টাকা গুনছেন, যা গত বছর রমজানে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা ছিল। মাঝারি মানের বিআর -২৮ এবং পাইজাম চালের দাম ৫২ থেকে ৫৬ টাকা। এবং মিনিকেট পাওয়া যাচ্ছে ৬২ থেকে ৬৮ টাকায়। গত বছর একই সময়ে, মাঝারি চাল ৪০ টাকা থেকে ৪৫ টাকা এবং মিনিকেট ছিল ৫২ টাকা থেকে ৫৮ টাকা। কারওয়ান বাজারের পাইকারি চাল ব্যবসায়ী মঈনুদ্দিন মানিক বলেন, আমদানি হওয়ার পরে দেশীয় চালের দাম আরও বেড়েছে আমদানি করা চালও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
খাদ্য সচিব ড. মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম বলেন, ইতোমধ্যে ৯ লাখ টন চাল আমদানির জন্য এলসি চালু করা হয়েছে। এর মধ্যে ৪ লাখ টনেরও বেশি দেশে এসেছে। বাকি চাল শীঘ্রই আমদানি করা হবে।