বাঙালির স্বপ্ন পূরণের পথে আরেক ধাপ এগিয়ে।রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে বাঙালীর স্বপ্ন পূরণের আরেক ধাপ এগিয়েছে। পাবনার ঈশ্বরদীতে দেশের বৃহত্তম উন্নয়ন প্রকল্পের নির্মাণ কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার রূপপুরে এই প্রকল্পের ‘হার্ট’ হিসেবে পরিচিত দ্বিতীয় ইউনিটের রিঅ্যাক্টর প্রেসার ভেসেল (পারমাণবিক চুল্লি) স্থাপনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন। যার মাধ্যমে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প একটি বড় ধাপ সম্পন্ন করতে চলেছে।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীনে এবং রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন অ্যাটমিক এনার্জি কর্পোরেশনের (রোসাটম) প্রকৌশল শাখার সহযোগিতায় নির্মাণাধীন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় একক উন্নয়ন প্রকল্প। এ প্রকল্পে রাশিয়া প্রকল্প বাস্তবায়নসহ সর্বাধুনিক প্রযুক্তি, আর্থিক ও সার্বিক সহায়তা দিচ্ছে। এটি রাশিয়া ৩-জি (প্লাস) VVER ১২০০ মডেলের চুল্লি দ্বারা উদ্ভাবিত সর্বশেষ প্রযুক্তি ইনস্টল করা হচ্ছে।
চুক্তি অনুযায়ী, নির্মাণ কাজ শেষে রূপপুর প্রকল্পের দুটি ইউনিট থেকে ১২০০ মেগাওয়াট ও ২৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে। প্রথম ইউনিটটি আগামী বছর এবং দ্বিতীয় ইউনিটটি ২০২৪ সালের মধ্যে উৎপাদনে যাওয়ার কথা রয়েছে। জাতীয় গ্রিডে এই বিদ্যুৎ সংযোগের মাধ্যমে দেশের বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়ন আরও একটি মাইলফলক অর্জন করবে বলে আশা করা হচ্ছে। প্রকল্পটির নির্মাণে প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকারও বেশি। করোনাভাইরাস মহামারী সত্ত্বেও রূপপুরে প্রতিদিন তিন শিফটে বাংলাদেশ ও রাশিয়ার প্রায় ২৩ হাজার শ্রমিক দিনরাত কাজ করছেন। তারা এখনও এই প্রকল্পের সার্বিক কাজ এগিয়ে চলেছে।
মঙ্গলবার ঢাকার একদল গণমাধ্যম প্রতিনিধি রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনকালে জানা যায়, রূপপুর প্রকল্পের দ্বিতীয় ইউনিটের পারমাণবিক চুল্লি স্থাপনের সার্বিক প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। চলছে শেষ মুহূর্তের সাজসজ্জার কাজ। এতে করে সাজানো হয়েছে প্রকল্প এলাকা। প্রকল্প কর্তৃপক্ষ ও রোসাটমের উদ্যোগে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। প্রকল্প এলাকায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি সম্বলিত বড় বড় বিলবোর্ড লাগানো হয়েছে।
জানা যায়, পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পর্যায় হল চুল্লি স্থাপন। চুল্লী জাহাজকে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের হৃদয় বলা হয়। দ্বিতীয় ইউনিটের এই চুল্লি স্থাপনের আগে, বিভিন্ন স্তরের অবকাঠামোসহ চুল্লি ভবনের সংশ্লিষ্ট পর্যায়গুলি ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।
দ্বিতীয় ইউনিটের চুল্লি গত বছরের আগস্টে রাশিয়া থেকে দেশে আসে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিটের চুল্লিসহ ভারী যন্ত্রপাতি রোসাটমের জেএসসি এইএম টেকনোলজির ভলখেদনস্ক শাখার অ্যাটম্যাস প্ল্যান্টে প্রস্তুত করা হয়েছিল। ৩৩৩. টন VVER-১২০০ রিঅ্যাক্টর জাহাজটি সম্পূর্ণ হতে দুই বছর সময় নিয়েছে। চুল্লী জাহাজটি পরমাণু প্ল্যান্ট থেকে ভলখেদনস্কের জলাধারে নিয়ে যাওয়া হয়। এর পরে, এটি বার্জে করে নভোরোসিয়েস্কে পাঠানো হয়েছিল। এরপর কৃষ্ণ সাগর ও সুয়েজ খাল হয়ে ১৪ হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশের মংলা বন্দরে এসে পৌঁছায়। এই পণ্য পরিবহনে দুই মাসের বেশি সময় লাগে। নির্দিষ্ট ভবনের সার্বিক প্রস্তুতি শেষে এখন চুল্লি বসাতে যাচ্ছে।
এর আগে রূপপুর এনপিপির প্রথম ইউনিটের চুল্লি বসানো হয় গত বছরের ১০ অক্টোবর। এই প্রথম ইউনিটের পারমাণবিক জ্বালানি লোডিং আগামী বছরের শেষ নাগাদ উদ্বোধন হওয়ার কথা রয়েছে। প্রস্তুতিও চলছে। দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র জ্বালানি লোডিংয়ের মাধ্যমে উৎপাদনে যাবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোভিড পরিস্থিতির কারণে আজ সকাল ১০টায় তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের (আরএনপিপি) দ্বিতীয় ইউনিটের চুল্লি চাপবাহী জাহাজ স্থাপনের উদ্বোধন করবেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখবেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান, মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জিয়াউল হাসান, প্রকল্প পরিচালক ড. শওকত আকবর এবং অ্যালেক্সি লিখাচেভ, রাশিয়ান স্টেট অ্যাটমিক এনার্জি কর্পোরেশনের (রোসাটম) মহাপরিচালক, প্রকল্পটির নির্মাণকারী সংস্থা। এ ছাড়া প্রকল্প মনিটরিং কমিটির চেয়ারম্যান, রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার জিএসএম জাফরুল্লাহ এবং আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন বলে সূত্র জানায়।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্থানীয় সংসদ সদস্য নুরুজ্জামান বিশ্বাস ছাড়াও বিভিন্ন পর্যায়ের জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ এবং পাঁচ শতাধিক দেশি-বিদেশি আমন্ত্রিত অতিথি উপস্থিত থাকবেন।
যা বললেন সংশ্লিষ্টরা : গতকাল রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্প পরিদর্শনে আসেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমানসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।