• বাংলা
  • English
  • জাতীয়

    বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন।বেনামি সন্দেহে তিন ব্যাংক থেকে ৩ হাজার ২৭০ কোটি টাকার ঋণ

    রাজশাহীভিত্তিক নাবিল গ্রুপের নামে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের (আইবিবিএল) ঋণ ছিল ২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। হঠাৎ করে গ্রুপের নামে আরও প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকার ঋণ মঞ্জুর করা হয়। এর মধ্যে গ্রুপের নতুন দুটি কোম্পানির নামে আইবিবিএলসহ তিনটি ব্যাংক থেকে নেওয়া হয়েছে ৩ হাজার ২৭০ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে ৬ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা ঋণ সৃষ্টি হলেও নতুন গ্রাহকের নামে অন্তত ৩ হাজার ২৭০ কোটি টাকা বেনামে অন্য পক্ষ হাতিয়ে নিয়েছে বলে মনে করছে বাংলাদেশ ব্যাংকের অফসাইট সুপারভিশন বিভাগ। প্রতিবেদনটি ব্যাংক পরিদর্শন বিভাগে পাঠানো হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের অনুমোদন পাওয়ার পর এ বিষয়ে পরিদর্শন শুরু হবে।

    বাংলাদেশ ব্যাংক ও এসব ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহীর নাবিল গ্রুপ আগে থেকেই ইসলামী ব্যাংকের গ্রাহক। চলতি বছরের মার্চে ব্যাংকটির রাজশাহী শাখায় তাদের ঋণ ছিল ২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। গত ২১ মার্চ অনুষ্ঠিত ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের ৩০৮তম সভায় আগের ঋণ পরিশোধের মেয়াদ বাড়ানো হয়। একই সভায় একক গ্রাহকের ঋণসীমা লঙ্ঘন করে ৭০০ কোটি টাকার নতুন ঋণ অনুমোদন করা হয়।

    কয়েকদিন পর ইসলামী ব্যাংকের নির্বাহী কমিটির সভায় নাবিল গ্রুপের নতুন কোম্পানি নাবিল গ্রেইন ক্রপসের নামে ৯৫০ কোটি টাকা ঋণ অনুমোদন করা হয়। এছাড়া গত ৩০ মে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের ৪৮১তম পর্ষদ সভায় নাবিল নব ফুডের নামে ১ হাজার ১২০ কোটি টাকা এবং ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ২৩ জুন ১ হাজার ২০০ কোটি টাকার ঋণ অনুমোদন করে। ২৪৬তম সভা। এই তিনটি ঋণের পরিমাণ ৩ হাজার ২৭০ কোটি টাকা, যা বেনামি বলে সন্দেহ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

    নাবিল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, এই ঋণ হঠাৎ করে ওঠেনি। দীর্ঘদিন ব্যবসা করার কারণে চাহিদা বেড়েছে। তার নামে ঋণ নেওয়া ঠিক নয়। পুরো ঋণের সুবিধাভোগী নাবিল গ্রুপ। ব্যবসায়িক প্রয়োজনে তিনি এই ঋণ নিয়েছেন। তিনি এ দাবি করলেও ইসলামী ব্যাংকের নথিতে দাবি করা হয়েছে নাবিল গ্রেইন ক্রপস নাবিল গ্রুপের কোম্পানি নয়।

    কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গুলশান শাখার নতুন গ্রাহক নাবিল গ্রেইন ক্রপসের নামে ৯৫০ কোটি টাকার বিনিয়োগ সীমা অনুমোদন করা হয়েছে। মাত্র ১১০ কোটি টাকার আমানত লিনের শর্তে কৃষিপণ্য আমদানি ও বিপণনের জন্য এই ঋণ মঞ্জুর করা হয়েছে। লেনদেনের জন্য মোটা অঙ্কের ঋণ দেওয়া হলেও সিআইবির সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত গ্রাহকের লেনদেন হয়েছে মাত্র সাড়ে আট লাখ টাকা। আবার কোম্পানিটি ‘কোন গ্রুপের অংশ নয়’ বলে ব্যাংকের নথিতে উল্লেখ রয়েছে। এবং গ্রাহকের অনুমানকৃত আর্থিক বিবৃতির উপর ভিত্তি করে, ক্রেডিট রিস্ক রেটিং হল ‘প্রান্তিক’। এই ধরনের গ্রাহকদের পক্ষে ট্রেড করার জন্য বিনিয়োগটি সঠিক খাতে ব্যবহার করা হয়েছে কিনা এবং এত বড় ব্যবসা পরিচালনা করার জন্য তাদের প্রয়োজনীয় দক্ষতা আছে কিনা তা যাচাই করা প্রয়োজন। এ ছাড়া কোম্পানিটি নাবিল গ্রুপের কিনা তাও খতিয়ে দেখা দরকার।

    নাবিল নূব ফুডের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ প্রতিষ্ঠানের নামে সৃষ্ট ঋণ বেনামি নাকি ফার্স্ট সিকিউরিটি এবং তা এসআইবিএল বা অন্য কোনো ব্যাংকের পরিচালকদের স্বার্থের সঙ্গে সম্পৃক্ত কিনা তা যাচাই করতে হবে। আবার ঋণ অনুমোদনের সময় দেওয়া ন্যূনতম শর্তগুলো পরে শিথিল করা হয়েছে। একটি নতুন বিনিয়োগ অ্যাকাউন্টের বিপরীতে কোন শর্তে শর্ত শিথিল করা হয়েছে তা জানতে হবে। সার্বিক পর্যালোচনার পর, নতুন গ্রাহকের অনুকূলে এত বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ অনুমোদনের যৌক্তিকতা সম্পর্কে উভয় ব্যাংকের কাছ থেকে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। এ ছাড়া নাবিল নোব ফুডের পরিচালকদের ব্যবসার ইতিহাস দিতে বলা হয়েছে।

    ইসলামী ব্যাংকের এমডি মুহাম্মদ মুনিরুল মাওলা, এসআইবিএলের এমডি জাফর আলম ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের এমডি সৈয়দ ওয়াসেক মো. আলীর সঙ্গে বিভিন্নভাবে যোগাযোগ করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। ইসলামী ব্যাংক ও এসআইবিএলের প্রধান কার্যালয়ে গিয়েও দায়িত্বশীল কারও বক্তব্য নেওয়া যায়নি।

    বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে কোনো তথ্য যাচাই-বাছাই ছাড়াই শরীয়াহভিত্তিক কয়েকটি ব্যাংক থেকে অস্বাভাবিক ঋণ সৃষ্টির অভিযোগ উঠেছে। যেসব প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ দেওয়া হচ্ছে সেগুলো একেবারেই নতুন বা অপরিচিত। কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রাথমিকভাবে সন্দেহ করছে, একটি বেনামী পক্ষ বড় ধরনের ঋণ নিয়েছে। এখন নাবিল গ্রুপের নামে বিপুল পরিমাণ ঋণের অস্বাভাবিকতা ধরা পড়েছে। পরিচালনা পর্ষদ বা মালিকানার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কারও সম্পৃক্ততা ছাড়া এ বিপুল পরিমাণ ঋণ সৃষ্টি করা সম্ভব নয়। সার্বিক তথ্য পর্যালোচনা করে প্রাথমিকভাবে তারা মনে করছেন, নাবিল গ্রুপের ঋণের পরিমাণ ৩ হাজার ১০০ কোটি টাকা। বাকি ৩ হাজার ২৭০ কোটি টাকার সুবিধাভোগী অন্য কোনো দল।

    একক গ্রাহক ঋণের সীমা পূরণ হয়নি: ব্যাংক কোম্পানি আইনের অধীনে, একটি ব্যাঙ্ক তার মোট মূলধনের ২৫ শতাংশ পর্যন্ত একক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা গোষ্ঠীকে ঋণ দিতে পারে।

    মন্তব্য করুন