বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্ত।ধামাকা শপিংয়ে গ্রাহকের কাছ থেকে ৪৭০ কোটি টাকা হাওয়া
এমডি জসিম উদ্দিন চিশতী ঋণের নামে ১২৮ কোটি টাকা হাতিয়ে নিলেন * ৭২৪ কোটি টাকা ছাড়ে ৪০২ কোটি টাকার পণ্য বিক্রি বিতর্কিত ই-কমার্স কোম্পানি ধামাকা শপিং-এর মালিকরা লক্ষ লক্ষ ক্রেতা এবং সরবরাহকারীদের কাছ থেকে ৪৬০ কোটি টাকা আয় করেছেন। বিপুল পরিমাণ অর্থের মধ্যে ১২৮ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন প্রতিষ্ঠানটির মালিক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক এসএমডি জসিম উদ্দিন চিশতী, যিনি বর্তমানে পলাতক রয়েছেন। ক্রেতাদের আকৃষ্ট করার জন্য বিশাল ছাড়ের কারণে এটি বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত কোম্পানিটির ৩২২ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। বাকি টাকা অন্য খাতে ব্যয় করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ তদন্তে ধামাকা কেনাকাটায় এমন বেপরোয়া অনিয়মের কথা উঠে এসেছে। গত বছরের ২৪ আগস্ট বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ ব্যাংককে ৯টি ই-কমার্স কোম্পানির সর্বশেষ আর্থিক অবস্থা, ক্রেতা ও ব্যবসায়ীদের মোট ঋণ, কর্মরত ও স্থায়ী মূলধনের পরিমাণ এবং এসব কোম্পানি কোনো অর্থ অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছে কিনা সে বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে অনুরোধ করে। এরই অংশ হিসেবে গত বছরের ১৯ থেকে ২৬ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের পাঁচ সদস্যের একটি দল ধামাকা শপিংয়ে অনিয়মের তদন্ত করে। তদন্তের পর, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২৮ ডিসেম্বর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ১৪৫ পৃষ্ঠার একটি প্রতিবেদন জমা দেয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদন্তে দেখা গেছে, কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক জসিম উদ্দিন চিশতী গ্রাহকদের অগ্রিম দেওয়া টাকা থেকে ৬৪ কোটি টাকা নিজের অ্যাকাউন্টে তুলে নিয়েছেন। আর গ্রাহকদের পণ্য না দিয়ে নিজস্ব মালিকানাধীন অন্যান্য কোম্পানিকে ২৫ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে। এছাড়া সফটওয়্যার কেনার নামে আরও ২০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, ক্রেতাদের অগ্রিম পরিশোধ করা টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটির শীর্ষ কর্মকর্তা ও তাদের স্বজনরা। ধামাকা শপিংয়ের চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও) মো. সিরাজুল ইসলাম ও তার ভাই মো. সেলিম হোসেনসহ আরও অনেকে জড়িত বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা মনে করছেন। এ ছাড়া বণিক কোম্পানির সঙ্গে যোগসাজশ করে পণ্য সরবরাহ না করে কাগজের লেনদেনের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচারের আশঙ্কা প্রকাশ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, যেসব ই-কমার্স কোম্পানি ক্রেতাদের কাছ থেকে অগ্রিম অর্থ পরিশোধ করেনি এবং সরবরাহকারীদের কাছ থেকে পণ্যের মূল্য পরিশোধ করেনি তাদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসহ সরকারের উচ্চপদস্থ ব্যক্তিরা এ নিয়ে কাজ করছেন। ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের কীভাবে টাকা ফেরত দেওয়া যায় তা নিয়েও কাজ করা হচ্ছে। আইন অনুযায়ী দোষীদের শাস্তির আওতায় এনে টাকা উদ্ধার করা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন দল বলেছে, ধামাকা শপিং-এ পণ্য সরবরাহকারী মার্চেন্ট কোম্পানির মধ্যে দুটি কোম্পানির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে যে ধামাকা শপিং থেকে পণ্যের অর্ডারের জন্য প্রাপ্ত অর্থের একটি বড় অংশ নগদ ও চেকের মাধ্যমে ফেরত দিয়েছে দুই ব্যবসায়ী। . ডিসকাউন্ট জন্য অতিরিক্ত টাকা আছে. অর্থাৎ কাগজে কলমে বেচা-কেনা হয়েছে। কোন পণ্য বিনিময় হয়নি. বেশ কিছু গ্রাহক পর্যায়ক্রমে বিক্রেতা কোম্পানির কাছ থেকে নগদ ও চেক পেয়েছেন, যারা প্রাথমিকভাবে ধামাকা শপিং-এর দেওয়া ডিসকাউন্ট উপভোগ করেছেন। এই সুবিধাভোগীদের সাথে ধামাকা শপিং বা বিক্রেতাদের জড়িত থাকার বিষয়ে আরও তদন্ত প্রয়োজন। আইনি প্রক্রিয়ায় সুবিধাভোগীদের আনা সম্ভব হলে আরও তথ্য পাওয়া যাবে বলে মনে করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সুবিধাভোগীদের একজন সেলিম হোসেন, কোম্পানির প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলামের ভাই। বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, শপিং পণ্য বিক্রির জন্য ক্রেতাদের কাছ থেকে ৬০৫ কোটি টাকা নিয়েছে ধামাকা। কিন্তু পণ্য সরবরাহ করেছে ৪০২ কোটি টাকা। বাকি ৩০২ কোটি টাকা সরবরাহ করা সম্ভব হয়নি।
ব্যাংকের আরেকটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গ্রাহক ও ব্যবসায়ীদের বিপুল ঋণ থাকলেও ধামাকা শপিং-এর কাছে যতটা সম্ভব কম টাকা। প্রতিষ্ঠানটির ব্যাংক অ্যাকাউন্টে রয়েছে মাত্র ৪৫ লাখ ২৬ হাজার টাকা। অর্থাৎ প্রতি ১০০ টাকা ঋণের জন্য মাত্র ৯ পয়সা। ধামাকা শপিংয়ের ব্যবসায়িক কার্যক্রম এখন পুরোপুরি বন্ধ। কোম্পানিটির দুই লাখের বেশি নিবন্ধিত গ্রাহক ছিল। গত সেপ্টেম্বরে এক গ্রাহকের করা প্রতারণার মামলায় ধামাকা শপিংয়ের সিওও সিরাজুল ইসলাম রানাসহ তিন কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আর জসিম উদ্দিন চিশতী বিদেশে পলাতক বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে। ধামাকা শপিং মূলত ইনভেরিয়েন্ট টেলিকম বাংলাদেশ লিমিটেডের একটি ই-কমার্স ব্যবসা।