বাংলাদেশ-চীন ১২ এফওসি।দ্রুত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে
রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসন শুরু করতে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারকে সহায়তা করবে চীন। সীমিত পরিসরে প্রত্যাবাসন শুরু করতে দুই দেশের উদ্যোগকে ত্বরান্বিত করতেও দেশটি ভূমিকা রাখবে। চীনও এ ব্যাপারে বাংলাদেশের উদ্যোগের প্রশংসা করেছে।
শনিবার ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে দ্বাদশ ফরেন অফিস কনসালটেশন (এফওসি) বৈঠকে এসব কথা উঠে আসে।
বৈঠকে যোগ দিতে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভাইস মিনিস্টার সান উইডেং গত শুক্রবার একটি প্রতিনিধি দল নিয়ে ঢাকায় আসেন। শনিবার সকালে অনুষ্ঠিত বৈঠকে নিজ দেশের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন তিনি। আর বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। আজ সকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. সন্ধ্যায় চীনের ভাইস মিনিস্টার এ কে আবদুল মোমেন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।
বৈঠকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন, সংযোগ, জিডিআই, বাণিজ্য, নিরাপত্তা সহযোগিতাসহ নানা বিষয়ে আলোচনা হয়।
চীনা প্রতিনিধিদল গতকাল সকাল ১০টার দিকে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনে পৌঁছায়। শুরুতে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন এবং চীনের ভাইস মিনিস্টার সান ওয়েইডেং পৃথক বৈঠক করেন। এরপর শুরু হয় দুই দেশের আনুষ্ঠানিক বৈঠক।
দুপুরে মধ্যাহ্নভোজের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক বৈঠক শেষ হয়।
বৈঠকে অংশ নেওয়া একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের প্রায় সব বিষয়েই আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে চীনকে চীনা সামরিক সরঞ্জামের বাজার ধরে রাখতে বলা হয়েছে। কারণ সবচেয়ে বেশি সামরিক সরঞ্জাম চীন থেকে আমদানি করা হয় বাংলাদেশে। পণ্যের বিক্রয়োত্তর সেবা সহ আরও অনেক বিষয় জড়িত।
তারপর তিনি বলেন যে এফওসি ধরনের মিটিং একটি খুব কাঠামোগত মিটিং। বৈঠকে অন্য দেশ সম্পর্কে কোনো দেশই কোনো বিরূপ মন্তব্য করে না। তবে এখনও কিছু জায়গায় কাজ করার সুযোগ রয়েছে। সাশ্রয়ী হওয়ায় সামরিক সরঞ্জামের বাজার ধরে রাখতে কাজ করার সুযোগ রয়েছে চীনের।
এদিকে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে যে উভয় পক্ষই দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান প্রতিরক্ষা সহযোগিতা নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছে। দুই দেশের সম্ভাব্য নিয়মিত সরকারি পর্যায়ে বৈঠক ও বিশেষ প্রশিক্ষণ নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে, চীন অনলাইন জুয়া এবং মাদক চোরাচালান প্রতিরোধে সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহযোগিতা করার প্রস্তাব দেয়। জননিরাপত্তা নিয়ে পৃথক বৈঠকে দুই দেশ নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছে। বৈঠকে বাংলাদেশে ঘূর্ণিঝড় ও বন্যার সময় স্যাটেলাইট ছবি তোলায় সহযোগিতার জন্য চীনকে ধন্যবাদ জানানো হয়।
বৈঠকে উপস্থিত কর্মকর্তারা জানান, বৈঠকে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন নিয়ে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা পাইলটদের প্রত্যাবাসনের চলমান প্রক্রিয়া চীনকে জানানো হয়। মধ্যপ্রাচ্যে সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে তিক্ত বৈরী সম্পর্কে মধ্যস্থতা করে চীনের কূটনীতি নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে সঙ্কট সমাধান করে দেশটি এখানেও ড্রাগন কূটনীতির ছাপ রাখতে চায়। চীন যেকোনো উপায়ে এ ক্ষেত্রে সাফল্য চায়।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বৈঠকে রোহিঙ্গা সংকট এবং অন্যান্য বহুপাক্ষিক ও আঞ্চলিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সময়মত রোহিঙ্গাদের নিরাপদ, টেকসই এবং স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনের জন্য চীন তার সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে। রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসন বাংলাদেশ, মিয়ানমারসহ সমগ্র অঞ্চলের জন্য উপকারী হবে বলে বৈঠকে চীনা ভাইস মিনিস্টার উল্লেখ করেন। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের পাইলট প্রকল্প শুরু করার পদক্ষেপকে সাধুবাদ জানিয়েছে চীন। পররাষ্ট্র সচিব বন্ধুত্বপূর্ণ দেশ, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সাথে সংযোগ স্থাপন করে স্বেচ্ছায় ও টেকসই প্রত্যাবাসনে সহযোগিতার জন্য চীনকে ধন্যবাদ জানান।
২০১৬ সালে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের ঢাকা সফরের সময় ২৭টি প্রকল্পে দুই দেশের মধ্যে ২৪০০ মিলিয়ন ডলারের একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। এর মধ্যে আটটি প্রকল্পে প্রায় ৩.৩ বিলিয়ন ডলার ছাড় দেওয়া হয়েছে। বৈঠকে চীনা ঋণ প্রকল্প নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে বাংলাদেশকে প্রশ্ন করা হয় নতুন কোনো ঋণের প্রয়োজন হবে কি না। ঢাকা এটাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে।
বৈঠকে দুই পক্ষ বহুপাক্ষিক ফোরামে পারস্পরিক সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করেন। ‘এক চীন নীতিতে’ অব্যাহত সহযোগিতার জন্য বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানিয়েছে বেইজিং। উভয় পক্ষই কৌশলগত সম্পর্ক আরও গভীর করতে চায়। এছাড়া চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড প্রকল্পের আওতায় দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াকে সংযুক্ত করতে উভয় পক্ষই আগ্রহ দেখিয়েছে।
চলতি বছরের শুরুতে কয়েক ঘণ্টার জন্য ঢাকায় আসেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিন গ্যাং। গত এপ্রিলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন ওয়াশিংটনে যাওয়ার একদিন আগে মিয়ানমারের বিশেষ দূত দেং শিজুন ঢাকায় আসেন। দুই সপ্তাহ পর, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে আলোচনা করতে ১৮ এপ্রিল কুনমিং যান।