• বাংলা
  • English
  • জাতীয়

    বাংলাদেশ আইএমএফ থেকে ঋণ পেতে পারে

    করোনাভাইরাস এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব বিশ্ব অর্থনীতিতে ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করেছে। বেশিরভাগ দেশ পরিস্থিতি মোকাবেলায় বিভিন্ন নীতি গ্রহণ করেছে। সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা রক্ষায় অর্থনীতির চাপ সামলানোর জন্য বাংলাদেশ ইতোমধ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে চাওয়া ঋণ নিয়ে গত দুই সপ্তাহ ধরে ঢাকায় আলোচনার অবসান ঘটিয়েছে সংগঠনটির একটি মিশন। গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে সমাপনী বৈঠকে তারা সরকারের সঙ্গে আলোচনাকে ইতিবাচক উল্লেখ করে সন্তোষ প্রকাশ করেন। আজ অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা শেষ করে বিবৃতি দেবে আইএমএফ মিশন।

    বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, আলোচনার অগ্রগতি বিবেচনায় বাংলাদেশ আইএমএফের ঋণ পেতে পারে বলে তারা মনে করেন। আইএমএফ মিশনের অবস্থান ইতিবাচক। তবে ঋণের চূড়ান্ত গ্রহণ বা বিতরণ নির্ভর করবে সংস্থার বিভিন্ন শর্তে সরকারের অনুমোদনের ওপর।

    গত জুলাইয়ে সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে সাড়ে চার বিলিয়ন ডলার ঋণ চেয়ে চিঠি দেয়। এরপর নিয়ম অনুযায়ী বিভিন্ন তথ্য যাচাই করতে দুই সপ্তাহের সফরে ঢাকায় আসে আইএমএফ মিশন। ২৬ অক্টোবর থেকে তারা অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, পরিসংখ্যান ব্যুরো, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনসহ বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে বৈঠক করেছে।

    জানা গেছে, বাংলাদেশের বর্তমান বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পরিস্থিতিকে ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছে না আইএমএফ। তবে পতন অব্যাহত থাকলে তা উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে। এই বাস্তবতায় সংরক্ষিত সংরক্ষণে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি। আইএমএফের দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক প্রধান রাহুল আনন্দের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল ঢাকা সফর শেষে প্রধান কার্যালয়ে প্রতিবেদন দেবে। এরপরই চূড়ান্ত শর্ত জানা যাবে। উভয় পক্ষের সমঝোতার পর ঋণ প্রস্তাব আইএমএফ পরিচালনা পর্ষদের কাছে যাবে।

    গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে চূড়ান্ত বৈঠক করেছে সফরকারী দল। বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদারসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অংশ নেন। গতকাল নতুন কোনো বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়নি। মিশন গত দুই সপ্তাহে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছে। এসব বৈঠকে ডলারের দর নির্ধারণ, সুদের হারের বিদ্যমান সীমা এবং আর্থিক খাতে বিভিন্ন সংস্কার নিয়ে আলোচনা হয়। এ ছাড়া বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এবং পেমেন্ট অ্যাকাউন্টিং সিস্টেমের ভারসাম্য, রাজস্ব, মুদ্রানীতির মধ্যে সমন্বয়সহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে ডলারের দর বাড়ার সময় অসম প্রতিযোগিতা ছিল। এ কারণে ব্যাংকগুলো নিজেরাই বাজারের ওপর ভিত্তি করে একটি রেট নির্ধারণ করেছে। চলতি বছরের শুরুতে যে ডলার আমদানিতে ৮৬ টাকার নিচে ছিল তা এখন ১০৬ টাকা। ডলারের রেট ৮৫ টাকার নিচে রেমিট্যান্স পাচ্ছে ১০৭ টাকা। আইএমএফ মিশন বাংলাদেশের এই অবস্থানকে বর্তমান বাস্তবতায় যুক্তিসঙ্গত বলে মনে করে। সুদের হারের সীমা প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে মুদ্রাস্ফীতির কারণে বাংলাদেশ এমনিতেই চাপে রয়েছে। সীমা একবার তুলে নিলে সুদের হার অনেক বেড়ে যাবে। মূল্যস্ফীতি বাড়বে এবং দরিদ্ররা আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিদ্যমান সীমা প্রত্যাহার হলে ব্যাংকের আয় বাড়বে। বড় সুবিধাভোগী হবেন ব্যাংক মালিক।

    এ কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখনই সীমা পুরোপুরি তুলতে চায় না। তবে সীমা বাড়ানো বা আংশিক প্রত্যাহারের বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে।

    আর্থিক খাতের সংস্কারের বিষয়ে বাংলাদেশ জানিয়েছে, এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। দেশের খেলাপি ঋণের বড় অংশ রয়েছে এমন ১০টি ব্যাংককে তদারকির উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ ছাড়া কম খেলাপি ঋণ দেখানোর ক্ষেত্রে যে ছাড় দেওয়া হয়েছে তা ছিল করোনার কারণে সাময়িক ব্যবস্থা। খেলাপিদের ব্যাপারে কঠোর নীতিসহ ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধনের প্রক্রিয়া চলছে। রাজস্ব আইন সংশোধনের জন্যও বিভিন্ন প্রক্রিয়া চলছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে কর অব্যাহতি ধীরে ধীরে কমানো হবে।

    আমদানি ব্যয় বাড়লেও রপ্তানি ও রেমিটেন্স একই হারে বাড়ছে না। এর মধ্যে সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে রপ্তানি ও রেমিটেন্স কমেছে। দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর বড় ধরনের চাপ পড়েছে। গত আগস্টে ৪৮ বিলিয়ন ডলারের গৃহঋণের রিজার্ভ গতকাল ৩৪.২৮ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। আর আইএমএফের মানদণ্ডের আলোকে হিসাব করলে নেট রিজার্ভ দাঁড়ায় ২৫.৮৮ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশ শিগগিরই মোট রিজার্ভের পাশাপাশি নেট রিজার্ভ প্রকাশ করবে।

    মন্তব্য করুন