বাংলাদেশের অর্থনীতি লোকসান কাটিয়ে চাঙ্গা: বিশ্বব্যাংক
করোনাজনিত ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতি চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। শিল্প ও সেবা খাতের কার্যক্রমের কারণে গত অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি সন্তোষজনক ছিল। চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধ পর্যন্ত সেই ধারা অব্যাহত রয়েছে। বর্তমান বাজার মূল্যে চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৬ দশমিক ৪ শতাংশ। আগামী অর্থবছরে জিডিপি ৬ দশমিক ৭ শতাংশে উন্নীত হতে পারে। এছাড়া বৈদেশিক ঋণ ও সরকারি ঋণের দিক থেকে বাংলাদেশ এখনো কম ঝুঁকিপূর্ণ।
বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশ সম্পর্কে এ পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হয়েছে। ‘বাংলাদেশের ডেভেলপমেন্ট আপডেট: রিকভারি অ্যান্ড রেজিলিয়েন্স ইন গ্লোবাল অনিশ্চয়তা’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি বুধবার প্রকাশিত হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতির প্রতিবেদনের সঙ্গে বাংলাদেশ বিষয়ক প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। ওয়াশিংটনে বিশ্বব্যাংকের প্রধান কার্যালয় থেকে ভার্চুয়াল প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন দক্ষিণ এশিয়ার জন্য সংস্থার প্রধান অর্থনীতিবিদ হ্যান্স টিমার। এছাড়াও তিনি দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শ্রীলঙ্কার সংকট থেকে বাংলাদেশের তিনটি শিক্ষা রয়েছে। প্রথমত, ঋণ ব্যবস্থাপনা আরও সতর্ক হতে হবে। সরকারি ব্যয়ে বিশেষ ব্যয় এবং দ্বিপাক্ষিক ঋণ গ্রহণসহ সব ধরনের ঋণ ব্যবস্থাপনায় সতর্কতা প্রয়োজন। দ্বিতীয়ত, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। যদিও স্টক এখনও বেশ ভালো। ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে বিশ্ববাজার থেকে খাদ্য সামগ্রী সংগ্রহের খরচ মেটাতে এই মজুদ যথেষ্ট। এছাড়া বৈদেশিক ঋণ (এফডিআই) আকৃষ্ট করার দিকেও বাংলাদেশকে গভীর মনোযোগ দিতে হবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখনো অনেক পিছিয়ে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে হ্যান্স টিমার বলেন, শ্রীলঙ্কার সংকট থেকে বাংলাদেশের পরিস্থিতি একেবারেই আলাদা। বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) মাত্র ১৭ শতাংশ। এছাড়া বাংলাদেশ নমনীয় সুদে ঋণ নিয়েছে। বিশ্বব্যাংক এবং অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে ধার করা হয়েছে। তবে ঋণ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশকে সতর্ক থাকতে হবে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং রাশিয়ার ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে বাংলাদেশের বাণিজ্য কতটা হুমকির মুখে পড়েছে জানতে চাইলে হ্যান্স টিমার বলেন, রাশিয়া ও ইউক্রেনের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য খুব বেশি নয়। রপ্তানি ১ শতাংশেরও কম। তবে বাংলাদেশ রাশিয়া থেকে মোট গম আমদানির প্রায় ১৭ শতাংশ সংগ্রহ করে। এক্ষেত্রে বিকল্প দেশ থেকে আমদানির সুযোগ রয়েছে বাংলাদেশের। তবে ইউরোপীয় দেশগুলো যুদ্ধের কারণে আর্থিক সংকটে পড়লে এবং তাদের ব্যবহার কমে গেলে বাংলাদেশের রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
বাংলাদেশের বর্তমান ঘাটতি প্রসঙ্গে হ্যান্স টিমার বলেন, সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ায় এই প্রবণতা একটি বড় সমস্যা। তবে পরিস্থিতি এখনও উদ্বেগের পর্যায়ে পৌঁছায়নি। ভবিষ্যতে ঘাটতি কিছুটা কমবে বলে আশা করা হচ্ছে।
দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের জিডিপি সংক্রান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরে ভারতের সর্বোচ্চ ৮ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে। তবে আগামী অর্থবছরে তা ৭ দশমিক ১ শতাংশে নেমে আসতে পারে।
বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জিডিপি। পাকিস্তানের তৃতীয় সর্বোচ্চ জিডিপি হতে পারে ৪.৩ শতাংশ। আগামী অর্থবছরে তা ৪ শতাংশে নেমে আসতে পারে।
অন্যান্য দেশের জিডিপি আরও কম। সমষ্টিগতভাবে, একটি ক্যালেন্ডার বছরের হিসাবে, দক্ষিণ এশিয়ার জিডিপি হতে পারে ৬.৬ শতাংশ। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে আগামী বছরের জন্য শ্রীলঙ্কার জিডিপির কোনো হিসাব দেওয়া হয়নি।
দক্ষিণ এশিয়ার প্রেক্ষাপটে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত দুই বছরে বিভিন্ন ধাক্কার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এ অঞ্চল। খাদ্য, জ্বালানীর উচ্চ মূল্য এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে করোনা সংক্রামক রোগের সময় প্রাদুর্ভাব আরও বেড়েছে বলে মনে হচ্ছে। এছাড়া করোনার কারণে নারীদের আয়ে ব্যাপক বৈষম্য দেখা দিয়েছে। এর জন্য আরও গভীর পর্যালোচনা প্রয়োজন। প্রতিবেদনে এমন নীতি গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে যা লিঙ্গ বৈষম্য দূর করতে, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে এবং সুযোগ সৃষ্টিতে সহায়তা করে।