বরিশালে বিএনপির গণসভা আজ।দিন দিন প্রতিবন্ধকতা ও ভোগান্তির মাত্রা বাড়ছে
যতই দিন যাচ্ছে বিএনপির জনসমাবেশে বাধা ততই বাড়ছে। দলীয় কর্মসূচিতে জনসমাগম ঠেকাতে ক্ষমতাসীনদের বাধায় ভোগান্তিতে পড়ছেন সাধারণ মানুষ। ‘অবরুদ্ধ’ বরিশালে আজ বিএনপির গণসমাবেশকে সামনে রেখে বিশৃঙ্খলার মাত্রা আগের চারটি বিভাগীয় কর্মসূচির চেয়ে অনেক বেশি। সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় সারাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন বরিশালে লাখো মানুষের দুর্ভোগ এখন চরমে।
গত ১২ অক্টোবর চট্টগ্রামে আলোচিত বিএনপির প্রথম বিভাগীয় গণসমাবেশ ছিল খুবই অপ্রীতিকর। তিন দিন পর ময়মনসিংহের কর্মসূচিতে ব্যাঘাত ঘটতে থাকে। জনসমাগম ঠেকাতে অঘোষিত হরতাল ও আওয়ামী লীগের পাহারা দেওয়া। পরের দুই সপ্তাহে খুলনা ও রংপুরে ধর্মঘট ডাকে এবং সমাবেশের আগের দিন থেকে গণপরিবহন বন্ধ রাখায় ব্যাপক জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়।
কিন্তু প্রতিবন্ধকতার বিচারে সব সমাবেশকে ছাড়িয়ে গেছে বরিশাল। ধর্মঘটের কারণে শুক্রবার থেকে শুধু বাস নয়, অটোরিকশা, ইজিবাইকের মতো ছোট যান চলাচলও বন্ধ রয়েছে। চলছে না লঞ্চ, ট্রলার ও ফেরি। খেয়াঘাটও বন্ধ। সকালে মাইক্রোবাস ও প্রাইভেট কারও বন্ধ ঘোষণা করা হয়। যানবাহন ছাড়া একটি শহর প্রায় অচল। বিমান আর কিছু প্যাডেল চালিত রিকশা ছাড়া আর কিছুই নড়ছে না।
ঢাকা থেকে দক্ষিণবঙ্গের অন্যান্য জেলার বাস গতকাল বরিশালের ছয় জেলা থেকে ছাড়েনি। অন্য সব রুটে চলাচল করলেও রাজধানীর সদরঘাট থেকে শুধু বরিশাল ও ঝালকাঠি রুটের লঞ্চ ছেড়েছে। বরিশালের প্রবেশ পথে পাহারা দিচ্ছে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। আশেপাশের জেলা থেকেও প্রবেশ বন্ধ রয়েছে।
শুক্রবার সকাল ১১টার দিকে বরিশাল নগর নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে জহিরুল ইসলাম পলাশ নামে এক যাত্রী জানান, তার বাড়ি ঝালকাঠির রাজাপুরের গালুয়া গ্রামে। মামীর মৃত্যুর খবর নিয়ে বাড়ি যাচ্ছি। ফরিদপুর থেকে ৯৫০ টাকায় অটোরিকশায় করে বরিশালের ভূরঘাটে আসেন। সেখান থেকে ভ্যানে করে শহরে আসেন। এখন কিছুই পাচ্ছেন না।
শুক্রবার সকালে বরিশালের প্রবেশদ্বার গৌরনদী বাস টার্মিনাল ও আগৈলঝাড়া সড়কে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীরা ৮-১০টি ইজিবাইক ভাংচুর করে। ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে সমাবেশে না আসার হুমকি ও বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি তল্লাশির অভিযোগ উঠেছে।
গত বৃহস্পতিবার থেকে বাধা এড়িয়ে হেঁটে, সাইকেল, নৌকা বা বিকল্প পথে বরিশালে আসছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। অনেকে কাপড়-চোপড়, চাদর, কম্বল নিয়ে আসছেন। সেখানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কেন্দ্রীয় নেতারাও আসেন। আজ দুপুর ২টায় সমাবেশ শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার থেকে বরিশালের বঙ্গবন্ধু উদ্যানে (বেলস পার্ক) অবস্থান করছেন দলটির হাজার হাজার নেতাকর্মী। বৃহস্পতিবার রাতে তারা সেখানে মাদুর, খবরের কাগজ, পাটি পেতে ঘুমায়। বাগানে রান্না ও খাওয়া। সমাবেশস্থল পরিত্যক্ত হওয়ার আশঙ্কায় গতকাল সেখানে জুমার নামাজ আদায় করেন। পৃথক দুটি জামাতে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারাও অংশ নেন। বিকেলে সমাবেশস্থল কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়।
বৃহস্পতিবার বিকেলে পটুয়াখালীর গলাচিপার আমখোলা ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সভাপতি জাকির হোসেন মোল্লা সমাবেশস্থলে আসেন। তিনি বলেন, এর মধ্যে ৫০ জন এসেছেন।
বৃহস্পতিবার রাতে দশমিনা উপজেলার আলীপুর ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোঃ ফোরকান খানও অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীকে বিছানা-বালিশ নিয়ে সমাবেশস্থলে আসেন। বাগানে রাত কাটান।
বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার কাকচিরার জসিম উদ্দিন আকন পেশায় একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। তার অভিযোগ, তিনি দ্রব্যমূল্য ধরে রাখতে পারছেন না। এ কারণে কষ্ট হলেও নিত্যপণ্যের দাম কমানোর দাবিতে নেমেছেন তিনি।
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে, খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ বিভিন্ন দাবিতে বঙ্গবন্ধু উদ্যানে অবস্থানরত বিএনপির কর্মীরা দিনভর স্লোগান দেন। মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান খান ফারুকের দাবি, যত বাধা-বিপত্তি আসুক না কেন বরিশাল আজ জনসমুদ্রে পরিণত হবে।
বিএনপির কর্মসূচিতে রাজপথে থাকার ঘোষণা দিয়েছে আওয়ামী লীগ। বাধার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন দলের জেলা সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনূস বলেন, বিএনপি মিথ্যাচার করে। তাদের সমাবেশে আসতে বাধা দিলে বঙ্গবন্ধু উদ্যানে হামলার সময় এত মানুষ কিভাবে জড়ো হলো? বিএনপির কর্মসূচি আওয়ামী লীগ চায় না, ছিলও না।
গতকাল সন্ধ্যায় ছাত্রলীগের একাধিক দল শতাধিক মোটরসাইকেল নিয়ে নগরীতে মহড়া দেয়। এতে নেতৃত্বদানকারী জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সাজ্জাদ সেরনিয়াবাত দাবি করেন, বিএনপি সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। কোনো বিশৃঙ্খলা যাতে না হয় সেজন্য সতর্ক অবস্থানে রয়েছে ছাত্রলীগ।