• বাংলা
  • English
  • জাতীয়

    বন্যা-জলাবদ্ধতা।ক্ষুধার জ্বালায় অসহায় মানুষ কাঁদছে

    কেউ হাঁটু, কেউ কোমর, কেউ পানিতে ভাসছে। তলিয়ে গেছে বাড়িঘর ও দোকানপাট। অনেকের রান্নাঘর পানিতে ভরে গেছে, চুলায় হাঁড়ি নেই। চারদিকে পানি বইলেও বিশুদ্ধ পানির সংকটে ভুগছে মানুষ। টানা কয়েকদিনের টানা বর্ষণ ও জলোচ্ছ্বাসে ভালো যাচ্ছে না বন্দরনগরী চট্টগ্রাম। একইভাবে তিন পার্বত্য জেলা ও সমুদ্র নগরী কক্সবাজারও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিশেষ করে বান্দরবানে দেখা দিয়েছে মানবিক বিপর্যয়।

    সাধারণত বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠনসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে প্রাকৃতিক দুর্যোগে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে দেখা যায়।

    এই দুর্যোগে এমন তৎপরতা খুব একটা দেখা যায় না। ব্যক্তিগতভাবে কেউ কেউ বস্তিতে রান্না ও শুকনো খাবার বিতরণ করলেও অনেক অসহায় মানুষকে না খেয়ে থাকতে হয়। ক্ষুধার জ্বালায় নীরবে কাঁদছে অনেক অসহায় মানুষ। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পক্ষ থেকে দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর নির্দেশনা দেওয়া হলেও গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি।

    সামান্য বৃষ্টিতেই ডুবে যায় নগরীর চকবাজারের কাপাসগোলা। এবার টানা বৃষ্টিতে জোয়ারের পানি আসায় পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। দিনমজুর আবদুস সালাম কাপাসগোলার গলিতে থাকেন। বন্যার কারণে কাজ বন্ধ থাকায় আয়ও বন্ধ হয়ে গেছে। পানি খেয়ে ঘর থেকে বের হওয়ার উপায় নেই। দিনমজুর সালাম যে বাড়িতে থাকেন তার পাশের ভবনের মালিকের কলেজ পড়ুয়া মেয়ে ইরফাত ফাতেমা রিফা জানতে পারেন, সালামের পরিবার অনাহারে রয়েছে। তারপর রিফা তাদের জন্য কিছু খাবারের ব্যবস্থা করে।

    ইরফাত ফাতেমা রিফা বলেন, এলাকার হাজার হাজার মানুষ পানিতে আটকা পড়েছে। তাদের অনেকের ঘরে খাবার নেই। এই ধরনের পরিস্থিতিতে, বিভিন্ন গ্রুপ এবং সংস্থার দ্বারা সহযোগিতা প্রদান করা হয়। এবারও তেমনটা দেখা যাচ্ছে না। আমি যথাসাধ্য প্রতিবেশীদের কাছ থেকে তথ্য নিচ্ছি। সবার জন্য খাবারের ব্যবস্থা করতে পারছি না।

    রাইফার সহযোগিতায় সালামের পরিবার একবেলা খাবার পেলেও শহরের অনেক অসহায় মানুষ না খেয়ে দিন কাটাচ্ছে। সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে দরিদ্র মানুষ। বিচ্ছিন্নভাবে যে সাহায্য-সহযোগিতা করা হচ্ছে তা প্রয়োজনের তুলনায় কম।

    শুধু চট্টগ্রাম নগরী নয়, বন্যা কবলিত বিভিন্ন উপজেলা ও আশপাশের জেলায় একই অবস্থা। কক্সবাজার ও বান্দরবানের বন্যা পরিস্থিতি এখন খুবই ভীতিকর। ঘরে পানি ঢুকে যায় বলে রান্না করে খায়- অনেকেরই এমন অবস্থা হয় না। স্বল্প আয়ের মানুষ বেশি হতাশ। বহু মানুষ অনাহারে থাকলেও তাদের বিষয়টি জানানো হচ্ছে না। সরকারের দেওয়া সহায়তা খুবই কম।

    এদিকে অতিবৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার মানুষের পাশে দাঁড়ানোর নির্দেশনা দিলেও গতকাল পর্যন্ত নেতাকর্মীদের দৃশ্যমান কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে। একই অবস্থা বিএনপির। দলটির পক্ষ থেকে অভিন্ন নির্দেশনা দেওয়ার কথা বলা হলেও বাস্তবে তেমন কোনো তৎপরতা নেই।

    যদিও বড় পরিসরে নিঃস্বদের সহায়তা দেওয়া হয়নি, তবে বিচ্ছিন্নভাবে ব্যক্তিগত উদ্যোগে কিছু সহায়তার খবর পাওয়া গেছে। গত সোমবার বিকেলে টানা বৃষ্টিতে তলিয়ে যাওয়া নগরীর জিইসি মোড়সহ আশপাশের এলাকায় পথচারী ও দুঃস্থদের মাঝে প্যাকেটজাত খাবার বিতরণ করেন যুবলীগ নেতা আরশেদুল আলম বাচ্চু। এছাড়া পানিবন্দি কয়েক হাজার পরিবারকে শুকনো খাবার পাঠিয়েছেন সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। গত সোমবার বিকেলে মেয়র বিভিন্ন ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদের মাধ্যমে পানিবন্দি মানুষকে এ সহায়তা দেন। হাটহাজারীর শিকারপুর ও বুড়িশ্বর এলাকায় জলাবদ্ধ মানুষের মাঝে খাবার বিতরণ করছে ‘মানবিক বাজার’ নামের একটি সংগঠন। এই সংগঠনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এরশাদ সিদ্দিকী বলেন, এই বন্যায় মানুষ যেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাতে তারা সহযোগিতা করতে পারছেন না।

    শহরের মতো গ্রামাঞ্চলের মানুষও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে, খুব কম লোক বা সংস্থা আছে যারা তাদের প্রতি তাদের সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে। ভারী বর্ষণে বান্দরবানের নাস্তানাবুদে ভূমিধস। পাহাড়ি এই জেলার অধিকাংশ সমতল তলিয়ে গেছে। শহরে গ্যাসের চুলায় রান্না করা হলেও গ্রামের প্রায় সব পরিবারই মাটির চুলায় রান্না করে। বন্যার পানি ঢুকে পড়ায় সমস্যায় পড়েছেন এসব এলাকার মানুষ। অনেক অনাহারে-আধা-অনাহারে তাদের বাঁচতে হয়। মানুষের এই দুর্যোগে এলাকার কোনো রাজনৈতিক, সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন পৌঁছাতে পারছে না।

    একই অবস্থা কক্সবাজারের বিভিন্ন উপজেলায়। লাখ লাখ মানুষ এখানে পানিতে আটকা পড়েছে। বেকারত্ব ও ঘরে খাবারের অভাবে অনেকেই সমস্যায় পড়েছেন। বিচ্ছিন্ন এলাকায় খাদ্য বিতরণ খুবই সীমিত। জানা গেছে, চকরিয়ায় স্থানীয় সংসদ সদস্য জাফর আহমেদের উদ্যোগে সোমবার রাতে কিছু বন্যার্ত মানুষের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।