জাতীয়

বন্দরনগরীতে আবারও চামড়ার আতঙ্ক

কোরবানির পশুর চামড়া নিয়ে বেশ কয়েক বছর ধরে চলছে ব্যাপক নৈরাজ্য। কয়েক বছর ধরে বিক্রি না হওয়ায় এবং কাঙ্খিত দাম না পাওয়ায় অনেক মৌসুমি ও ছোট চামড়া ব্যবসায়ীরা তাদের চামড়া রাস্তায় ফেলে বাড়ি ফিরতে বাধ্য হয়েছেন। তাদের অনেকেই পথে পথে তাদের পুঁজি হারিয়েছে। তাই এবার সেই আশঙ্কায় কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহের সময় নেই বন্দরনগরী চট্টগ্রামের মৌসুমী ব্যবসায়ীদের।

২০১৯ সালে, ঈদুল আজহায় কোরবানির পশুর চামড়ার দাম সবচেয়ে বেশি কমেছে। তারপরও সেই ধারা অব্যাহত রয়েছে। ওই বছর ব্যবসায়ীরা রাস্তায় ফেলে রাখা চামড়ার কারণে দুর্ভোগে পড়তে হয় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (সিএইচসি) পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের।

এক সময় চট্টগ্রামে ২২টি ট্যানারি ছিল। ফলে চামড়া সংগ্রহে এক ধরনের প্রতিযোগিতা হতো এবং ন্যায্য দাম পাওয়া যেত। ব্যবসা টিকতে না পারায় একের পর এক ট্যানারি বন্ধ হয়ে যায়। এখন সেই ২২টির চেয়ে মাত্র একটি ট্যানারি টিকে আছে! ‘রিফ লেদার’ নামের এই ট্যানারির ওপর নির্ভর করতে হয় গুদাম রক্ষকদের। এছাড়া সংগৃহীত চামড়া বিক্রি করতে চট্টগ্রামের গুদাম রক্ষকদের ঢাকার ট্যানারি মালিকদের দিকে তাকাতে হয়। ফলে সরকার নির্ধারিত মূল্যের পরিবর্তে কম দামে চামড়া সংগ্রহের সুযোগ নিয়েছে তারা।

চট্টগ্রামে প্রতিবছর ৫ থেকে ৭ লাখ কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহ করা হয় বলে জানা গেছে। তবে গত তিন বছরে চামড়া সংগ্রহ প্রায় এক-তৃতীয়াংশ কমেছে। ফলে চামড়া নিয়ে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে মৌসুমী ব্যবসায়ীদের। এবার ঈদুল আজহায় কোরবানির পশুর চার লাখ চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা। প্রতি বছরের মতো এবারও নগরী ও বিভিন্ন উপজেলা থেকে মৌসুমী ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে চামড়া সংগ্রহ করা হবে। এ জন্য এলাকায় কর্মীও নিয়োগ করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়ার আড়তদার সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ মুসলিম উদ্দিন দীর্ঘদিন ধরে সমিতির নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘মজুতদাররা সাধারণত মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চামড়া সংগ্রহ করেন। এই চামড়া উঠানে সংরক্ষণ করা হয় এবং পরে ট্যানারিতে বিক্রি করা হয়। তবে আমরা যতটুকু চামড়া সংগ্রহ করি চট্টগ্রামে কোনো ট্যানারি নেই। ফলে ঢাকার ট্যানারির ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। অনেক সময় আমরা যে দামে চামড়া সংগ্রহ করি তা পাওয়া যায় না। ফলে অনেক দোকানদার ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছে। তাছাড়া লবণের দাম ও পরিবহন খরচ বেড়েছে। তিনি বলেন, সাধারণত প্রতি বছর ৫ থেকে ৭ লাখ চামড়া সংগ্রহ করা হলেও কয়েক বছর ধরে সেভাবে সংগ্রহ করা হচ্ছে না। এবার চার লাখ কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহ করা হতে পারে।

চট্টগ্রামের আতুরা ডিপো চামড়ার গুদামের জন্য বিখ্যাত। এ ছাড়া আরও কয়েকটি স্থানে গুদাম রয়েছে। চামড়া ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এক সময় চট্টগ্রামে ১১২টি কাঁচা চামড়ার গুদাম ছিল। অন্তত এখন এই সংখ্যা ৪৫-এ নেমে এসেছে।

চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়ার দোকানদার সমিতির অন্যতম উপদেষ্টা খোরশেদ আলমও দীর্ঘদিন ধরে এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। তিনি বলেন, ট্যানারি মালিকরা চামড়া যত বড়ই হোক না কেন প্রতিটি চামড়া থেকে ২০ থেকে ২২ ফুট সরিয়ে ফেলে। সেটা বুঝতে পারছেন না মৌসুমী ব্যবসায়ীরা। ফলে বড় চামড়ার ফুট। পরে চামড়া বিক্রি করতে গিয়ে বিপাকে পড়েন। আড়তদারাও পড়েছেন বিপাকে।

মন্তব্য করুন