বছরের প্রায় দুই মাস পেরোলেও বই না পেয়ে হতাশ শিক্ষার্থীরা
নতুন বছরের এক মাস পাঁচ দিন পর, পটুয়াখালী দশমিনা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১০০% বই পেয়েছে, কিন্তু প্রায় দুই মাস ধরে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ১০০% নতুন বই পাওয়া যায়নি। ৫ ফেব্রুয়ারি উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ১০০% বই বিতরণ করা হলেও, এখনও পর্যন্ত বেশিরভাগ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হাতে বই পৌঁছায়নি। স্কুল ও মাদ্রাসার শিক্ষকসহ হাজার হাজার শিক্ষার্থী এবং অভিভাবক হতাশ। ১০০% বই কখন আসবে তার কোনও নিশ্চয়তা না থাকায় শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকরা চিন্তিত। অনেক শিক্ষার্থী সব বিষয়ের বই না পাওয়ায় বিভিন্ন শ্রেণিতে স্কুলে যেতে চায় না। ফলে পাঠদান মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের তথ্য অনুযায়ী, উপজেলায় ৮টি জুনিয়র স্কুলসহ মোট ৩৩টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এই স্কুলগুলিতে ষষ্ঠ শ্রেণীতে ৩,৬৪৩ জন, সপ্তম শ্রেণীতে ৩,৬৮০ জন, অষ্টম শ্রেণীতে ৩,৩৬০ জন এবং নবম ও দশম শ্রেণীতে ২,৯১৪ জন করে মোট ১৬,৫১১ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। অন্যদিকে, ষষ্ঠ শ্রেণীতে ১৯৪২ জন, সপ্তম শ্রেণীতে ১৯৮৫ জন, অষ্টম শ্রেণীতে ১৮৬৩ জন এবং নবম ও দশম শ্রেণীতে ১৫৮০ জন করে মোট ৮,৯৫০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে।
জানা গেছে, মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলিতে ষষ্ঠ শ্রেণীর জন্য ১৫টি পাঠ্যপুস্তক শিক্ষার্থীদের হাতে দেওয়া হলেও, সপ্তম শ্রেণীর জন্য ১৫টির মধ্যে শিক্ষার্থীরা বাংলা প্রথম পত্র এবং গণিতের পাঠ্যপুস্তক পেয়েছে। বাকি ১৩টি বই এখনও আসেনি। অষ্টম শ্রেণীর জন্য ১৫ জন শিক্ষার্থী বাংলা প্রথম পত্র, ইংরেজি প্রথম পত্র এবং গণিত পেয়েছে, বাকি ১২টি পাঠ্যপুস্তক এখনও আসেনি। নবম শ্রেণীর মানবিক, বিজ্ঞান ও বাণিজ্য শাখার শিক্ষার্থীরা ইংরেজি প্রথম পত্র এবং সাধারণ গণিতের পাঠ্যপুস্তক ছাড়া বাকি বইগুলো পায়নি।
এদিকে, দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা অর্থনীতির পাঠ্যপুস্তক ছাড়া বাকি বইগুলো পেয়েও চরম হতাশা ও উদ্বেগে ভুগছে। তারা অত্যন্ত চিন্তিত যে এসএসসি পরীক্ষার সিলেবাস অনুসারে নবম শ্রেণীতে এক বছর পড়ার পর ওই পাঠ্যপুস্তকগুলো বাতিল হয়ে যাবে। এই শিক্ষার্থীরা দশম শ্রেণীর সংশোধিত পাঠ্যপুস্তকের দুই বছর অধ্যয়ন করে ২০২৬ সালের এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে। তারা এক অজানা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে।
এদিকে, উপজেলার ৫টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে কারিগরি শাখা রয়েছে। স্কুলগুলোর কারিগরি শাখার মোট ৫২০ জন শিক্ষার্থী বিভিন্ন ট্রেডের ৪০ শতাংশ বই পেয়েছে। দশমিনা সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণীর শিক্ষার্থী মুহতাদু মোহাম্মদ রাজিন আমাদের সময়কে বলেন, ফেব্রুয়ারিও আসছে। আমি মাত্র দুটি বই পেয়েছি। এখনও বারোটি পাইনি। আমাদের অনেক সমস্যা হচ্ছে। শিক্ষার দিক থেকে আমরা পিছিয়ে পড়ছি। বেগম আরেফাতুন্নেচ্ছা বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী আফিফা জাহান সায়েদা বলেন, স্যার ও ম্যাডামরা, অনেকেই আমাকে অনলাইনে বই ছাপাতে বলছেন। খরচ অনেক বেশি।
অভিভাবক শারমিন সুলতানা বলেন, আমার ছেলে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। সে দুটি বই পেয়েছে। বইয়ের অভাবে শিশুরা পড়াশোনায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে।
দশমিনা সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষিকা তাহমিনা সুলতানা বলেন, “সকলের কাছে বই না থাকায় ক্লাসে পুরোপুরি পড়ানো সম্ভব নয়। আমরা পিডিএফ থেকে বই দেখে বোর্ডে লিখে শিশুদের পড়ানোর চেষ্টা করি। শিশুরা স্কুলে আসতে অনিচ্ছুক।” উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. সেলিম মিয়া আমাদের সময়কে বলেন, “আশা করি বাকি বইগুলো খুব শীঘ্রই আসবে।”
Do Follow: greenbanglaonline24