• বাংলা
  • English
  • বিবিধ

    ফুটপাত জুড়ে নীরব বোমা

    দেশে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে প্রায়ই হতাহতের ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনায় মারাত্মকভাবে দগ্ধ হয়ে বা আহত হয়ে অনেকেই জীবনের জন্য কাজ করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন। তবুও কেউ ত্রুটিপূর্ণ, নিম্নমানের গ্যাস সিলিন্ডার বা তাদের অপব্যবহার সম্পর্কে অভিশাপ দেয় না। বরং নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছাড়াই রাজধানীজুড়ে ফুটপাতে গ্যাস সিলিন্ডার ও চুলা পাশাপাশি রেখে রান্নার কাজ চালাচ্ছে হোটেল-রেস্তোরাঁগুলো। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গ্যাস সিলিন্ডারের পাশে চুলা রাখলে বিস্ফোরণের আশঙ্কা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। রাজধানীর বিভিন্ন হোটেল-রেস্তোরাঁ ফুটপাতে সিলিন্ডার ও চুলা একসঙ্গে রেখে রান্না করায় তাদের কর্মচারী থেকে শুরু করে রাস্তায় চলাচলকারী সাধারণ মানুষও পড়েছেন ঝুঁকির মধ্যে।

      সম্প্রতি রাজধানীর মোহাম্মদপুর, রায়েরবাজার, আদাবর, মিরপুর, যাত্রাবাড়ী, আজিমপুর, পুরান ঢাকার বেশ কয়েকটি এলাকায় গিয়ে ভুলভাবে গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারের এ চিত্র ব্যাপকভাবে দেখা গেছে। সিলিন্ডার ও চুলা পাশাপাশি রেখে প্রতিদিনের রান্না হয় মোহাম্মদপুরের এলএফসি রেস্টুরেন্টে। বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে এর মালিক দাবি করেন, তারা দীর্ঘদিন ধরে এভাবে কাজ করে আসছেন; কখনো দুর্ঘটনা ঘটেনি। আগুন লাগলে ফায়ার ফাইটিং সিস্টেম আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের ফায়ার ফাইটিং সিস্টেম নেই। এ কথা আগে কেউ বলেনি। পরে তিনি সিলিন্ডারটি চুলা থেকে নিরাপদ দূরত্বে রাখার প্রতিশ্রুতি দেন।

    রায়েরবাজারের সাদেক খান সড়কে দেখা যায়, ভাই ভাই হোটেলে গ্যাস সিলিন্ডার থেকে এক ফুট দূরত্বে চুলায় সিঙ্গারা ভাজছেন এক ব্যক্তি। হোটেলের ক্যাশ কাউন্টারে বসে কর্মীরা। সাব্বিরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তিনি বলেন, ফুটপাতে সিলিন্ডার ও চুলা রাখার বিষয়ে মালিক বলতে পারবেন। তিনি আরও বলেন, তাদের হোটেলে ফায়ার ফাইটিং সিস্টেম নেই। শুধু এ দুটি এলাকা নয়, একই চিত্র দেখা গেছে আশপাশের পাড়া-মহল্লায়ও।

    ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৯ সালে দেশে ১১৮টি গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে ২৫ জন প্রাণ হারিয়েছেন এবং ৬৯ জন আহত হয়েছেন। আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ১২ কোটি টাকার বেশি। পরের বছর দুর্ঘটনার সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৯৫৭। কমপক্ষে ১০ জন প্রাণ হারায়, ১০৭ জন আহত হয়। এতে আর্থিক ক্ষতি প্রায় চার কোটি টাকা। ২০২১ সালে, দেশে ৮৯৪টি সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। ২০২২ সালে, গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে ৩০ জন আহত এবং একজন মারা যান। তবে এসব পরিসংখ্যানে দুর্ঘটনার সংখ্যা বেশি বলে মনে করছেন অনেকে।

    বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সিলিন্ডারের হোস পাইপ, রেগুলেটর, গ্যাস ভালভের মতো গুরুত্বপূর্ণ অংশের ত্রুটির কারণে গ্যাস লিক হয়ে থাকে। এরপরই বিস্ফোরণ ঘটে। এ ছাড়া অনেকে চুলার পাশে রাখলে অতিরিক্ত তাপে সিলিন্ডার গরম হয়ে বিস্ফোরণ ঘটে। ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের সিনিয়র স্টাফ অফিসার শাহজাহান শিকদার বলেন, আমরা সামগ্রিকভাবে অগ্নি নিরাপত্তা বিষয়ে সচেতনতামূলক কর্মসূচি পালন করি। তবে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বিচ্ছিন্ন ছোট দোকানগুলো শহরের অনুমোদন নেয়। কর্পোরেশন। একটি সংস্থা সারা বছর কতটা দাহ্য পদার্থ রাখতে পারে সে বিষয়ে ফায়ার সার্ভিসের অনুমোদন প্রয়োজন। কিন্তু এই দোকানগুলি কভার করা হয় না। তারপরও আমরা প্রত্যেককে অগ্নি নিরাপত্তার পরামর্শ দিই। আমরা সব দোকান বা প্রতিষ্ঠানকে সর্বদা অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র রাখতে বলি। এছাড়াও। , আমরা চুলা জ্বালানোর সময় সিলিন্ডার দূরে রাখার পরামর্শ দিই। একই সময়ে, বিস্ফোরণ দূর করতে মানসম্পন্ন সিলিন্ডার ব্যবহার করার কথা বলা যাক।