• বাংলা
  • English
  • বিবিধ

    ফসল ধ্বংস হচ্ছে, ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা

    ফরিদপুরে সালতা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) আওতায় দুটি খালের পুনর্বাসন কাজ শুরু হয়েছে। খননকারীরা খাল খনন করছে এবং স্থানীয়দের ফসলের জমিতে মাটি ফেলে দিচ্ছে। কৃষকরা অভিযোগ করেছেন যে এর কারণে পাট ও অন্যান্য ফসলের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। খাল পুনঃখনন খননের কাজের মানের ক্ষেত্রেও অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে।

    জানা গেছে, শুকনো মৌসুমে খালে পানি সংরক্ষণ এবং কৃষিজমি জমি সেচ দেওয়ার জন্য দক্ষিণ-পশ্চিম সমন্বিত পানি ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের আওতায় পাউবোর উদ্যোগে ২৯ শে এপ্রিল এই দুটি খালের পুনঃখনন শুরু হয়। বালিদিয়া নদী থেকে সলতা উপজেলার গোটি ইউনিয়নের সিংহা প্রতাপ অঞ্চল দিয়ে প্রবাহিত এক হাজার ১৫ মিটার দৈর্ঘ্যের রাজবাড়ী খাল এবং মোড়হাট অঞ্চল দিয়ে দিঘের বিলে প্রবাহিত কুমার নদী থেকে ১,২৫০ মিটার দীর্ঘ কেশবখালী খাল খননের কাজ চলছে। খনন কাজটি মেসাররা পরিচালনা করছেন কুটলার, কুমিল্লার সারা এন্টারপ্রাইজ।

    স্থানীয় ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাজাখালী ও কেশখালী খালের খনন কাজ দুটি খননকারীর মাধ্যমে চলছে। রবিবার বিকেলে কর্মক্ষেত্রে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোনও ঠিকাদার বা তদারককারীকে দেখা যায়নি।

    উভয় খালের উভয় তীরে বসবাসকারী বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন, ঠিকাদারের কাজ খালের মাটি সাঁকো দিয়ে পাট, বেগুন ও মরিচ সহ বিভিন্ন ফসলের মারাত্মক ক্ষতি করছে। খালের পাড় খুব খাড়াভাবে কেটে গেছে। খননের শুরুতে খালের তীরে এলোমেলোভাবে মাটি রাখা হচ্ছে। সামান্য বৃষ্টিতে মাটি ধসে আবার খালে যায়। পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকেরা সঠিক সময়ে এটি পরিদর্শন করছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে।

    স্থানীয় গুটি ইউনিয়নের কৌলিকান্দা গ্রামের কৃষক এস্কেন মাতুব্বর জানান, কেশখালী খালের তীরে কৃষকদের ২০ বিঘা জমি রয়েছে। এর মধ্যে পাট খালের কাটা মাটির কারণে দশ বিঘা জমি ধ্বংস হয়ে গেছে।

    সদস্য গোটি গ্রামের বাসিন্দা মো. ওয়া হিদুজ্জামান জানান, তাঁর দুই বিঘা ফসল কেশতখালী খালের নীচে সমাহিত করা হয়েছে। তিনি জানান, এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তিনি সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, কেশতখালী খালের মাটি

    এলাকার কমপক্ষে দশ বিঘা জমি ফসল রক্ষার জন্য ধ্বংস করা হয়েছে।

    একই অভিযোগ এসেছিল রাজাবাড়ী খাল খনন এলাকার বাসিন্দাদের কাছ থেকে। সিং প্রতাপ গ্রামের কৃষক আবদুর রহিম জানান, রাজাবাড়ী খালের মাটির কারণে তাঁর ১৪ কাঠা জমিতে বেগুন পিষ্ট হয়েছে। তিনি জানান, খালের মাটি ধরে রাখতে এলাকার কমপক্ষে আট বিঘা জমি ধ্বংস হয়ে গেছে।

    দুটি খালের খনন কাজ বাস্তবায়নকারী ঠিকাদার জাকির হোসেন জানান, তফসিল অনুযায়ী খালের গভীরতা শতভাগ বাস্তবায়িত হচ্ছে। তবে খাল বরাবর কয়েকটি অঞ্চল ব্যক্তিগত মালিকানাধীন হওয়ার কারণে নির্ধারিত আকারে প্রশস্ত করা যায়নি। কিছু জায়গায় কম কিছু করতে হয়েছিল। তিনি বলেন, পানি বোর্ড টাস্ক ফোর্স কাজটির তদারকি করে। আমি শতভাগ কাজ করি কিন্তু তারা ৯৫ শতাংশের বেশি দেয় না। ঠিকাদার জাকির হোসেন বলেন, “আমি ব্যবসায়ের দিকে নজর দিইনি, আমি জোর দিয়েছিলাম এবং অন্য কাউকেও কাজ নিতে দেব না। আমি এই মনোভাব নিয়ে কাজ করেছি।” খালের মাটির কারণে ফসলের ক্ষয়ক্ষতির সাথে আমাদের কিছু করার নেই। কারণ এই খাতে অর্থ বরাদ্দ নেই। তাই আমার কিছু করার নেই।

    পাউবোর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আতানু প্রামানিক জানান, পাউবো যে কাজ তদারকি করছেন না তা অভিযোগ সত্য নয়। তিনি নিজে, নির্বাহী প্রকৌশলী সুলতান মাহমুদ এবং পাউবো কর্মকর্তারা কাজটি তদারকি করছেন। তিনি বলেন যে তারা স্পষ্টতই অনুভব করেছেন যে খালের দৈর্ঘ্য, প্রস্থ এবং গভীরতা সঠিকভাবে করা হচ্ছে। তবে বিল দেওয়ার আগে সময়সূচি অনুযায়ী কাজটি বোঝা যাবে। কাজটি তফসিল অনুযায়ী না হলে বিল প্রদান করা হবে না। তিনি বলেনযে খালের পাড়টি আরও খাড়াভাবে কাটা হয়েছে এবং এটি নিজের মতো অনুভূত হয়েছে। তিনি বলেন, খালের মাটি সংলগ্ন জমিতে রাখতে হবে। তবে জমির পরিমাণ কম থাকায় আমরা ইউএনওর কাছে জমি ইজারা দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করি নি।

    মন্তব্য করুন