জাতীয়

প্রায় দুই বছরে রেলে কাটা পড়ে ৫২২ জনের মৃত্যু

বাংলাদেশ রেলওয়ের ঢাকা জোনের বিভিন্ন রেললাইন থেকে প্রায় দুই বছরে ট্রেনে কাটা পড়ে নিহত ৫২২ জনের মরদেহ উদ্ধার করেছে রেলওয়ে পুলিশ। ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরের মধ্যে এই মৃতদেহগুলি উদ্ধার করা হয়েছিল। সে অনুযায়ী, সেই সময়ে প্রতি মাসে গড়ে ২২টি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছিল। রেলওয়ে পুলিশ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

অপরাধ বিশ্লেষকরা পথচারীদের অসাবধানতার কারণে মৃত্যুকে দায়ী করেছেন। এর পাশাপাশি রেলওয়েতে যথাযথ নিরাপত্তার অভাব রয়েছে। পুলিশি তদন্তে এসব মৃত্যুর পেছনে আইন না মানা ও সচেতনতার অভাবের বিষয়টি উঠে এসেছে। এসব দুর্ঘটনা রোধে সচেতনতার পাশাপাশি রেলওয়ে আইনের যথাযথ প্রয়োগের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন বিশ্লেষকরা।

তদন্তে রেলওয়ে পুলিশ বলেছে, ট্র্যাক পার হওয়ার সময় বা হাঁটার সময় মোবাইল ফোন ও ইয়ারফোন ব্যবহার করা, ট্র্যাকের ওপর দিয়ে অসাবধানে হাঁটা, ট্র্যাকের পাশে নিরাপদ দূরত্ব না রেখে ভ্রমণ করা, না দেখেই তাড়াহুড়ো করে লেভেল ক্রসিং পার হওয়া ইত্যাদি। যখন একটি চলন্ত ট্রেন এগিয়ে আসছে। সেলফি তোলার চেষ্টা, রেললাইনে বসে কথা বলার কারণে এসব মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। এ ছাড়া চলন্ত ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে।

রেলওয়ে পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা জোনের রেলওয়ে থানাধীন পাঁচটি ফাঁড়ি এলাকা থেকে গত বছর ২৮৭টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এই ফাঁড়িগুলো হলো টাঙ্গাইল, টঙ্গী, জয়দেবপুর, বিমানবন্দর ও নারায়ণগঞ্জ।

এর মধ্যে বেশিরভাগ মৃত্যু হেডফোন বা ইয়ারফোন লাগিয়ে রেলপথের উপর দিয়ে হাঁটার সময় ঘটে। গত বছর এ কারণে ৯৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে কমলাপুর রেলওয়ে থানার ওসি ফেরদৌস আলম বিশ্বাস বলেন, ট্রেনে কাটা পড়ে মৃত্যুর অন্যতম কারণ মানুষের অসচেতনতা। তদন্তে এর বাইরে আরও কিছু কারণ পাওয়া গেছে। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা নিয়মিত ঢাকা থেকে টাঙ্গাইল বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত রেল লাইন মনিটরিং করি।

চলতি বছর এ পর্যন্ত এসব এলাকায় ট্রেন থেকে ২৩৫টি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। আগের বছর ২০২২ সালে ট্রেন থেকে ২৮৭টি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছিল।

ওসি বলেন, এসব দুর্ঘটনা রোধে প্রতিবছর বিভিন্ন সুপারিশ করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়। সুপারিশগুলির মধ্যে রেললাইনগুলিকে রাস্তা বা ফুটপাথ হিসাবে ব্যবহার না করা নিশ্চিত করা অন্তর্ভুক্ত; রেললাইনের আশেপাশের বস্তি অপসারণের পাশাপাশি অনৈতিক কর্মকাণ্ড রোধে ব্যবস্থা নেওয়া।

তিনি বলেন, কর্তৃপক্ষ প্রতিনিয়ত সাধারণ মানুষকে সচেতনতামূলক বার্তা দিলেও অনেকে তা আমলে নেয় না। বিশেষ করে রেললাইন সংলগ্ন জমি দখল করে কাঁচাবাজার বসিয়ে অবৈধ রাস্তা তৈরি করে রেললাইনের কাছে চলাচল করা হচ্ছে। এ কারণে দুর্ঘটনাও ঘটছে। তাই শুধু আইন দিয়ে নয়, সাধারণ মানুষ সচেতন হলে এ ধরনের মর্মান্তিক মৃত্যু কমানো সম্ভব।

বিদ্যমান রেলওয়ে আইন অনুযায়ী, রেলপথে হাঁটা বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। শুধু লাইন নয়, লাইনের উভয় পাশে (১০ ফুটের দৈর্ঘ্য) ১৪৪ ধারা সর্বদা বলবৎ রয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মহাখালী ও মগবাজার, লেভেল ক্রসিংয়ের দুই পাশের মানুষ আড্ডা ছাড়াও নানা কাজে ব্যস্ত। রেললাইনের ওপর দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় কেউ কেউ মোবাইল ফোনে কথা বলছেন, আশপাশের দিকে নজর না দিয়ে। রেললাইনে বসে চা-পান-সিগারেট বিক্রি করছেন দু-চারজন ভ্রমণকারী বিক্রেতা। রেললাইনের আশপাশেও মাদক কারবার ও সেবনের দৃশ্য দেখা যায়। এ ছাড়া রেললাইন দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন অনেকে। ট্রেনের সিগন্যাল বেজে উঠলেও কাউকে এতটা সতর্ক হতে দেখা যায়নি। এমনকি ট্রেন খুব কাছে গেলেও কিছু লোককে ট্র্যাক পেরিয়ে দৌড়াতে দেখা যায়।

এ বিষয়ে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না জানতে চাইলে মেট্রোপলিটন পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) এইচএম আজিমুল হক বলেন, মাদক নিয়ন্ত্রণে এলাকায় পুলিশ নজরদারি করছে। এর আগেও মাদক বিক্রির অভিযোগে অনেক বিক্রেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা জামিনে বেরিয়ে যায়।