• বাংলা
  • English
  • শিক্ষা

    প্রাথমিক শিক্ষক, প্রশিক্ষকদের ধীর পদোন্নতির আশঙ্কা

    প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের কর্মচারী নিয়োগের নতুন নিয়মে শিক্ষক ও প্রশিক্ষকদের পদোন্নতি বিলম্বের পাশাপাশি জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘনের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এতে কর্মক্ষেত্রে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে বলে মনে করেন তারা।

    ১৩ সেপ্টেম্বর, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ‘প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (কর্মচারী) নিয়োগ বিধিমালা-২০২৩ এর গ্যাজেট প্রকাশ করেছে। নিয়ম অনুযায়ী, সহকারী উপজেলা বা থানা শিক্ষা কর্মকর্তা পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে বিভাগীয় প্রার্থীদের জন্য ৮০ শতাংশ পদ সংরক্ষিত থাকবে।

    প্রার্থীদের বয়সসীমা ৪৫বছর হবে। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের উপজেলা বা থানা শিক্ষা অফিসার পদে নিয়োগের জন্য ন্যূনতম ১০ বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা নির্ধারণ করা হয়েছে।

    নিয়ম অনুযায়ী, প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট ইন্সট্রাক্টর (পিটিআই ইন্সট্রাক্টর) পদের ৩৫ শতাংশ পিটিআই শিক্ষক ও সহকারী প্রশিক্ষক (উপজেলা বা থানা রিসোর্স সেন্টার) এবং গবেষণা সহকারী পদ থেকে পদোন্নতির মাধ্যমে নিয়োগ করা হবে। পদোন্নতির জন্য সমন্বিত ব্যবস্থার পরিবর্তে আনুপাতিক পদ্ধতির সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্ত্রণালয়।

    সহকারী শিক্ষক ও পিটিআই প্রশিক্ষকরা তাদের হতাশা প্রকাশ করেছেন।

    তারা বলছেন, এ ধরনের সিদ্ধান্তের ফলে সহকারী শিক্ষকদের উচ্চতর গ্রেডে পদোন্নতি ধীরগতির এবং পিটিআই প্রশিক্ষকদের জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘনের আশঙ্কা রয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কয়েকজন সহকারী শিক্ষক বলেন, একজন শিক্ষক ৩০ বছর বয়সে চাকরিতে যোগদানের ১০ বছর পর উচ্চ পদে আবেদন করতে পারবেন। এতে পরবর্তী ধাপে পদোন্নতির প্রক্রিয়া ধীর হয়ে যাবে।

    পদায়নে এই ধীরগতি থাকলে মেধাবীরা শিক্ষকতা পেশা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারেন। মানসম্পন্ন প্রাথমিক শিক্ষা হুমকির মুখে পড়বে।

    প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক দশম শ্রেণি বাস্তবায়ন সমন্বয় পরিষদের সমন্বয়ক মু. মাহবুবুর রহমান বলেন, সহকারী উপজেলা বা থানা শিক্ষা কর্মকর্তা পদে সহকারী শিক্ষকদের জন্য তিন বছরের অভিজ্ঞতা প্রয়োজন। নতুন-পুরনো সব শিক্ষকই বিভাগীয় পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পাবেন।

    মাঠ কর্মকর্তারা অভিযোগ করেছেন যে নতুন নিয়ম অনেক ক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করবে, বিশেষ করে পিটিআই প্রশিক্ষকদের জন্য।

    সমন্বিত পদোন্নতির পরিবর্তে আনুপাতিক পদোন্নতির শর্তের কারণে, অনেক কর্মচারী জুনিয়রদের অধীনে কাজ করতে বাধ্য হতে পারে, যা অবমাননাকর।

    নাম প্রকাশ না করার শর্তে পিটিআইয়ের একজন প্রশিক্ষক বলেন, “পিটিআই সুপারিনটেনডেন্ট পদে পদোন্নতির জন্য ন্যূনতম দুই বছর। দুই বছরের অভিজ্ঞতা সহ একজন জুনিয়র পিটিআইকে পিটিআই-এর সুপারিনটেনডেন্ট পদে উন্নীত করা যেতে পারে যদি তাকে সমন্বিত ভিত্তিতে না করে আনুপাতিক ভিত্তিতে পদোন্নতি দেওয়া হয়। তারপর দুজনেই একই জায়গায় কাজ করলে আমাকে আমার জুনিয়রের অধীনে কাজ করতে হবে। চাকরির ক্ষেত্রে এটা বেশ অসম্মানজনক। আবার দুজন পদোন্নতি পেলেও একই পদে কাজ করতে হবে, যা জনপ্রশাসনে জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণের নিয়মের পরিপন্থী।

    সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাদ্রাসা সুপারদের ক্ষেত্রেও জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন হবে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসাররা সুপারিনটেনডেন্টদের থেকে ১৫ বছরের জুনিয়র। তবে উভয় পদ থেকে উপ-পরিচালক পদে আনুপাতিক হারে পদোন্নতি দেওয়া হবে। ১৫ বছরের জুনিয়র শিক্ষা অফিসাররা সুপারের উপরে জ্যেষ্ঠতায় পদোন্নতি পাবেন। যারা সুপার পদোন্নতি পাবেন না, তাদের এই জুনিয়র শিক্ষা কর্মকর্তাদের অধীনে কাজ করতে হবে।

    প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহমেদ বলেন, প্রায় ২৩ ধরনের স্টেকহোল্ডার রয়েছে, তাই নিয়ম নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া থাকা স্বাভাবিক। প্রতিটি স্টেকহোল্ডার কেবল তাদের নিজস্ব স্বার্থ দেখবে। সরকার এমনভাবে নিয়ম করেছে যাতে সবার স্বার্থ রক্ষায় ভারসাম্য রক্ষা করা যায়। যৌক্তিকতা ও সরকারী বিধি মোতাবেক ভারসাম্য রেখে নিয়ম করা হয়েছে। এখানে কোনো বৈষম্য বা পক্ষপাতিত্ব নেই।

    সচিব বলেন, জনপ্রশাসন, অর্থ মন্ত্রণালয়, মন্ত্রিপরিষদ ও আইন মন্ত্রণালয়- এই চারটি মন্ত্রণালয় যাচাই-বাছাই করে বিধিমালা চূড়ান্ত করা হয়েছে। পরে প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি অনুমোদন দেন।

    বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা ও গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, প্রাথমিক শিক্ষা এখনো স্বতন্ত্র হয়নি। দেশে যতগুলো মন্ত্রণালয় আছে, সব মন্ত্রণালয়েই ক্যাডার সার্ভিস আছে, শুধু প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়েই নেই।

    ক্যাডার সার্ভিসের অভাবে অসুবিধার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, তৃণমূল থেকে উচ্চপর্যায়ে কেউ যেতে না পারায় প্রাথমিক শিক্ষা দক্ষভাবে পরিচালিত হচ্ছে না। অভিজ্ঞতা ছাড়াই প্রশাসনিক কর্মকর্তারা শীর্ষ পদে এসে প্রাথমিক শিক্ষার ব্যবস্থাপনা করেছেন। এ কারণে বৃত্তি পরীক্ষাসহ নানা সিদ্ধান্তে হোঁচট খায়।