শিক্ষা

প্রাথমিকে হঠাৎ করেই বৃত্তি পরীক্ষা দেওয়ার সিদ্ধান্ত

হঠাৎ করেই প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ বছর পঞ্চম শ্রেণির মাত্র ১০ শতাংশ শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিতে পারবে। চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে এই পরীক্ষা নেওয়া হবে বলে জানা গেছে। গত ১ ডিসেম্বর এ সংক্রান্ত আদেশ জারি করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।

তবে ডিসেম্বরে পুরো বছর নীরব থাকার সিদ্ধান্তে হতবাক অভিভাবক ও শিক্ষকরা। তারা বলছেন, বৃত্তি পরীক্ষা নেওয়া হলে সাধারণত বছরের শুরুতেই সিদ্ধান্ত শিক্ষার্থীদের জানিয়ে দেওয়া হয়। সেভাবেই তারা প্রস্তুতি নেয়। এতদিন প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা নেওয়া হতো, তাই আলাদা কোনো বৃত্তি পরীক্ষা হতো না। করোনা মহামারীর কারণে গত দুই বছর এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। এ বছর আর নেওয়া হবে না বলে আগেই জানানো হয়েছে। তাই শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি নেই।

তারা জানান, মাধ্যমিক সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হওয়ার সময়ে এই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়েছে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে।

সারা দেশে ৬৫,৬২০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। তাদের মধ্যে ১ কোটি ৪১ লাখ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। এ ছাড়া প্রাথমিক শাখার সঙ্গে যুক্ত রয়েছে প্রচুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়। সেখানে শিক্ষার্থীর সংখ্যাও কম নয়। জানা গেছে, এ বছর সব বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩২ লাখের কাছাকাছি। সে অনুযায়ী ১০ শতাংশ শিক্ষার্থী হবে অন্তত ৩ লাখ ২০ হাজার মানুষ।

রাজধানীর দুটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, গত ১ ডিসেম্বর (বৃহস্পতিবার) বিকেলে এ আদেশ জারি করা হয়। থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের কাছ থেকে আদেশের খবর শুনেছি। রোববারের আগে শিক্ষার্থীদের জানানোর সুযোগ নেই। এরপর শিক্ষাবর্ষের ২৭ দিন বাকি। শিক্ষার্থীরা কখন বৃত্তি পরীক্ষার জন্য আলাদাভাবে প্রস্তুতি নেবে?

রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহাদাত শাকিল জানান, তারা থানা শিক্ষা অফিস থেকে বৃত্তি পরীক্ষার আদেশ পেয়েছেন। বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ও ১০ শতাংশ শিক্ষার্থী জানতে চাওয়া হয়েছে। এর বেশি কিছু এখনো জানা যায়নি।

রাজধানীর গেন্ডারিয়া মহিলা সমিতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রিয়াজ পারভেজ বলেন, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রকাশিত রুটিন অনুযায়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বার্ষিক পরীক্ষা ৮ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়ে শেষ হবে ১৯ তারিখে। এই পরীক্ষা শেষ হওয়ার সাত দিনের মধ্যে শিক্ষার্থীদের বৃত্তি পরীক্ষায় পুনরায় বসতে হবে। শিক্ষকদেরও এতে ফল দিতে হবে। আবার বৃত্তি পরীক্ষা দিতে হবে। শিক্ষার্থীদের আর ক্লাস নেই। দুই মাস আগেও যদি আমাদের জানানো হতো, তাহলে আমরা শিক্ষার্থীদের প্রস্তুত করতে পারতাম।

বছর শেষে এত তাড়াহুড়ো করে বৃত্তি পরীক্ষা নেওয়ার যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অভিভাবকরা। আদাবরের বড় মোহনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র আমিনুর রশিদের মা রায়হানা বেগম জানান, বিদ্যালয়ের বার্ষিক পরীক্ষার পর শিক্ষার্থীদের পরিবার নিয়ে গ্রামে বা বিভিন্ন জায়গায় বেড়াতে নিয়ে যাওয়া হয়। এবার তারা বৃত্তি পরীক্ষার কারণে আটকে গেছে।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রিজওয়ান হায়াৎ শনিবার বলেন, গরমের মধ্যেও বার্ষিক পরীক্ষার পর তাদের জন্য বৃত্তি পরীক্ষা করানো ভালো। তাদের পড়াশোনা।” নানীর বাড়ি থেকে বের হলে গরম আর থাকবে না। এত দেরিতে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, নতুন কিছু হয়নি, আগে এভাবেই বৃত্তি পরীক্ষা নেওয়া হতো।

সব শিক্ষার্থীর পরিবর্তে মাত্র ১০ শতাংশ শিক্ষার্থীকে বৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দিলে কোনো বৈষম্য হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ধারাবাহিক মূল্যায়নের ভিত্তিতে শিক্ষকরা সিদ্ধান্ত নেবেন কারা বৃত্তি পরীক্ষা দেবে। সারা বছর ক্লাসরুম এবং বার্ষিক পরীক্ষা। এটা মূল্যায়ন, তাই বৈষম্যের প্রশ্নই ওঠে না। আর আগে এরকমই হতো।

১ ডিসেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে একটি চিঠিতে, সমস্ত জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছিল যে প্রাথমিক শিক্ষা শেষে মেধা বৃত্তি প্রদানের জন্য ২৮ নভেম্বর একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সভায় বর্তমান নিয়ম ও পদ্ধতিতে প্রাথমিক বৃত্তি অব্যাহত থাকবে বলে সিদ্ধান্ত হয়। এই বৃত্তি পরীক্ষা ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হবে। প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা প্রতিটি উপজেলা সদরে অনুষ্ঠিত হবে।

প্রাথমিক শিক্ষকরা বলছেন, আরও এক মাসের মধ্যে আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে তিনটি শ্রেণিতে নতুন পাঠ্যক্রম চালু করা হবে।

মন্তব্য করুন