জাতীয়

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মার্কিন নিরাপত্তা উপদেষ্টা সুলিভানের বৈঠক, আলোচনা

যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান ওয়াশিংটন ডিসিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। গত মঙ্গলবার রাতে ওয়াশিংটনে জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে এ তথ্য জানানো হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে গত ২৭ সেপ্টেম্বর ওয়াশিংটন ডিসিতে বাংলাদেশ দূতাবাস পরিদর্শন করেন। সেখানে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা।

ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাস, ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বা মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর ওই বৈঠকের বিষয়ে কিছু জানায়নি। গত মঙ্গলবার রাতে ওয়াশিংটনে ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের ব্রিফিংয়ে একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন এবং বলেন যে জ্যাক সুলিভান গত সপ্তাহে দক্ষিণ এশিয়ার দুই নেতার সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে।

অপর বৈঠকটি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে। ভারতের সঙ্গে বৈঠকে কানাডা ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়েছে কিনা জানতে চান এই সাংবাদিক। তিনি আরও জানতে চান, কানাডার সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে ভারতের ব্যাখ্যায় যুক্তরাষ্ট্র সন্তুষ্ট কিনা? পরিস্থিতি শান্ত করতে যুক্তরাষ্ট্র কি কোনো ভূমিকা রাখতে পারে?

জবাবে, মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের কৌশলগত যোগাযোগের পরিচালক জন কিরবি বলেছেন, “এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।” দুই দেশের সম্পর্ক নিয়ে কথা বলার বিষয়টি তাদের ওপর ছেড়ে দিয়েছি।

আমাদের অবস্থান পরিষ্কার। এসব অভিযোগ গুরুতর। তাদের পূর্ণ তদন্ত প্রয়োজন। আমরা আগেই বলেছি, ভারতকে তদন্তে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণের আহ্বান জানাতে হবে।

তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের সম্পর্ক এখন কেমন? গত মাসে প্রেসিডেন্ট বাইডেনও নয়াদিল্লিতে শেখ হাসিনার সঙ্গে আলাদাভাবে কথা বলেছেন। তিনি জানতে চান নির্বাচন ও রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়েছে কি না। জবাবে জন কিরবি বলেন, ‘তারা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের গুরুত্ব নিয়ে কথা বলেছেন। তারা জলবায়ু পরিবর্তনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নের গুরুত্ব নিয়েও আলোচনা করেছেন।

জন কিরবি এখানে শেখ হাসিনা-জো বাইডেন নাকি শেখ হাসিনা-জ্যাক সুলিভানের কথা বলছেন তা স্পষ্ট নয়। প্রথম প্রশ্নটি শেখ হাসিনা-জ্যাক সুলিভানকে নিয়ে হলেও উত্তর দিয়েছেন জন কিরবি শুধু ভারত সম্পর্কে। পরের প্রশ্নে শেখ হাসিনা-জো বিডেনের নয়াদিল্লি আলোচনার প্রসঙ্গ ওঠে। তবে উত্তর দেওয়ার সময় জন কিরবি কোন বৈঠকের কথা উল্লেখ করেছিলেন তা স্পষ্ট নয়।

৯ সেপ্টেম্বর নয়াদিল্লিতে জি-২০ সম্মেলনের ফাঁকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদের সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সেলফি তোলার ছবি মিডিয়ার শিরোনাম হয়েছে। এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন তখন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে জো বাইডেনের সেলফি এবং অত্যন্ত উষ্ণ ও সৌহার্দ্যপূর্ণ কথোপকথন ঢাকা ও ওয়াশিংটনের মধ্যে গভীর সুসম্পর্কের প্রতিফলন ঘটায়।

মোমেন বলেন, বাংলাদেশের মানুষকে সুন্দর ও মর্যাদাপূর্ণ জীবন দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মার্কিন প্রেসিডেন্টকে তার বিভিন্ন উদ্যোগের কথা জানিয়েছেন। এ সময় শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

আসন্ন নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করতে বাংলাদেশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিঙ্কেন ২৩ মে বাংলাদেশের জন্য ভিসা নীতি ঘোষণা করেন। এর ফলে, যুক্তরাষ্ট্র গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টিকারী বাংলাদেশিদের চিহ্নিত করতে এবং তাদের উপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করতে সক্ষম হবে। ২২শে সেপ্টেম্বর, মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর বলেছে যে তারা বাংলাদেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, ক্ষমতাসীন দল এবং বিরোধী দলের কিছু সদস্যের উপর ভিসা নীতি প্রয়োগ করা শুরু করেছে। ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস জানিয়েছে, ভিসা নিষেধাজ্ঞার কারণে ক্ষতিগ্রস্তদের নাম প্রকাশ করা হবে না। গত ২২ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে এক সংবাদ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি বাস্তবায়ন নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ভিসা নীতি নিয়ে বাংলাদেশের ভয়ের কিছু নেই। এদিন প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘দেশের বাইরে থেকে নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করা উচিত নয়। এটা হলে বাংলাদেশের জনগণ তাদের ‘নিষেধাজ্ঞা’ দেবে (যারা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে)।

যারা নিষিদ্ধ করবে, তাদের বিরুদ্ধেও নিষেধাজ্ঞা জারি করব: মোমেন

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সফর শেষে বুধবার ঢাকায় ফিরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, গত মাসে দিল্লিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর আলাপ হয়। প্রধানমন্ত্রীর যুক্তরাষ্ট্র সফরে মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গেও কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। যুক্তরাষ্ট্র চায় অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। বাংলাদেশও চায়।