প্রতারকদের হাতে কাস্টমস কর্মকর্তার পাসওয়ার্ড
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস প্রতি বছর দেশের কোষাগারে প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব দেয়। তারা চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি পণ্যের ওপর শুল্ক দিয়ে থাকে। কিন্তু এত গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের সার্ভার অরক্ষিত। জালিয়াতি চক্রটি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সার্ভার হ্যাক করে একের পর এক চালান ক্লিয়ার করছে। তারা স্ক্যানার রিপোর্টে মিথ্যাচার করছে। কাস্টমস নথি জাল করা। সার্ভারে প্রবেশের আগেই কাস্টমস কর্মকর্তার গোপন পাসওয়ার্ড জেনে নিচ্ছেন তারা। জালিয়াতি করে উদ্ধার করা হয়েছে মদের শেষ দুটি পাত্র। তারা এই চালান ক্লিয়ার করতে চট্টগ্রাম কাস্টমস ইপিজেড শাখার রাজস্ব কর্মকর্তা (আরও) নাছির উদ্দিনের আইডি ব্যবহার করে।
এর আগেও শুল্ক কর্মকর্তার পাসওয়ার্ড জেনে প্রতারক চক্র কয়েকবার সার্ভারে ঢুকে কয়েকশ কোটি টাকার মালামাল খালাস করেছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক প্রতিবেদনে এনবিআরের সার্ভারে অনুপ্রবেশ করে অবৈধভাবে পণ্য খালাস জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি বলে মন্তব্য করা হয়েছে। এ ধরনের ঘটনায় অস্ত্র, বিস্ফোরক, গোলাবারুদের মতো পণ্য দেশে এলে তা রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে বলেও সতর্ক করা হয়। এসব অপকর্মের সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিত করতে বলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। তা সত্ত্বেও এমন ঘটনা বারবার ঘটছে। বিভিন্ন সময়ে অবৈধ পণ্য খালাসের তদন্তে চট্টগ্রাম বন্দর ও কাস্টমস কর্মকর্তা, আমদানিকারক ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের যোগসাজশের প্রমাণ পাওয়া গেলেও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। শাস্তি শুধু কর্মকর্তাদের বদলির মধ্যেই সীমাবদ্ধ।
সর্বশেষ ঘটনায় জাল কাগজপত্র দেখিয়ে বন্দরের ১ নম্বর গেট দিয়ে দুটি মদের কন্টেইনার বের করা হয়েছে। গত শনিবার নারায়ণগঞ্জে তাদের আটক করে র্যাব। এ বিষয়ে চলতি সপ্তাহে তিন দিনে মদ ভর্তি পাঁচটি কন্টেইনার জব্দ করা হয়েছে। এসবে প্রায় ৮৫ হাজার লিটার মদ ছিল।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কাস্টমস কমিশনার মো. ফখরুল আলম বলেন, ‘যে কোনো দুর্নীতি-অনিয়মের বিরুদ্ধে আমরা সোচ্চার। প্রতারক চক্র প্রতিনিয়ত কৌশল পরিবর্তন করছে। আমরা সতর্ক থাকায় তিন দিনে পাঁচ কনটেইনার মদ আটক করতে পেরেছি।’ চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের যুগ্ম কমিশনার মো. সালাহউদ্দিন রেজভী বলেন, ‘প্রতারক চক্র সবসময় সক্রিয়। তারাও কৌশল পরিবর্তন করছে। এবার জব্দ করা কিছু মদের চালান সন্দেহভাজন হওয়ায় ইতিমধ্যেই তালাবদ্ধ ছিল।’
রাজস্ব ফাঁকির লক্ষ্য ছিল ৮০ কোটি টাকা : এবার মদের চালান এনে প্রায় ৮০ কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করেছে প্রতারক চক্র। নগরীর ডাবলমুরিং থানার ৬৯৯, কেবি দোবাস লেন, গোসাইলডাঙ্গার ‘জাফর আহমেদ’ নামের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট পণ্য খালাসের দায়িত্বে রয়েছেন। এর মালিক জাফর আহমেদ, শামীম ও রায়হান নামে তিনজন। এসব কনটেইনার মুন্সীগঞ্জের আজিজুল ইসলাম, তার বড় ছেলে মিজানুর রহমান আশিক ও ছোট ছেলে আহাদকে পাঠানোর কথা ছিল। র্যাব আহাদকে গ্রেপ্তার করতে পারলেও আজিজ ও আশিক পলাতক রয়েছে।
ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করা হয়: পোশাক পণ্য সরবরাহের ঘোষণা দিয়ে মদ খালাসের চেষ্টা করা হয়। এর মধ্যে ঈশ্বরদী ইপিজেডের বিএইচকে টেক্সটাইল মিলস লিমিটেডের নামে একটি, কুমিল্লা ইপিজেডে হাসি টাইগার কোম্পানি লিমিটেডের নামে একটি, নীলফামারী উত্তরা ইপিজেডে ডং জিন ইন্ডাস্ট্রিয়াল (বিডি) কোম্পানি লিমিটেডের নামে দুটি এবং একটি। বাগেরহাটের মংলা ইপিজেডে ভিআইপি ইন্ডাস্ট্রিজ বাংলাদেশ প্রাইভেট লিমিটেডের নামে গার্মেন্ট পণ্যের পরিবর্তে চীন থেকে আনা হয়েছে। মদের বোতল। জানা গেছে, ঈশ্বরদী ও কুমিল্লা ইপিজেড দুটি প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব নেই। নীলফামারী ও বাগেরহাটে দুটি প্রতিষ্ঠানের ঠিকানাও ভুয়া।