• বাংলা
  • English
  • জাতীয়

    পেঁয়াজের বাজারে ফের ‘সেপ্টেম্বর আছর’

    দেশে উৎপাদন বাড়লেও চাহিদা মেটাতে প্রতিবছরই পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়। বেশির ভাগ আমদানি ভারত থেকে। তাই ভারতে রপ্তানি বন্ধ, দাম বৃদ্ধি বা শুল্ক আরোপের জন্য এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে তা অবিলম্বে দেশটিতে প্রভাব ফেলে। চার বছর ধরে এর প্রভাবে দেশের ভোক্তাদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে, বিশেষ করে সেপ্টেম্বর মাস এলে এমন পরিস্থিতি বেশি দেখা যায়।

    ভারত পেঁয়াজ রপ্তানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করায় দেশে প্রতি কেজির দাম একদিনে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। তাই সেপ্টেম্বরে আবারও ভোগান্তির শিকার হবেন কিনা তা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে ক্রেতাদের মধ্যে।

    অনেকে বলছেন, কয়েক বছর ধরে এ সময়ে পেঁয়াজের সংকট থাকে। তাই সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরের আগে থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া দরকার ছিল। বিশেষ করে স্টক বাড়ানোর ব্যবস্থা করা। কারণ, দাম বাড়ার পর বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করলেও আর বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না।

    তবে সরকারি কর্মকর্তাদের দাবি, ভারতে শুল্ক আরোপের কারণে দেশের বাজারে দামের কোনো প্রভাব পড়বে না। দাম বাড়লেও বাজার স্থিতিশীল রাখতে টিসিবির মাধ্যমে পেঁয়াজ আমদানি করে ভর্তুকি দিয়ে খোলা বাজারে বিক্রি করা হবে।

    সপ্তাহ দুয়েক ধরেই পেঁয়াজের বাজারে তেজ রয়েছে। কিন্তু গত শনিবার ভারত পেঁয়াজ রপ্তানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে, যা ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। এমন খবরে দেশি পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি ১০ টাকা এবং আমদানি করা পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। একদিন.

    ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে, ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেয়, যা সেই বছর দেশের বাজারে খুব অশান্ত পরিস্থিতি তৈরি করেছিল। সে সময় পাকিস্তান, মিয়ানমার, তুরস্ক, চীন ও মিশর থেকে পেঁয়াজ আমদানি হতো। সমুদ্র ও স্থলপথের পাশাপাশি আকাশপথেও আমদানি করা হতো। তারপরও পেঁয়াজের দাম ছুঁয়েছে ৩০০ টাকা। পরের বছর একই সময়ে ভারত রপ্তানি বন্ধ করে দেয়। সে বছরও দাম ২০০ টাকা ছাড়িয়েছিল। ২০২১ সালে ভারত রপ্তানি বন্ধ না করলেও নানা কারণে বাংলাদেশের বাজার কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দাম বেড়েছে দেড়শ’।

    একদিনেই বেড়েছে কেজিতে ২০ টাকা

    ভারতের শুল্ক আরোপের খবরে একদিনের ব্যবধানে দেশে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়েছে। গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজার, হাতিরপুল কাঁচামালের বাজার ও সেগুনবাগিচা বাজারে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৯০ থেকে ৯৫ টাকায়। আমদানি করা পেঁয়াজ প্রতি কেজি ২০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭২ টাকায়।

    কারওয়ান বাজারের স্বদেশ বাণীজলয়ের পাইকারি ব্যবসায়ী মিন্টু মিয়া জানান, গত শনিবার সকালে শ্যামবাজারে পাইকারিতে ভারতীয় পেঁয়াজের কেজি ৪০ থেকে ৪২ টাকা। ওই রাতে কেজিতে ১৪ থেকে ১৫ টাকা বেড়ে দাম দাঁড়ায় ৫৫ থেকে ৫৬ টাকা। একইভাবে দেশি পেঁয়াজের দামও কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ৭৫ থেকে ৭৬ টাকা হয়েছে। শ্যামবাজারে বাড়লে ঢাকার সব মার্কেটে এর প্রভাব পড়ে।

    হিলি স্থলবন্দর আমদানিকারক ও রপ্তানিকারক গ্রুপের সভাপতি হারুনুর রশিদ বলেন, ভারতীয় শুল্ক আরোপের কারণে দেশের ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজের দাম বাড়াবে। এতে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের পেঁয়াজ আমদানি ব্যয় বাড়বে। ফলে এরই মধ্যে দাম বেড়েছে। তিনি আরও বলেন, আগের এলসি পেঁয়াজের ওপরও শুল্ক প্রযোজ্য হবে। শুল্ক আরোপের পর গতকাল হেলি বন্দর দিয়ে কোনো পেঁয়াজ আসেনি। তবে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা কী হারে পেঁয়াজ রপ্তানি করবেন তা আজ থেকে জানা যাবে।

    কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহ-সভাপতি এসএম নাজের হোসেন বলেন, ভারতে রফতানির ওপর শুল্ক আরোপের ঘোষণায় দেশে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের ঐতিহ্যগত স্বভাব এমনই। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ায় তারা পণ্য দেশে আসার আগেই দাম বাড়িয়ে দেয়। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলেও দেশে এখনো চালান আসেনি এমন অজুহাতে দাম কমাতে চান না তারা। তিনি বলেন, কয়েক বছরের অভিজ্ঞতায় সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর আগে থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া দরকার ছিল। বিশেষ করে স্টক বাড়ানোর ব্যবস্থা করা। কিন্তু এখন সজাগ থাকতে হবে যাতে কোনো সুবিধাবাদী চক্র কারসাজি করতে না পারে।

    উত্পাদন এবং আমদানি পরিস্থিতি

    এ বছর বাংলাদেশে ৩৪ লাখ টনের বেশি পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়েছে। তবে সঠিক মজুদ না থাকাসহ নানা কারণে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ ফসল নষ্ট হয়ে যায়। সে অনুযায়ী আনুমানিক ১ মিলিয়ন টন পেঁয়াজ নষ্ট হলেও প্রকৃত উৎপাদন প্রায় ২ কোটি ৪০ লাখ টন।

    বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দেশে পেঁয়াজের বার্ষিক চাহিদা প্রায় আড়াই লাখ টন। তবে এ তথ্য মানতে নারাজ আমদানিকারকরা। তাই দেশে ভালো উৎপাদন হলেও চাহিদা মেটাতে প্রতিবছর অনেক পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়।