পিরোজপুরে বঙ্গমাতা সেতু নিয়ে উচ্ছ্বাস।ব্যবসার নতুন দিগন্ত উন্মোচন
পিরোজপুর শহর থেকে চার কিলোমিটার দক্ষিণে কুমিরপাড়ার পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ‘কঁচা’ নদী। পিরোজপুরকে দ্বিখণ্ডিত করার পাশাপাশি খরস্রোতা নদী তীরবর্তী মানুষের অভ্যাসেও পরিবর্তন এনেছে। যেমন খুলনা শহরকে পিরোজপুর জেলা সদরসহ তিনটি উপজেলার মানুষ গ্রহণ করেছে। নদীর ওপারের (দক্ষিণ) চারটি উপজেলার কাউখালী, স্বরূপকাঠি, মঠবাড়িয়া ও ভান্ডারিয়া এলাকার মানুষ বিপদে না পড়লে শহরে যান না। তাদের বিভাগীয় সদর দপ্তর বরিশাল নগর। একই জেলার দুই প্রান্তের বাসিন্দাদের বিপরীত গন্তব্যের মূলে সেই কাঁচা নদী। নদীতে কুমিরপাড়া থেকে বেকুটিয়া ফেরি যাতায়াতের জন্য ছিল চরম দুর্ভোগ।
কুমিরপাড়া থেকে বেকুটিয়া পর্যন্ত এই নদীর ওপর নির্মিত অষ্টম চীন-বান্ধব বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব সেতু রোববার উদ্বোধন করায় পিরোজপুরে পরিণত হয়েছে। এছাড়াও মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে পায়রা সমুদ্রবন্দর, পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটা ও বরিশাল নগর পর্যন্ত সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপন করা হয়েছে। এতে বরিশাল-খুলনা আঞ্চলিক মহাসড়ক অন্তত এক ঘণ্টা থেকে তিন ঘণ্টা কমতে পারে।
আর এই মিলন উৎসব দেখা গেল সেতু উদ্বোধনের পরপরই। গতকাল সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে কার্যত এটি উদ্বোধন করার পর উভয় পক্ষের হাজার হাজার মানুষ উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। সব বয়সের মানুষ সেতু দেখতে আসেন। সেতুটি নিয়ে তারা শুধু গর্বিত নয়, জীবনমান উন্নয়নের স্বপ্ন দেখছেন।
সেতুর ওপর দাঁড়িয়ে ৭২ বছর বয়সী নুরুল হক জানান, ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার শুকতাগর গ্রামে সেতু থেকে তার বাড়ি অন্তত ১৫ কিলোমিটার দূরে। সকালে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেন, বিকেলে স্ত্রীকে নিয়ে আসেন। তিনি বলেন, ‘এই নদীর ওপর সেতুর কথা ভাবিনি।’
স্ত্রী-সন্তান নিয়ে আসা পিরোজপুর সদরের কলাখালী ইউনিয়নের উদয়কাঠি গ্রামের রফিকুল ইসলাম সেন্টু জানান, পিরোজপুর সদর থেকে বরিশালের দূরত্ব ৪৮ কিলোমিটার এবং খুলনার দূরত্ব ৬০ কিলোমিটার। এ জন্য আমরা চিকিৎসাসহ যেকোনো প্রয়োজনে খুলনা শহরে যেতাম। শুধু ফেরি পারাপারের বিড়ম্বনার কারণে জেলা সদরসহ তিন উপজেলার মানুষের এ অভ্যাস চলে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। এখন সবার অভ্যাস বদলাবে।
শিল্প-কারখানা ছাড়া পিরোজপুরে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণের সম্ভাবনা দেখছেন ব্যবসায়ীরা। পিরোজপুর চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক ও জেলা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোলাম মাওলা নকীব বলেন, পদ্মার পর বঙ্গমাতা সেতুর উদ্বোধন পিরোজপুরের জন্য আশীর্বাদ। মংলা বন্দর থেকে পায়রা সমুদ্রবন্দর পর্যন্ত সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হওয়ায় পিরোজপুরে ব্যবসা-বাণিজ্যের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে বলে আশাবাদী এই ব্যবসায়ী। সিটিজেন ফর গুড গভর্নেন্স (সুজন) পিরোজপুরের সভাপতি মুনিরুজ্জামান নাসিম বলেন, বঙ্গমাতা সেতু জেলার নতুন প্রজন্মকে শিল্পোন্নত নগরী গড়ার স্বপ্ন দেখাচ্ছে।