পাহাড়ে টানেলের মধ্য দিয়ে এক ট্রেনেই সমতল থেকে সিকিম
চীন, নেপাল এবং ভুটানের সীমান্তবর্তী পার্বত্য রাজ্য সিকিম শীঘ্রই ভারতের রেল নেটওয়ার্কে যোগ দেবে। এক ট্রেনে সমতলভূমি থেকে সিকিমের পাহাড়ে পৌঁছাবে পর্যটকরা। পশ্চিমবঙ্গের সেবক থেকে সিকিমের রংপো পর্যন্ত রেলপথ তৈরি করা হচ্ছে। বর্তমানে রেলওয়ের ৭৫ শতাংশের বেশি কাজ শেষ হয়েছে। রেল মন্ত্রক ২০০৮-২০০৯ সালে সিকিমকে সমগ্র ভারতীয় রেল নেটওয়ার্কের সাথে সংযুক্ত করতে সিকিম রংপো রেল প্রকল্প হাতে নেয়। ভারতীয় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ এ তথ্য জানিয়েছে।
এই রেলপথ চালু হলে ওই এলাকার যান চলাচলে অভাবনীয় পরিবর্তন আসবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এতে করে ট্যাক্সি চালকদের দৌরাত্ম্য থেকে মুক্তি পাবে দেশি-বিদেশি পর্যটকরা। পশ্চিমবঙ্গ থেকে সিকিম যাওয়া যেমন অনেক সহজ হবে, তেমনি এই রেলপথটি পণ্য পরিবহনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
বর্ষাকালে ভূমিধসের কারণে সিকিমের একমাত্র জাতীয় সড়ক অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। সে সময় সিকিম কার্যত বিচ্ছিন্ন ছিল। এই রেলপথ নির্মাণ হলে সেই অবস্থার পরিবর্তন হবে। এছাড়া সেবক-রংপো রেলপথ অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলতে পারে। ফলে ভারতের যেকোনো প্রান্ত থেকে বা ঢাকা থেকে একটি ট্রেনে সিকিম যাওয়া যায়। সিকিমের পর্যটন ভিত্তিক অর্থনীতি চাঙ্গা হবে। এর জাতীয় নিরাপত্তার প্রভাবও রয়েছে। সিকিমের একটি বড় অংশ চীন সীমান্ত ঘেঁষা। সিকিম শেষ হলে চীনের ভূখণ্ড শুরু হয়।
দার্জিলিং-এর সংসদ সদস্য রাজু বিস্ট সম্প্রতি সেবক রংপো রেল প্রকল্প পরিদর্শন করেছেন প্রকল্পের অগ্রগতি দেখতে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি উত্তর-পূর্ব ভারতের উন্নয়নে বেশ কিছু প্রকল্প হাতে নিয়েছেন। এই প্রকল্পের কাজ শেষ হলে সরাসরি ট্রেনে সিকিম যাওয়া যাবে।
রেল মন্ত্রকের অধীনে ইন্টারন্যাশনালের প্রকল্প পরিচালক মহিন্দর সিং বলেছেন যে প্রায় ৬,০০০ কর্মী প্রতিদিন ২৪ ঘন্টা কাজ করছেন। কাজটি অত্যন্ত যত্ন সহকারে করা হচ্ছে। কারণ পুরো প্রকল্পটি সিসমিক জোন ফোর এবং ফাইভে পড়ে যা মারাত্মক ভূমিকম্প প্রবণ। এছাড়া এখানে সবসময় ভূমিধস ও আকস্মিক বন্যার ঝুঁকি থাকে। নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে এই গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে কাজ করছে ভারতীয় রেল। এই রেললাইনটি পরে গ্যাংটক পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হবে।
৪৫ কিলোমিটার সেবক-রংপো রেলপথের বেশির ভাগই যাবে পাহাড়ি টানেলের মধ্য দিয়ে। টানেলের মধ্য দিয়ে প্রায় ৩৮ কিলোমিটার রেলপথ যাবে। রেলওয়ে এই রেলপথের জন্য মোট ১৪টি টানেল, ২২টি সেতু নির্মাণ করেছে। দীর্ঘতম টানেলটি তিন কিলোমিটারেরও বেশি দীর্ঘ।
পশ্চিমবঙ্গের কালিম্পং জেলার তরখোলা ও তুংলাংখোলার মধ্যে এই টানেলের কাজও ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। প্রকল্পে ইতিমধ্যে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে। ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ এই রেলপথ যাত্রীদের জন্য খুলে দেওয়া হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
এদিকে এই রেলপথ চালু হলে ট্যাক্সি চালকদের কাছে জিম্মি হয়ে থাকা পর্যটকদের ভোগান্তিও কমবে বলে আশা করছেন অনেকে। ভারতীয় পর্যটক এবং বাংলাদেশী পর্যটকদের মধ্যেও পর্যটন দিন দিন জনপ্রিয়
স্পট হয়ে উঠেছে সিকিম। বর্তমানে মিতালি এক্সপ্রেস ট্রেনে ঢাকা থেকে সরাসরি নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে বা সড়কপথে বাংলাবান্ধা, উত্তরবঙ্গের হিলি সীমান্ত হয়ে সিকিম যাওয়া যায়। আবার অনেক পর্যটক কলকাতা থেকে ট্রেন, বাস বা প্লেনে বাগডোগরা, শিলিগুড়ি বা হয়ে সিকিম পাড়ি দেন। চার বছর আগে, দ্রুত ভ্রমণের সুবিধার জন্য সিকিম সমগ্র ভারতের সাথে আকাশপথে সংযুক্ত ছিল।
তবে পাহাড়ে এলোমেলো আবহাওয়ার কারণে বছরের একটা বড় অংশ বন্ধ থাকে আকাশপথে। বিমান ভাড়াও সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। ফলস্বরূপ, সিকিমে আসা পর্যটকদের ৯৯ শতাংশকে যে কোনও পরিবহনের মাধ্যমে নিউ জলপাইগুড়ি বা শিলিগুড়িতে আসতে হয়।
পর্যটকদের অভিযোগ- এর পরেই শুরু হয় ট্যাক্সি চালকদের হয়রানি। শিলিগুড়ির সমতল ভূমি থেকে সিকিমের পাহাড়ে বেড়াতে আসা দেশি বা বিদেশি পর্যটকদের শিলিগুড়ি পৌঁছাতে স্থানীয় ট্যাক্সি চালকদের ভোগান্তি পোহাতে হয়। পর্যটন মৌসুমে ২,০০০ টাকা চাওয়া ভাড়া দুই থেকে তিন গুণ বেশি।