• বাংলা
  • English
  • অর্থনীতি

    পাহাড়ে আমের বিপ্লব।প্রান্তিক মানুষের অর্থনৈতিক চিত্র বদলে যাচ্ছে

    নিঃশব্দে এক বিপ্লব ঘটে গেছে। জঙ্গলে ঢেকে থাকা পাহাড়ে এখন সবুজ আমের বাগান। গাছগুলিতে আম ঝুলতে দেখলে আপনি অভিভূত হন। এমনকি দুই দশক আগেও পাহাড়ের আম খাওয়া সম্ভব হয়নি। শত শত আম গাছে আম ধরত কেউই তা খেতে পারত না। কীটনাশক অভাব এবং সঠিক যত্নের অভাবে তারা পোকামাকড় ধরতে পারে। তবে এখন সেই পরিস্থিতি বদলেছে। আমের বিপ্লব ঘটেছে পাহাড়ের পাশাপাশি সমভূমিতেও। প্রতি বছর পাহাড়ে আমের চাষের জমি বাড়ছে। ফলন বাড়ছে। আম পাহাড়ি কৃষকদের অতিরিক্ত আয়ের পথ দেখিয়ে দিচ্ছে।

    পার্বত্য জেলার কৃষকরা আমের বিপ্লব শুরু করেছেন। পাহাড়ের লোকেরা একসময় সমতল জেলা থেকে আগত আমাইয়ের চাহিদা মেটাত। এখন রাজশাহী বা চাঁপাইনবাবগঞ্জের মতো এই পাহাড়ি অঞ্চলও আমের জন্য বিখ্যাত হয়ে উঠেছে। কৃষকরা বাণিজ্যিকভাবে পরিকল্পিত আমের চাষ করে পাহাড়ে উন্নত জাতের আমের উৎপাদনের সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত করেছেন। শুধু সরকারের সহায়তায় নয়, কৃষকরা তাদের কঠোর পরিশ্রম ও প্রচেষ্টায় পাহাড়ের অনুর্বর পাহাড়ে উন্নত জাতের আমের চাষে ঈর্ষণীয় সাফল্য এনেছেন।

    একবার জুম জমি বা ঘন জঙ্গলে এখন এটি আমের বাগানে পরিণত হয়েছে। আম্রপালি সহ বিভিন্ন জাতের আম গাছে গুচ্ছ ঝুলছে। পাহাড়ের চেহারাই বদলেছে। তিনটি পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবানের সারি সারি আমের গাছ এখন ছোট-বড় সব আমের বাগানের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। বিশ্বের সর্বাধিক ব্যয়বহুল আমের পাহাড়ের জাপানের মিয়াজাকি এবং বিভিন্ন জাতের দেশী ও বিদেশী আমের চাষ হচ্ছে। তবে পার্বত্য চট্টগ্রামের বেশিরভাগ পাহাড় ভারতীয় আম্রপালি আমের দখলে।

    তিন পার্বত্য জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি আমের বাগানের বান্দরবানে রয়েছে। বৃহত বাণিজ্যিক কৃষি খামারের বাগানের বেশিরভাগ জেলায় অবস্থিত। আমাদের পার্বত্য জেলা রাজশাহী জেলা থেকে খুব বেশি পিছিয়ে নেই যা দেশে আমের জেলা হিসাবে পরিচিত। কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শীঘ্রই পার্বত্য জেলা আম উৎপাদনে রাজশাহী বিভাগের আরও কাছাকাছি চলে আসবে।

    কালিকাপুর মডেল প্রকল্পের আওতায় ১৯৯৮-৯৯ সালে পাহাড়ের আম্রপালি আমের চাষ শুরু হয়েছিল। পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের উদ্যোগে কৃষকদের বিনামূল্যে চারা, সার ইত্যাদি দিয়ে আমের চাষ করতে উৎসাহিত করা হয়েছিল বাগানটি ধীরে ধীরে প্রসারিত হওয়ায় কম ফলন হয়েছে, বেশি ফলন হয়েছে, স্বাদ পেয়েছে এবং বাজারে এর চাহিদা বেশি রয়েছে। এক সময় ব্যক্তিদের উদ্যোগে কয়েক হাজার একর আমের বাগানের প্রচলন ছিল। চট্টগ্রামের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক মো: নাসির উদ্দিন চৌধুরী বলেন, উন্নত ফলন ও অধিক লাভের কারণে পাহাড়ের লোকেরা আমের চাষ শুরু করেছেন।

    গুইমারা উপজেলা হাফছড়ি ইউনিয়নের আম চাষি সফল। আলী জানান, আমি দিনমজুর ছিলাম। তিনি ২০০১ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের সহায়তায় নিজস্ব পাহাড়ি জমিতে আমের বাগান করেছিলেন এবং বর্তমানে আর্থিকভাবে সচ্ছল। গত বছর আম বিক্রি করে তিনি প্রায় ছয় লাখ টাকা আয় করেছেন। তিনি বলেন, ফলন খুব ভাল হওয়ায় এ বছর লাভ অনেক বেশি হবে। মোঃ আলির মতো আম চাষের মধ্য দিয়ে ছোট ছোট নৃগোষ্ঠী সহ পাহাড়ি অঞ্চলের দরিদ্র মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা অনেকটাই বদলে গেছে।

    রাঙ্গামাটি ও বান্দরবানের তুলনায় এবার খাগড়াছড়িতে ফলন অনেক ভাল হয়েছে। পার্বত্য অঞ্চল জুড়ে চট্টগ্রাম ও ঢাকাসহ বিভিন্ন সমতল জেলায় আম সরবরাহ করা হচ্ছে। আম্রপালী, মল্লিকা, রাঙ্গুই, বারী -৪ সহ সকল জাতের আমের ফলন ভালো হয়েছে এ বছর। বিভিন্ন আমের বাগানে গিয়ে দেখা যায়, কৃষকরা স্ত্রী, ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে গাছ থেকে আম তুলছেন। প্রতিটি আম্রপালি গাছে গড়ে ৫০ কেজি আম থাকে। এ মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে আম্রপালির ফসল কাটা শুরু হয়েছে। খাগড়াছড়িতে ভাল মানের আম্রপালি প্রতি কেজি ৫৫-৬০ টাকা এবং পাইকারি প্রতি ৪৫-৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কৃষকরা বাগানে ফরমালিন বা কোনও বিষাক্ত কীটনাশক প্রয়োগ করেন না।

    মন্তব্য করুন