পাসপোর্ট কেলেঙ্কারিতে ফাঁসছেন বেনজির. প্রমাণিত হলে দুই বছরের কারাদণ্ড
বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সারাদেশে আলোড়ন সৃষ্টি করা পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ এবার পাসপোর্ট কেলেঙ্কারিতে ধরা পড়তে পারেন। জ্ঞাত আয়ের বাইরে সম্পদ অর্জনের তদন্তের মধ্যে বেনজির ও তার পরিবারের সদস্যদের জন্য তৈরি ৫টি পাসপোর্ট জালিয়াতির অভিযোগ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বেনজির, একজন পুলিশ অফিসার, তার পেশাদার পরিচয় গোপন করে এবং একটি প্রাইভেট কর্মচারী হিসাবে একটি সাধারণ পাসপোর্ট নিয়েছিলেন। সূত্র জানায়, পাসপোর্ট অধিদপ্তর আইনে এ ধরনের জালিয়াতির অভিযোগ প্রমাণিত হলে বেনজিরের দুই বছরের জেল হতে পারে।
তদন্তের অংশ হিসেবে বেনজির পরিবারের সম্পদের বিষয়ে পাসপোর্ট বিভাগের আট কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুদক। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর ৩টা পর্যন্ত দুদকের প্রধান কার্যালয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন দুদকের উপ-পরিচালক মো. হাফিজুল ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের অনুসন্ধান দল। দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা উপ-পরিচালক আকতারুল ইসলাম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে এ জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
প্রাপ্ত নথির ভিত্তিতে দুদকের কর্মকর্তারা বলছেন, বেনজির পাসপোর্ট তৈরিতে নজিরবিহীন জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন। ওই পাসপোর্ট নবায়নের সময় বিষয়টি ধরা পড়লে পাসপোর্ট বিভাগ তা অবরোধ করে। চিঠিটি বেনজিরের তৎকালীন কর্মস্থল র্যাব সদর দপ্তরে পাঠানো হয়। কিন্তু পেশা পরিবর্তন না করে বেঞ্জির অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে তা ‘ম্যানেজ’ করেন। পাসপোর্ট অফিসে না গিয়ে বিশেষ সুবিধা নেন। দুদক জানায়, সাবেক আইজিপি তার পাসপোর্টে পুলিশের পরিচয় গোপন করেছিলেন। শুরু থেকেই তিনি সরকারি কর্মচারী হিসেবে সরকারি পাসপোর্ট নেননি।
এদিকে, অবৈধ অধিগ্রহণ ও দুর্নীতির অভিযোগে বেনজিরকে দুদক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করলেও তিনি হাজির হননি। এমনকি তার স্ত্রী জিশান মির্জা ও দুই মেয়ে একই অভিযোগে দুদকের তলবের জবাব দেননি। তবে তারা আইনজীবীর মাধ্যমে লিখিত বক্তব্য পাঠিয়েছেন।
৩১ মার্চ ও ৩ এপ্রিল একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, বেনজির ও তার পরিবার অবৈধভাবে বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জন করেছেন। অভিযোগ যাচাই-বাছাই করে ১৮ এপ্রিল তদন্তের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। দুদক আনুষ্ঠানিকভাবে বেনজিরের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করার পর মে মাসের প্রথম সপ্তাহে তিনি পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেশ ছেড়েছেন বলে গণমাধ্যমে খবর আসে। ২৮ মে নোটিশ পাঠানোর পর দুদক ৬ জুন বেনজির ও তার স্ত্রী জিশান মির্জা ও দুই মেয়েকে ৯ জুন জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করে। সে সময় তারা হাজির না হয়ে দুদকে আবেদন করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে তাদের দ্বিতীয়বারের মতো সময়ও দেওয়া হয়। কিন্তু সে সময়েও তারা দুদকের তলবের জবাব দেননি।
জ্ঞাত আয়ের বাইরে সম্পদ অর্জনের তদন্তের অংশ হিসাবে, দুদক বেনজির আহমেদ, তার স্ত্রী জিশান মির্জা এবং তিন কন্যার নামে ৭০২ বিঘা জমি (৩৩ শতকে এক বিঘা হিসাবে), ৩৩টি ব্যাংকের নামে ২০৫টি দলিল খুঁজে পেয়েছে। ২৫টি কোম্পানিতে অ্যাকাউন্ট এবং বিনিয়োগ। এরপর ২৩, ২৬ মে এবং ১২ জুন আদালতের নির্দেশে এসব সম্পদ জব্দ ও অবরুদ্ধ করা হয়। তিনি ২০১৪ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত এসব সম্পত্তি করেন। দুদকের উপ-পরিচালক হাফিজুল ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি দল তদন্ত করছে। দলের অন্য দুই সদস্য হলেন সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ নেয়ামুল আহসান গাজী ও মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন।
বেনজীর আহমেদ ২০১৫ সালের ৭ জানুয়ারি র্যাবের মহাপরিচালক হিসেবে নিযুক্ত হন। এর আগে তিনি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে ১৫ এপ্রিল, ২০২০ তারিখে তিনি আইজিপি হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তারপর ৩০শে সেপ্টেম্বর ২০২২-এ তিনি ৫৯ বছর পূর্ণ হওয়ায় সরকারি চাকরি আইন অনুযায়ী অবসর গ্রহণ করেন।