• বাংলা
  • English
  • রাজনীতি

    পাল্টা কর্মসূচিতে আবারও উত্তপ্ত রাজনীতি

    নির্বাচন সামনে রেখে আবারও শুরু হয়েছে রাজপথ দখলের লড়াই। বিরোধী দলকে রাজপথে একক শোডাউনের সুযোগ দিতে রাজি নয় ক্ষমতাসীন দল। বিএনপির প্রতিটি কর্মসূচির জবাবে একই দিনে পাল্টা কর্মসূচি দিচ্ছে আওয়ামী লীগ। বুধবার ঢাকাসহ দেশের ১০টি বিভাগীয় শহরে গণঅবস্থান কর্মসূচি দিয়েছে বিএনপিসহ সমমনা দল ও জোট। পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি সফল করতে তারা জোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ক্ষমতাসীন সরকারের পদত্যাগ, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবি নিয়ে এ অবস্থান কর্মসূচি পালন করবে বিরোধী দলগুলো। অন্যদিকে বিরোধী জোটের এই কর্মসূচির দিন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ‘সতর্ক পাহারায়’ থাকবে। সম্ভাব্য সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য ঠেকাতে ‘শান্তি সমাবেশ’ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে মাঠে থাকবেন দলটির নেতাকর্মীরা। প্রধান দুই দলের এই পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে রাজনীতি। দুই দলের এই মুখোমুখি অবস্থানে সংঘাতের আশঙ্কা করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
    বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকার ও বিরোধী দল উভয়েরই উচিত সংঘাত এড়ানো। নির্বাচনের এখনো এক বছর বাকি। মহাসড়ক দখল নিয়ে এখন সংঘাত-সহিংসতায় জড়ানো কারো জন্যই ভালো হবে না। সংবিধান অনুযায়ী সভা করার মৌলিক অধিকার প্রতিটি দলের রয়েছে। দেশের অর্থনৈতিক সংকটে রাজনৈতিক সংকট তৈরি হলে সাধারণ মানুষ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
    বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, বিনা ভোটে নির্বাচিত আওয়ামী লীগ সরকার বিএনপির জনসভায় মানুষের ভিড় দেখে জনরোষে ভীত। তাই তারা বিএনপির কর্মসূচির দিন পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে অবৈধ সরকারের গদি রক্ষার চেষ্টা করছে। কিন্তু এটা কাজ করবে না. এই বাধাগুলি ভিড় দ্বারা উড়িয়ে দেওয়া হবে। সময়ের ব্যাপার মাত্র।
    অন্যদিকে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, আন্দোলনের নামে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে চায় বিএনপি ও তার সহযোগীরা। আর যেকোনো সরকারের প্রথম ও প্রধান দায়িত্ব হলো জনগণকে নিরাপত্তা দেওয়া। ক্ষমতাসীন দল হিসেবে জনগণের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বও আওয়ামী লীগের। সেই দায়িত্ব পালনে সরকার ও দল যা যা করা দরকার তাই করবে।
    সহনশীলতা প্রয়োজন- বলেন বিশ্লেষকরা: সুজন সম্পাদক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার হলো আন্দোলন, সমাবেশ, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, সংগঠন- এগুলো সংবিধান অনুযায়ী মৌলিক অধিকার। তাদের অবরুদ্ধ করা সংবিধানের ৩৭ অনুচ্ছেদের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এগুলো কর্তৃত্ববাদী ব্যবস্থার প্রতিফলন। এ ধরনের আচরণ কখনোই দেশ, গণতন্ত্র ও দলের জন্য ভালো নয়। রাস্তা দখল করে বা বলপ্রয়োগ করে পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে সমস্যার সমাধান হবে না; সংকট থেকে উত্তরণের পথ বের করতে হবে। সরকারকে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসতে হবে।
    জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. হারুন অর রশীদ বলেন, রাজনৈতিক এজেন্ডার নামে সংঘাত-সহিংসতার বর্তমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের প্রধান উপায় হচ্ছে একে অপরের প্রতি গণতান্ত্রিক আচরণ এবং পরম সহনশীলতা প্রদর্শন করা। একই সঙ্গে গণতান্ত্রিক রীতিনীতি ও মূল্যবোধকে সকলেরই সম্মান করা উচিত।
    তিনি বলেন, দীর্ঘদিন পর বিএনপি মাঠে নামার সুযোগ পেলেও তাদের দলে চরমপন্থী রয়েছে, যারা কর্মসূচির নামে পরিস্থিতি আরও অসহনীয় করে তুলছে। তাই সরকারি দলকে যেমন সহনশীলতার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে, তেমনি বিএনপিকেও এ ধরনের নিষ্ক্রিয়তা থেকে সরে আসতে হবে। এছাড়া সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণভাবে তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতে হবে।
    নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবি নিয়ে জনসমাবেশে জনসমাগম নামাতে চায় বিএনপি। ঢাকায় বিএনপির ঘোষিত জনসমাবেশ কর্মসূচি সকাল ১১টা থেকে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে শুরু হবে। চার ঘণ্টার এই অবস্থান কর্মসূচিকে জনসভায় পরিণত করতে ইতোমধ্যে প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন দলটির নেতাকর্মীরা। ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির প্রতিটি থানা, ওয়ার্ড এমনকি ইউনিট পর্যায়ে প্রস্তুতি সভা সম্পন্ন হয়েছে। একইভাবে দলের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতারাও তাদের সর্বাত্মক প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন।
    বিএনপি নেতারা বলেন, বাংলাদেশের জনগণ তাদের মালিকানা, ভোটের অধিকার, আইনের শাসন ও জীবনের নিরাপত্তা ফিরে পেতে চায়। এ জন্য অবৈধ ফ্যাসিবাদী, দখলদার, অনির্বাচিত ও নিপীড়ক সরকারকে ছাড়তে হবে। আর বিএনপিসহ অন্যান্য গণতন্ত্রপন্থী রাজনৈতিক দলগুলো একযোগে তাদের বিদায়ের দাবিতে আন্দোলন করছে। জনগণের সম্মিলিত আন্দোলন এই সরকারের বিদায় দেখতে চায়।

    মন্তব্য করুন