জাতীয়

পানির পর এবার মিটারের দাম দ্বিগুণ

 ঢাকা ওয়াসা কোনোভাবেই আলোচনা-সমালোচনার বৃত্ত থেকে বের হতে পারছে না। এই সরকারি সংস্থা এক লাফে পানির মিটারের দাম প্রায় দ্বিগুণ করেছে। আগে গ্রাহকরা ৩ হাজার ৪০০ টাকায় মিটার কিনতে পারতেন, এখন দিতে হচ্ছে ৬ হাজার ৬৭৫ টাকা। কিন্তু এমন মিটার সংগ্রহ করতে ঢাকা ওয়াসার খরচ হয় মাত্র ১ হাজার ৭০০ টাকা। একই সঙ্গে গভীর নলকূপ ও নতুন পানির সংযোগ নেওয়ার আবেদনপত্রের মূল্য একযোগে পাঁচ গুণ বাড়ানো হয়েছে। ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) আরোপ করা হয়েছে।

 জানা গেছে, সেবার মূল্য বৃদ্ধিতে ঢাকা ওয়াসা বোর্ডের অনুমোদন নেওয়ার নিয়ম থাকলেও এ ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ তা নেয়নি। বোর্ডকে বাইপাস করে রাজস্ব শাখা, মিটার বিক্রয় কেন্দ্রসহ সংশ্লিষ্ট শাখায় চিঠি দিয়ে গোপনে হার বাড়ানোর অফিস আদেশ দেওয়া হয়। নথিপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, গত ২২ ডিসেম্বর ঢাকা ওয়াসার সচিব শারমিন আমির হক এসব সেবার দাম বাড়ানোর অফিস আদেশ জারি করেন। তবে অফিস আদেশ জারির প্রায় এক মাস আগে ১৬ নভেম্বর থেকে তা কার্যকর করা হবে বলে আদেশে বলা হয়।কর্তৃপক্ষের কাজের স্বার্থে এই আদেশ জারি করা হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। বর্তমানে ঢাকা ওয়াসার গ্রাহক সংখ্যা ৪৩ লাখ ৮৮ হাজার। এ ছাড়া প্রতি বছর প্রায় ১০ হাজার নতুন গ্রাহক তৈরি হয়।

নতুন ও পুরনো দাম পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এখন পর্যন্ত ২০ মিলিমিটার ব্যাসের পানি সংযোগ মিটারের দাম ছিল ৩ হাজার ৪০০ টাকা। যা করা হয়েছে ৬ হাজার ৬৭৫ টাকা ২০ পয়সায়। ২৫ মিলিমিটার ব্যাস মিটারের দাম ছিল ৪ হাজার ৭০০ টাকা। যা করা হয়েছে ৯ হাজার ২৮ টাকা ৯৫ পয়সায়। ৩৭ মিলিমিটার ব্যাসের মিটারের দাম ছিল ১০ হাজার টাকা। যা করা হয়েছে ২০ হাজার ১৩৬ টাকা ১৫ পয়সায়। ৫০ মিলিমিটার ব্যাসের মিটার ছিল ১১ হাজার ৪০০ টাকা। যা করা হয়েছে ২৫ হাজার ২৬০ টাকা ১৫ পয়সা। জানা গেছে, ঢাকা ওয়াসা সরবরাহকারীর কাছ থেকে ২০ মিলিমিটার পাইপের পানির সংযোগ এক হাজার ৭০০ টাকায় কেনে। তা বিক্রি করে প্রতি মিটারে ৪ হাজার ৯৭৫ টাকা ২০ পয়সা লাভ করছেন তিনি। একইভাবে ২৫ মিলিমিটার ব্যাসের সংযোগ মিটার ২ হাজার ৬০০ টাকায় কিনে বিক্রি করে লাভ হয় ৬ হাজার ৪২৮ টাকা ৯০ পয়সা। একইভাবে অন্য ব্যাসের পানির সংযোগ মিটার বিক্রি করে গ্রাহকদের কাছ থেকে মোটা মুনাফা চুরি করছে ওয়াসা।

সরেজমিনে আসাদ গেট সংলগ্ন ঢাকা ওয়াসার মিটার বিক্রয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা টেবিলের কাঁচের নিচে মিটারের নতুন দামের চার্ট রেখেছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, ডলারের দাম বাড়ায় কয়েক মাস আগে দাম বাড়ানো হয়েছিল। ডলারের দাম বাড়ার কথা বলা সত্ত্বেও, বর্তমানে যে মিটার সরবরাহ করা হচ্ছে তা ২০২০ এবং ২০২১ সালে আমদানি করা হয়েছে। তখন দেশে ডলারের কোনো সংকট ছিল না। পেপকো বাংলাদেশ লিমিটেড নামের একটি ঠিকাদার দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা ওয়াসায় এসব মিটার সরবরাহ করে আসছে। পেপকো বাংলাদেশ ওয়াসার সঙ্গে যোগসাজশে চীন থেকে নিম্নমানের মিটার আমদানি করে ওয়াসার কাছে বিক্রি করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ফলে এসব মিটার প্রায়ই সমস্যার সম্মুখীন হয় এবং গ্রাহকদের বিল বেশি আসতে থাকে। এ জন্য গ্রাহককে ঘন ঘন মিটার পরিবর্তন করতে হবে। এ প্রসঙ্গে পেপকো বাংলাদেশ লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী মনিরুল ইসলাম বলেন, ওয়াসার কাছ থেকে আপনারা যা জানেন তা জানেন। আমি আপনাকে আমার ব্যবসার গোপন কথা বলব না।

আবেদনপত্রের দাম বেড়েছে পাঁচ গুণ

কোনো বাড়ি বা কোনো প্রতিষ্ঠানে পানির সংযোগ পেতে হলে প্রথমে গ্রাহককে ওয়াসার সংশ্লিষ্ট শাখা থেকে একটি আবেদনপত্র কিনতে হবে। এতদিন ওই আবেদনপত্রের দাম ছিল ১০০ টাকা। এখন এর দাম ৫০০ টাকা। সাথে ১৫ শতাংশ ভ্যাট। সব মিলিয়ে এখন একজনকে ৫৭৫ টাকায় একটি আবেদনপত্র কিনতে হবে। অন্যদিকে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান গভীর নলকূপ বসাতে চাইলে আগে আবেদনপত্রের মূল্য ছিল ৫০০ টাকা। এটা করা হয়েছে ২ হাজার টাকায়। ১৫ শতাংশ ভ্যাটসহ গ্রাহককে দিতে হবে ২ হাজার ৩০০ টাকা।

নতুন মিটার পুরাতন মিটার

পানির বিল নিয়ে গ্রাহকের কোনো আপত্তি থাকলে ওয়াসা পানির মিটার প্রতিস্থাপন করে। তারপর পুরনো মিটার নিয়ে নতুন মিটার দিন। এক্ষেত্রেও গ্রাহকের কাছ থেকে মিটারের দাম নেওয়া হয়। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে গ্রাহককে আরেকটি পুরনো মিটার দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা ওয়াসার এক কর্মকর্তা বলেন, আসাদগেটে ঢাকা ওয়াসার একটি ওয়ার্কশপ রয়েছে। গ্রাহকদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা পুরানো মিটার ওয়ার্কশপে মেরামত করা হয়। এই পুরানো মিটারগুলি নৃপেন চন্দ্র বসাক নামে একজন ফোরম্যান (যান্ত্রিক) দ্বারা ঠিক করা হয়েছিল। এরপর সেগুলো রং করে নতুন দামে ক্রেতার কাছে বিক্রি করা হয়। অনেক ক্ষেত্রে এসব মিটার পানি ছাড়াই বাতাসে ঘোরে বলে অভিযোগ রয়েছে। ফলে গ্রাহক বেশি বিল পান। আর এই অতিরিক্ত বিল নিয়ে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে গ্রাহককে।