• বাংলা
  • English
  • রাজনীতি

    পর্যবেক্ষক পাঠাতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের শর্ত, তত্বাবধায়কে অনড় বিএনপি

    তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া এবং আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যাবে না বিএনপি। রোববার ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে দলের আগের অবস্থান তুলে ধরেন নেতারা। দলটি বলেছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া ত্রুটিপূর্ণ ও পক্ষপাতমূলক নির্বাচনে অংশ নিলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বৈধতা পাবে।

    অন্যদিকে, নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক না হলে বৈঠকে পর্যবেক্ষক পাঠাবে না বলে জানিয়েছে ইইউ। একই সঙ্গে রাজনৈতিক সংকট নিরসনে সংলাপের ওপর জোর দিয়েছে সংগঠনটি। বিএনপিকে এই বার্তা দিয়ে ইইউ বলেছে, তারা নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠাতে চায়। এ কারণে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে জুন-জুলাই মাসে ঢাকায় আসবে প্রাক-নির্বাচন পর্যবেক্ষণ দল।

    বৈঠকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে বিএনপির চার সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল অংশ নেয়। এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, মানবাধিকার সম্পাদক অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান প্রমুখ। গুলশানে ইইউ প্রতিনিধি দলের প্রধানের বাসায় রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলির নেতৃত্বে দেড় ঘণ্টার বৈঠকে ফ্রান্স, ইতালি, সুইডেন ও জার্মানির রাষ্ট্রদূতরা অংশ নেন।

    বিএনপির সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকায় ইইউ প্রতিনিধি দলের প্রধান চার্লস হোয়াইটলি বলেন, নির্বাচন পর্যবেক্ষণে ইইউর জন্য বাংলাদেশের অগ্রাধিকার। নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হলে নির্বাচনের আগে আমরা ১২টি পর্যবেক্ষক দল পাঠাই। আর অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করতে হলে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর ভূমিকা থাকতে হবে। আমরা বৈঠকে বিষয়টি জানিয়েছি।

    বিএনপির উদ্বেগের বিষয়ে তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে বিএনপির অবস্থান সম্পর্কে বিস্তারিত সবাই জানেন। তারা তাদের অবস্থান জানিয়েছেন। সব দলের সঙ্গে বৈঠকে আমরা যা শুনেছি তা শুনেছি।

    সূত্র জানায়, বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নিয়মিত বৈঠকের অংশ হিসেবে বিএনপির সঙ্গে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে বিএনপি তাদের আগের অবস্থান তুলে ধরে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিও জানানো হয়েছে। তারা গণতান্ত্রিক পরিস্থিতি, বিরোধী দলের রাজনৈতিক স্বাধীনতা নিয়ে পূর্বের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। বৈঠকে তাদের প্রধান বিষয় ছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করা, যা ইইউ রাষ্ট্রদূতদের কাছে নতুন নয়।

    বৈঠকে অংশ নেওয়া একজন রাষ্ট্রদূত নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিএনপি বিশ্বাস করে বর্তমান নির্বাচন প্রক্রিয়া ত্রুটিপূর্ণ ও পক্ষপাতদুষ্ট। কারণ, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এই প্রক্রিয়ায় নির্বাচনে ডাকাতি করবে, যা তারা আগেও করেছে। আর বিএনপি এ ধরনের নির্বাচনে অংশ নিলে আওয়ামী লীগ আবারও বৈধতা পাবে। বৈঠকে তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার কীভাবে ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনবে বা সরকারকে রাজি করাবে তা বলেনি। এ সময় সংকট নিরসনে বিএনপি নেতাদের সংলাপের আহ্বান জানানো হয়েছে। তবে আমরা কোনোভাবেই বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মধ্যস্থতার ভূমিকা পালন করব না।

    ব্রাসেলস বাংলাদেশকে নির্বাচন পর্যবেক্ষণে অগ্রাধিকার দিয়েছে। যার অর্থ, ইইউ ইতিমধ্যে বাজেট বরাদ্দ করেছে। নির্বাচনের আগে বেশ কয়েকটি প্রাক-নির্বাচন পর্যবেক্ষণ দল বাংলাদেশ সফর করবে। তাদের পর্যবেক্ষণ নির্ভর করবে নির্বাচনের দিন পর্যবেক্ষক পাঠানো হবে কিনা। অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য পরিবেশ অনুকূল না হলে পর্যবেক্ষক পাঠানো হবে না। আর প্রধান বিরোধী দল নির্বাচনে অংশ না নিলে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের কোনো যৌক্তিকতা নেই।

    আরেক রাষ্ট্রদূত বলেন, প্রধান বিরোধী দল নির্বাচনে অংশ না নিলে যারা অংশগ্রহণ করবে তাদের পক্ষে ফলাফল যাবে। পর্যবেক্ষণ করার কিছু নেই। আর নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে না পারলে ভালো না মন্দ বলার অধিকার শরিকদের সীমিত হয়ে যাবে।

    তত্ত্বাবধায়কসহ খালেদার চিকিৎসা ও মুক্তির ওপর বিএনপির জোর : সূত্র জানায়, বৈঠকে বিএনপি চেয়ারপারসনের চিকিৎসা ও মুক্তির বিষয়ে ইইউকে অবহিত করেন দলটির নেতারা। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে খালেদা জিয়া কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন বলেও জানা গেছে। এ ছাড়া নেতারা নির্বাচন নিয়ে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করে বলেন, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে ক্ষমতাসীনরা দেশের জনগণকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত ও প্রতারণা করে ক্ষমতায় এসেছে। তারা আগামীতেও একই ফর্মুলায় নির্বাচন করতে চায়। তাই আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হতে পারে না। এ অবস্থায় কীভাবে নির্বাচন নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক করা যায়, তা জানতে চেয়েছেন ইইউ প্রতিনিধিরা। এর প্রতিক্রিয়ায় অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে সংসদ ভেঙে দিয়ে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের পক্ষে জোরালো মতামত ব্যক্ত করেন বিএনপি নেতারা। এছাড়া নেতারা রাষ্ট্র সংস্কার প্রস্তাবের ২৭ দফা ব্যাখ্যা করেন।

    মন্তব্য করুন