পরিবেশ দূষণ।হাইকোর্টের নির্দেশনা বাস্তবায়নে উদাসীনতা
পরিবেশ রক্ষায় উচ্চ আদালতের একের পর এক নির্দেশনা জারি হলেও তা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে না। সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর উদাসীনতা ও সমন্বয়হীনতার কারণে এসব রায় ও আদেশ উপেক্ষিত হচ্ছে। গত এক দশকে এসব নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য প্রশাসনের কর্মকর্তাদের উচ্চ আদালতে তলব করার একাধিক মামলা হয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে অন্তত ৬০ জন সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা হয়েছে। সরকারের একাধিক শীর্ষ সচিব ও জেলা প্রশাসকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের তলব করেছে হাইকোর্ট। এর মধ্যে অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদ ও বায়ুদূষণ রোধে হাইকোর্টের নির্দেশনা বাস্তবায়ন না করায় ঢাকা ও এর আশপাশের পাঁচ জেলা প্রশাসক চলতি বছরেই দুইবার হাইকোর্টে হাজিরা দিয়েছেন। পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের প্রশাসককেও তলব করা হয়েছে।
নদী দূষণ, বায়ু দূষণ, গাছ কাটা, পাহাড় কাটা, খাল-বিল দখল ও দূষণসহ বিভিন্ন বিষয়ে সরকার গত তিন দশকে পৃথক আইন করেছে। পরিবেশ রক্ষায় সরকারের রয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু বিষয়ক মন্ত্রণালয়। এ মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিবেশ দূষণ রোধে সারাদেশে সারাদেশে পরিবেশ অধিদপ্তরের ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। তবে নগরায়ন ও সরকার ও জনগণের উদাসীনতার কারণে দূষণ রোধ হচ্ছে না। স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, পরিবেশ রক্ষায় আদালতের রায় ও আদেশ বাস্তবায়নে প্রশাসন সম্পূর্ণ উদাসীন। তাদের আদেশ ও আদেশ বাস্তবায়ন না করার জন্য তাদের জবাবদিহি করতে হবে। বিশেষ করে পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো রায় ও আদেশ বাস্তবায়ন না করায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা করলে তা হবে ইতিবাচক। কারণ সরকারি চাকরি বিধি অনুযায়ী এমন ঘটনা ঘটলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করার কথা। তবে দুর্ভাগ্যজনক যে, প্রশাসন কোনোভাবেই তা এড়িয়ে যাচ্ছে।
তার মতে, স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। অন্য কথায়, মাঠ পর্যায়ের প্রশাসনে, এসিল্যান্ড, ইউএনও, ডিসিকে পরিবেশ সুরক্ষার বিষয়ে দৃঢ় থাকতে হবে। তারা চাইলে পরিবেশ দূষণ রোধ এবং নদী, খাল, বিল ও বনাঞ্চলসহ পরিবেশ সুরক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব।
তবে পরিবেশ রক্ষায় সরকার সচেষ্ট রয়েছে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী ড. শাহাব উদ্দিন। তিনি বলেন, উচ্চ আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়নে সরকার সর্বাত্মক চেষ্টা করছে। কিছু ক্ষেত্রে, সীমাবদ্ধতা আছে। প্রশাসনের সংশ্লিষ্টদের উদাসীনতার বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, আমাদের নজরে আসা বিষয়গুলো নিয়ে আমরা কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছি।
সংবিধানের ১১২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী হাইকোর্টের রায় বা আদেশ কার্যকর করা সরকারের দায়িত্ব। “প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রীয় সীমানার মধ্যে সমস্ত নির্বাহী এবং বিচার বিভাগীয় কর্তৃপক্ষ সুপ্রিম কোর্টকে সহায়তা করবে,” নিবন্ধে বলা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আদালতের রায় বা অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ বাস্তবায়ন করা সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের সাংবিধানিক দায়িত্ব। রায় বাস্তবায়নে সরকারকে সঠিক ও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
বেসরকারি সংস্থার তৎপরতা : পরিবেশ রক্ষায় প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের উদাসীনতার জন্যও অনেক ক্ষেত্রে জনবলের অভাবকে দায়ী করা হয়। এমন পরিস্থিতিতে পরিবেশ দূষণ রোধে দেশের বেসরকারি সংস্থাগুলো সব সময় সোচ্চার। পরিবেশ রক্ষায় গত দুই দশকে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা হাইকোর্টে ছয় শতাধিক মামলা করেছে।
সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এবং অবৈধ ইটভাটা ও বায়ু দূষণ রোধে আন্দোলনকারী সংগঠন এইচআরপিবি-র সভাপতি মনজিল মোরশেদ বলেন: এতে অনেক নির্দেশনা রয়েছে। রায় বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের উদাসীনতা রয়েছে। তিনি আরও বলেন, “সারা বিশ্বে নগরায়নের কারণে পরিবেশ দূষণের মাত্রা দিন দিন বাড়ছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে।