রাজনীতি

পরিবহন খাতের মাফিয়া ছিলেন শাজাহান খান গং

দুই নেতা দোদার চাঁদাবাজিকে বৈধতা দিয়েছিলেন। তিনি ১২ বছরে ১২ হাজার কোটি টাকা লুট করেছেন

আওয়ামী লীগ সরকারের সময় নৌমন্ত্রী শাজাহান খান পরিবহন খাতের নিয়ন্ত্রক ছিলেন। সরকারি বাসস্থান নির্ধারণেও শাজাহান খান গং এর ব্যাপক প্রভাব ছিল। এ ছাড়া সরকার নির্ধারিত ভাড়া না মানলেও পরিবহন কোম্পানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারত না সরকার। আবার পণ্য পরিবহনে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়েও শাহজাহান খানের ইন্ধন। তাদের কথাই ছিল রাস্তায় আইন। বিগত সরকার সড়ক আইন প্রণয়ন করলেও শাহজাহান খানের চাপে আইনটি পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়। শাহজাহান খানের নির্দেশে পরিবহন শ্রমিকরা যান চলাচল বন্ধ করে জনগণের দুর্ভোগকে জিম্মি করে দাবি আদায় করতেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শাজাহান খান গং ২০০৯ থেকে ২০২০ পর্যন্ত ১২ বছরে পরিবহন খাতে চাঁদাবাজির নামে ১২ হাজার কোটি টাকা লুট করেছে। এক কথায় শাজাহান খান ছিলেন পরিবহন খাতের একজন মাফিয়া ডন।

সরকারের পক্ষ থেকে শাহজাহান খানের অনুসারীরা পরিবহন খাতের বিকল্প সরকারের ভূমিকায় ছিলেন। শাজাহান খান-ওসমান আলী গ্রুপ পরিবহন খাতে অন্যায় চাঁদাবাজিকে বৈধতা দিয়েছে। যুবলীগ-ছাত্রলীগ নেতারা বিরোধী দলের কর্মসূচিতে পরিবহনে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে বিপরীত মতের লোকজনকে আসামি করে মামলা করতো বলে অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন। সবই হয়েছে শাহজাহান খানের নির্দেশে।

গত ১৬ বছরে শাজাহান খান ছাড়াও ঢাকা সড়ক পরিবহন সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্লাহ এবং সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী পরিবহন খাত নিয়ন্ত্রের ভূমিকায় ছিলেন। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি শাজাহান খানের বিরুদ্ধে প্রাতিষ্ঠানিক চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে। সে সময় ফেডারেশনের অন্তর্ভুক্ত ২৪৯টি শ্রমিক সংগঠনের মাধ্যমে চাঁদা সংগ্রহ করা হত। এর একটি বড় অংশ নিয়মিত শাহজাহান খানের পকেটে যায়। ফেডারেশনের শীর্ষ নেতা হয়েও পরিবহন মালিক সমিতির প্রভাবশালী নেতাদের সঙ্গে মিলে সড়ক থেকে কোটি কোটি টাকা চাঁদাবাজি করেছে।

সড়ক পরিবহন আইনে সড়ক টোল আদায়ের কোনো বিধান নেই। তবে পরিবহন খাতে বেপরোয়া চাঁদাবাজি চলছিল শাজাহান খানের নেতৃত্বে। বিভিন্ন টার্মিনাল ও উপজেলা পর্যায়ে সংগৃহীত চাঁদাগুলোর এক-পঞ্চমাংশ বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের নামে যায়। এই ফেডারেশনের সবকিছুই চলছিল শাহজাহান খানের নির্দেশে।

শাজাহান খান চাঁদাবাজিকে বৈধতা দিতে সড়ক পরিবহন সংস্থার পরিচালন ব্যয় বা সার্ভিস চার্জ সংক্রান্ত নির্দেশিকা প্রণয়ন করেন। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি, সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন, বাস ট্রাক মালিক সমিতি, ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতি এই নির্দেশিকা প্রণয়নের সঙ্গে যুক্ত ছিল।

ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির আহ্বায়ক সাইফুল আলম বলেন, শাজাহান খান বিভিন্নভাবে বাস মালিকদের জিম্মি করে রাখতেন। তার জন্য কোনোভাবেই সড়কে চাঁদাবাজি ঠেকানো যায়নি। কতিপয় অসাধু বাস মালিক নেতার সঙ্গে যোগসাজশ করে তিনি পরিবহন খাতকে ধ্বংস করেছেন। অনেক মালিক তার কাছে জিম্মি হয়ে পড়ে। পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনকে তিনি তার ইচ্ছামতো ব্যবহার করেছেন। ঢাকা-মাদারীপুর রুটের মোট পরিবহন কোম্পানিতে শাজাহান খানের একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল।