• বাংলা
  • English
  • জাতীয়

    পরিবর্তিত অফিস সময়ের বিজ্ঞপ্তি।কর্মকর্তা-কর্মচারীরা চাই সুস্পষ্ট নির্দেশনা

    সরকার ঘোষিত নতুন অফিস সময় কত দিনের জন্য পরিবর্তন করা হয়েছে সে বিষয়ে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা স্পষ্ট নির্দেশনা চান। তারা বলছেন, হঠাৎ এমন নির্দেশ এসেছে। দীর্ঘমেয়াদী ব্যক্তিগত এবং অফিসের কাজের ব্যবস্থাপনার জন্য একটি নতুন পরিকল্পনা করতে হবে নাকি কয়েক দিনের জন্য খাপ খাইয়ে নিতে হবে তা সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হবে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার কর্মকর্তাদের সরকারি সিদ্ধান্তে মতামত জানানোর সুযোগ নেই। তাদের কেউ কেউ মিডিয়া অফিসে ফোন করে বা ব্যক্তিগতভাবে সাংবাদিকদের অনুরোধ করেন।

    এ বিষয়ে মন্তব্য করতে চাইলে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন গতকাল বলেন, ‘নতুন অফিস সময় শুরু হয়েছে। প্রথম দিন ভালো লাগছে। তবে এক সপ্তাহ না গেলে বোঝা যাবে না। নতুন নিয়মে অভ্যস্ত হতে কয়েকদিন সময় লাগে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাদের বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নতুন নিয়ম চলবে। তাই কতদিন এই ব্যবস্থা থাকবে তা জানানো হবে।’ তবে কবে নাগাদ জানানো হবে তা জানাতে পারেননি প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন।

    গত সোমবার নতুন অফিস সময়ের প্রজ্ঞাপন জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিধি-৪ শাখা। এরপর বিচার বিভাগ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একাধিক বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন পর্যায় থেকে অফিস সময় পরিবর্তনের জন্য বিভিন্ন অফিস আদেশ জারি করা হয়েছে। কোন আদেশে কত দিনের জন্য এই নিয়ম চালু করা হয়েছে তা উল্লেখ নেই। তবে সরকারের নীতিনির্ধারকরা বলছেন, এটি একটি সাময়িক পদক্ষেপ। কিন্তু কত দিন, তার কোনো উত্তর নেই।

    জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মেহেদি-উল শহীদ স্বাক্ষরিত সরকারি প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের অফিস রবিবার থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত ‘পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত’ খোলা থাকবে। জনপ্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শীত ও গরমের ঋতু প্রতিবছরই পরিবর্তন হয়। তারা পূর্বনির্ধারিত। বাংলাদেশে এ ধরনের নিয়ম চালু হলে কোনো সমস্যা নেই। সেক্ষেত্রে স্পষ্ট নির্দেশনা থাকলে সবাই তাদের পরিকল্পনা ঠিক করতে পারে।

    বুধবার তিন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের প্রশাসন বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ও যুগ্ম সচিবদের সঙ্গে কথা বলে। তাদের কেউই নতুন অফিসের সময়সূচি নিয়ে পূর্ণ সন্তুষ্টি প্রকাশ করেননি। দুজনেই জানান, তাদের অধীনস্থরা জানতে চান এই নিয়ম কতদিন চলবে। তার অধীনে থাকা একজন উপসচিব সচিবালয়ের চার নম্বর ভবনে যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার এক কর্মকর্তাকে বলেন, স্বামী-স্ত্রী দুজনেই কর্মচারী। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত দুটি বাচ্চাকে স্কুলে নিয়ে যান এবং নিয়ে আসেন। সকালবেলা অফিস আর স্কুল হওয়ায় এখন এটা আরও কঠিন হয়ে পড়েছে। কর্মকর্তা তার বসকে বলেন, সরকার কত দিনের জন্য নিয়ম করেছে তা জানালে ভালো হবে। যদি কম দিনের জন্য হয় তাহলে কষ্ট করে সামলাবেন। তা না হলে আপাতত পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য গ্রামের আত্মীয়দের মধ্য থেকে কাউকে আনার কথা ভাবছেন তিনি।

    প্রথম দিন যেমন ছিল: গতকাল বুধবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত নির্ধারিত নতুন অফিস সময়ের প্রথম দিন ছিল। পরিবর্তিত অফিস সময়ের প্রথম দিন ভালোভাবেই পার করেছেন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। যাদের সকালে বাচ্চাদের স্কুলে পাঠানোর তাড়না নেই তাদের যানজট ছাড়া আর কোনো সমস্যা হয় না। যারা তাদের সন্তানদের স্কুলে নামিয়ে অফিসে যেতেন তাদের সময় ব্যবস্থাপনা ও যানজট এই দুই সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।

    প্রথম দিনেই শিশুকে স্কুলে নামানোর পর তথ্য মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা সময়মতো মন্ত্রণালয়ে পৌঁছাতে পারেননি। তার রিপোর্টিং বসকে খবর দেন এবং আধঘণ্টা পরে অফিসে পৌঁছান। তার সঙ্গে দেখা করার পর তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, ভাই কিছু লেখেন, এভাবে সকালে স্কুল-ট্রাফিকের চাপ নেওয়া সম্ভব নয়। যদি এটা কয়েক সপ্তাহের জন্য হয় তাহলে সেটা ভিন্ন ব্যাপার। আমি কষ্ট করে সামলে নেব। কিন্তু এই নিয়ম কতদিন চলবে তা না জেনে মানসিক চাপ তৈরি হবে।

    ইসলামিক ফাউন্ডেশনের একজন কর্মকর্তার আগারগাঁওয়ে অফিসের কাছে তার বাড়ি ও বাচ্চাদের স্কুল রয়েছে। সকাল ৭টার দিকে বাচ্চাকে স্কুলে পাঠানোর পর তিনি বাড়িতে গিয়ে গোসল করে অফিসে আসেন। গতকাল নতুন অফিসের জন্য তার রুটিন পরিবর্তন করেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা বলেন, আমার বাসা, কর্মস্থল ও সন্তানের স্কুল কাছাকাছি হওয়ায় কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু যাদের বাড়ি অনেক দূরে, তাদের জন্য এত সকালে অফিসে আসাটা বড় চ্যালেঞ্জ।

    মন্তব্য করুন