• বাংলা
  • English
  • জাতীয়

    পদ্মা সেতু নতুন বিনিয়োগ আনবে।শিল্পায়ন হবে দক্ষিণ-পশ্চিম, কর্মসংস্থান বাড়বে

    পদ্মা সেতুর মূল কাঠামো দৃশ্যমান হওয়ার পরে, এর অর্থনৈতিক সুবিধার বিভিন্ন দিক সামনে আসছে। এই সেতুটি অর্থনীতিতে নতুন বিনিয়োগ আনবে। শিল্পায়নের ফলস্বরূপ, দক্ষিণ-পশ্চিমের ২১ টি জেলায় কর্মসংস্থান বাড়বে। এই অঞ্চলে দারিদ্র্য হ্রাস পাবে। অর্থনীতিবিদ ও উদ্যোক্তারাও তাই ভাবেন।

    স্বপ্নের পদ্মা সেতুর শেষ স্প্যানের ইনস্টলেশন গত বৃহস্পতিবার শেষ হয়েছে। বাকি অবকাঠামো নির্মাণের পর পরের বছরের শেষদিকে এই সেতুটি যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। সড়ক সেতুর পাশাপাশি পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের কাজও চলছে। রেল যোগাযোগ শুরু হলে বিনিয়োগ বাড়ানো হবে। অনেক বড় শিল্পপতি পদ্মা সেতুতে বিনিয়োগের পরিকল্পনা করছেন। কিছু শিল্প গ্রুপ পদ্মা জুড়ে বিভিন্ন জেলায় জমি কিনছে। আবার অনেক প্রতিষ্ঠান জমি খুঁজছে। সরকারও সেতুটির চারপাশে অর্থনৈতিক ও শিল্প অঞ্চল গড়ে তুলছে। এক কথায়, বিনিয়োগ-বঞ্চিত পদ্মা এখন বিনিয়োগের জন্য একটি আকর্ষণীয় কেন্দ্র হয়ে উঠছে।

    বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে এই সেতুটি দেশগুলির মধ্যে আঞ্চলিক যোগাযোগ প্রসারিত করবে এবং বিভিন্ন ধরণের পরিবহন বাড়বে। তবে পদ্মা সেতু কেবল পরিবহণের জন্য করিডোর হিসাবে নয়, শিল্পায়নের জন্য একটি অর্থনৈতিক করিডোর হিসাবেও কাজ করবে। এই সেতুটি দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলিতে বিনিয়োগ বাড়িয়ে তুলবে। এই অঞ্চলে কর্মসংস্থান হবে। এটি দারিদ্র্য এবং বৈষম্য হ্রাস করবে।

    বিভিন্ন দেশি-বিদেশি সংস্থাগুলি বারবার সমীক্ষা করেছে এবং বলেছে যে পদ্মা সেতু আঞ্চলিক ও জাতীয়ভাবে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়িয়ে তুলবে। পূর্ববর্তী সমীক্ষায় বিশ্বব্যাংক বলেন যে পদ্মা সেতু বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ১.২৫ শতাংশ বাড়িয়ে তুলবে। তবে এখন বিশেষজ্ঞরা বিশ্বাস করেন যে পদ্মা সেতুতে রেল যোগাযোগের বিস্তৃতি জাতীয় অর্থনীতিতে আরও বেশি প্রভাব ফেলবে।

    জানা গেছে, অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের পাশে জমি কিনেছে। অনেকে কারখানা স্থাপন শুরু করেছেন। বিএসসিক গোপালগঞ্জ ও ভাঙ্গায় একটি শিল্প নগরীতে পরিণত হচ্ছে। অনেক নতুন উদ্যোক্তা এই নতুন শিল্প নগরীতে প্লট বরাদ্দ করতে আগ্রহ দেখিয়ে চলেছেন বলে জানিয়েছেন বিসিকের পরিচালক (শিল্প উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ) মোঃ খলিলুর রহমান। ইতিমধ্যে দক্ষিণের জেলাগুলির অন্যান্য বিসিক শিল্প নগরীতেও প্লট বরাদ্দের চাহিদা বেড়েছে। ইতোমধ্যে সরকার মাদারীপুরে শেখ হাসিনা তাঁতী গ্রাম স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে। অনেকে বিনিয়োগের জন্য বাগেরহাটে জমি কিনেছেন। অনেকে জমি খুঁজছেন। বাগেরহাট চেম্বারের সভাপতি শেখ লিয়াকত হোসেন বলেন, পদ্মার উপরে কোনও ব্রিজ না থাকায় বাগেরহাটসহ এলাকার ব্যবসায়ীরা ঢাকা বা চট্টগ্রামের বড় বড় কোনও শিল্পের সরবরাহকারী হতে পারবেন না। এই অঞ্চলগুলিতে কোনও শিল্প প্রতিষ্ঠান ছিল না। আশা করি, এই সমস্যাটি দূর হবে। তিনি জানান, অনেকে বাগেরহাটে কারখানা স্থাপনের জন্য জমি কেনার জন্য তাঁর সাথে যোগাযোগ করছেন। তিনি জানান, বাগেরহাটের সুন্দরবনের মংলায় একটি স্টার স্টাড হোটেল স্থাপনের জন্য জমি খুঁজছে।

    ইতোমধ্যে পদ্মা সেতুর বিশাল কাজটি দেশের নির্মাণ শিল্পে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। সরকার দেশের সংস্থাগুলির কাছ থেকে ইস্পাত, সিমেন্ট, রড, বালু, পাথর এবং অন্যান্য সামগ্রী সংগ্রহ করেছে। এতে ওই সংস্থাগুলির ব্যবসা বেড়েছে। অন্যদিকে কয়েক হাজার বছর ধরে রাস্তা নির্মান, কেঁচোবাড়ি, বালু ভরাট, নদী শাসন, এবং বিভিন্ন স্থানে সেতু নির্মাণে কয়েক হাজার শ্রমিক নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।

    গবেষণা ইনস্টিটিউট পিআরআই-এর এক গবেষনায় অনুসারে, এই সেতুটি আগামী ৩১ বছরে সড়ক ব্যবহারকারীদের ১.২৯ লক্ষ কোটি টাকার উপকার করবে। এর বাইরে বিনিয়োগ আকর্ষণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং দারিদ্র্য বিমোচনের মতো অর্থনৈতিক সুবিধা রয়েছে। জাপানের আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এর পর্যালোচনাও একই রকম উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। পিআরআইয়ের প্রবীণ অর্থনীতিবিদ ড. আশিকুর রহমান বলেন, পদ্মা সেতুর প্রথম সুবিধা হ’ল ভ্রমণের সময় হ্রাস পাবে। এছাড়াও, দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমের সাথে অন্যান্য অঞ্চলে বৈষম্য হ্রাস পাবে। ঢাকার উপর চাপ অনেক কমে যাবে। এ ছাড়া বরিশাল ও খুলনা বিভাগে বিনিয়োগ বাড়বে। ইতিমধ্যে বিনিয়োগ শুরু হয়েছে। প্রয়োজনীয় সুবিধা এবং পরিবেশ নিশ্চিত করা হলে এই অঞ্চলটি বিনিয়োগের একটি নতুন ক্ষেত্র হবে। এর ফলে এসব ক্ষেত্রে কর্মসংস্থান বাড়বে।

    বিশ্বব্যাংকের প্রাক্তন শীর্ষস্থানীয় অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন  বলেন, পদ্মা সেতুর শেষ স্প্যানটি রেখে একটি মাইলফলক অতিক্রম করা হয়েছে। বাকি কাজ দ্রুত করা দরকার। এই সেতুটি যত তাড়াতাড়ি  খোলা হবে, তত তাড়াতাড়ি অর্থনৈতিক সুবিধা পাওয়া যাবে। এছাড়াও দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল সরাসরি অর্থনীতির সাথে যুক্ত হবে।

    মন্তব্য করুন