দেশজুড়ে

পদ্মা সেতু এলাকায় দুই মাসের পানিবন্দি জীবন, ভোগান্তিতে ৩০০ পরিবার

মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলার পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প এলাকায় প্রায় দুই মাস ধরে ৩০০ পরিবার আটকা পড়েছে। উপজেলার মেদিনীমণ্ডল ইউনিয়নের কান্দিপাড়া এলাকায় পানি নিষ্কাশনের কোন উপায় না থাকায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বাড়িঘর থেকে পানি নিষ্কাশনের জন্য জশলদিয়া স্লুইস গেট থেকে মধ্য কান্দিপাড়া পর্যন্ত একটি ড্রেন তৈরি করা হলেও এটি সরাসরি পদ্মা নদীর সাথে সংযুক্ত নয়। ফলে, এলাকায় বৃষ্টির পানি আটকে থাকার কারণে প্রায় ২০০০ মানুষ জলাবদ্ধতার শিকার হচ্ছে। জানা গেছে, ২০১৪ সালের নভেম্বরে পদ্মা সেতুর মূল নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ার আগে চীনা কোম্পানি সিনোহাইড্রো কর্পোরেশন মাওয়া প্রান্ত থেকে জশলদিয়া পর্যন্ত ৪ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি বাঁধ তৈরি করে। সে সময় ড্রেন বা পাইপলাইন স্থাপন না করায় স্থানীয়রা আপত্তি জানিয়েছিলেন। বাঁধের শেষে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল সেতু কর্তৃপক্ষ। কিন্তু কাজ শেষ হওয়ার পর, কোনও ড্রেন বা পাইপলাইন স্থাপন করা হয়নি। সেই থেকে প্রতি বছরই কান্দিপাড়ার মানুষ জলাবদ্ধতার সম্মুখীন হচ্ছেন। দশ বছর পরেও সমস্যার সমাধান হয়নি। ২০২২ সালের ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধনের সময়ও কান্দিপাড়ার পানি নিষ্কাশনের জন্য কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। স্থানীয়দের বারবার দাবি সত্ত্বেও, কর্তৃপক্ষ তা আমলে নিচ্ছে না। স্থানীয় বাসিন্দা মাহিনুর ইসলাম হিরু বলেন, “তারা সেতু উদ্বোধনের আগে ড্রেন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, কিন্তু তারা তা পালন করেনি।” আরেক বাসিন্দা সোলায়মান শেখ অভিযোগ করেন, “আমরা পদ্মা সেতু নির্মাণে সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা করেছি, তবুও আমরা দশ বছর ধরে জলবাহিত রোগ এবং অস্বাস্থ্যকর পরিস্থিতিতে বাস করছি।” গৃহিণী রেহানা বেগম বলেন, “দুই মাস ধরে বাড়ির উঠোনে জল জমে আছে। রান্নাঘর জলে ডুবে আছে। এমনকি শিশুদের টয়লেটে যেতেও জল পায়ে হেঁটে যেতে হয়। সব সময় জলে হাঁটতে হাঁটতে শিশুদের পা ব্যথা হয়ে যায়। আর এতদিন ধরে জল জমে থাকার কারণে দুর্গন্ধ অসহনীয়।” প্রবীণ সবুজ হাওলাদার বলেন, “যখন কেউ মারা যায়, তখন লাশ রাখার জায়গা থাকে না, উঁচু রাস্তায় রাখতে হয়।” লৌহজংয়ের ইউএনও মো. নেছার উদ্দিন বলেন, “কেউ আমাকে এ বিষয়ে অবহিত করেনি। জশলদিয়া এলাকায় পানি নিষ্কাশনের কাজ চলছে। আমি কান্দিপাড়া পরিদর্শন করব এবং অভিযোগ শুনে সেতু কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করব।”