পদ্মা সেতুতে গাড়ি কোন পথে যাবে।রাজধানী ঘিরে সার্কুলার রুটের খবর নেই
আপনি যদি পদ্মা সেতু ব্যবহার করে দক্ষিণে যেতে চান তবে আপনাকে যানজটে ভরা রাজধানীর ভেতর দিয়ে যেতে একই অবস্থায় পড়তে হবে ঢাকা-উত্তরবঙ্গ, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের দক্ষিণবঙ্গমুখী যানবাহনকে। অথচ রাজধানী ঘিরে সার্কুলার রুট নির্মাণের বহু পুরোনো পরিকল্পনাটি বাস্তবায়িত হলে শহরের ভেতরে প্রবেশ না করেই মহাসড়কের যানবাহন পদ্মা সেতু ব্যবহার করতে পারত।পদ্মা সেতুর কাজ আগামী দেড় বছরের মধ্যে শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ঢাকার দোলাইরপাড় থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত দেশের প্রথম এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজটি সেতুর উভয় প্রান্তে শেষ হবে। তবে রাজধানীর দুর্গম যানজট অতিক্রম করা ছাড়া অন্য মহাসড়ক থেকে যানবাহনের এই এক্সপ্রেসওয়েতে যাওয়ার কোনও সুযোগ নেই।
পদ্মা সেতু খোলার পরে দক্ষিণে যানজট আরও বাড়বে। পরিবহন বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, এসব যানবাহন ঢাকা দিয়ে গেলে রাজধানীতে অসহনীয় যানজট আরও তীব্র হয়ে উঠবে। তারা বলছেন, রাজধানী ঢাকার আশেপাশে একটি বৃত্তাকার রাস্তা তৈরির পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে দুর্ভোগের কোনও আশঙ্কা থাকবে না।
দ্মা সেতু নির্মাণের সঙ্গে সংশ্নিষ্টরা বলছেন, বছর দেড়েকের মধ্যে মূল সেতু যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া যাবে।তবে সড়ক ও জনপথ বিভাগ (আরএইচডি) জানিয়েছে যে এটি এখনই শুরু করতে পারলেও গাবতলী থেকে অভ্যন্তরীণ রুটের কদমতলী বিভাগটি শেষ করতে কমপক্ষে চার বছর সময় লাগবে, এই বিভাগটি কেরানীগঞ্জের কদমতলীতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কটিকে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের সাথে সংযুক্ত করবে। রাজধানীর পশ্চিম প্রান্তে, কদমতলী বিভাগে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে গাবতলী থেকে বোচিলা, হাজারীবাগ, সোরিঘাট পর্যন্ত রাস্তাটি তৈরির পরে, উত্তরবঙ্গ থেকে যানবাহনগুলি শহরে প্রবেশ না করে পদ্মা সেতুতে যেতে সক্ষম হবে । গাবতলী থেকে বাসেও একই সুবিধা পাবেন।
আরএসএ সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা মহানগরীর চারপাশে ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ অভ্যন্তরীণ বৃত্তাকার রুট তৈরির জন্য একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এই প্রকল্পটি দুটি অংশে বাস্তবায়ন করা হবে। ইনার সার্কুলার রুট ফেজ -১ এর আওতায় আবদুল্লাহপুর রেলগেট থেকে তেরমুখ, পূর্বাচল, বেয়ারেড, ডেমরা পর্যন্ত ২৫.৮ কিমি রাস্তা নির্মিত হবে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধকে এই অংশে একটি নতুন রাস্তা তৈরি করতে হবে, যা সময় সাপেক্ষ।
অন্যদিকে, পরিকল্পনা অনুসারে, অভ্যন্তরীণ বৃত্তাকার রুট পর্যায়ে আবদুল্লাহপুর রেলগেট থেকে ধূর, বিরুলিয়া, গাবতলী, বোছিলা, হাজারীবাগ, স্বারিঘাট, কদমতলী, তেঘরিয়া, পোস্তগোলা, ফতুল্লা, চশমা, শিমরাইল থেকে ডেমরা পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার রাস্তা নির্মিত হবে। এখানে ইতিমধ্যে রাস্তা রয়েছে, যা আরও প্রশস্ত করা দরকার। তবে সাকল্যে সড়ক নির্মাণ করতে হবে ৪৭ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। কারণ তেঘরিয়া থেকে পোস্তগোলা পর্যন্ত সাড়ে ৮ কিলোমিটার পথ ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের অংশ। আবদুল্লাহপুর রেলগেট থেকে ধউর পর্যন্ত ৮ কিলোমিটার পথ সেতু কর্তৃপক্ষ নির্মাণ করবে ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের আওতায়। অবশিষ্ট ৪৭ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণে ১২ হাজার ১২৫ কোটি টাকা ব্যয় প্রাক্কলন করে প্রস্তাবিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (পিডিপিপি) পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে সওজ।গবেষণা ও উন্নয়ন পরিকল্পনা অনুসারে, সাড়ে বারো কিলোমিটার দীর্ঘ গাবতলী থেকে কমদতলী বিভাগকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। সংস্থার অতিরিক্ত চিফ ইঞ্জিনিয়ার সবুজ উদ্দিন খান জানান, ইনার সার্কুলার রুট ফেজ -২ এর বিস্তারিত সমীক্ষার শেষ হয়েছে। গাবতলী থেকে কমদতলী বিভাগের বিস্তারিত নকশাও করা হয়েছে। এ অংশে সোরিঘাট থেকে কদমতলী পর্যন্ত একটি বড় সেতুর পরিকল্পনা রয়েছে বলে বিনিয়োগের জন্য এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংককে (আইআইআইবি) কাছে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।বাকীগুলি সরকারের অর্থায়নে নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে। গাবতলী থেকে কমদাতলী বিভাগের বিস্তারিত নকশাও করা হয়েছে। এই সড়কটি বিদ্যমান বাঁধের উপর নির্মিত হবে। জমি অধিগ্রহণের কোনও সমস্যা নেই।
১৯৮৭ সালে আবদুল্লাহপুর থেকে সোয়ারীঘাট পর্যন্ত বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ করা হয়, যা বেড়িবাঁধ নামে পরিচিত। এর ওপরে বর্তমানে দুই লেনের সড়ক রয়েছে। দুই পাশে বাঁধের বিস্তর জমি রয়েছে। সওজের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ইনার সার্কুলার রুট সব মিলিয়ে ২২০ ফুট পর্যন্ত প্রশস্ত হবে। ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের আদলে চার লেনের মূল সড়কের দুই পাশে থাকবে ধীরগতির যান চলাচলের জন্য পৃথক লেন। মূল সড়কে উভয়মুখী ৯ দশমিক ৮ মিটার প্রশস্ত ডাবল লেন থাকবে। মূল সড়কের দু’পাশে দেড় মিটার চওড়া শোল্ডার থাকবে। এর পর থাকবে ধীরগতির যান চলাচলে ৬ দশমিক ২ মিটার চওড়া সড়ক। সড়কের দু’পাশেই সার্ভিস লেনের পর তিন মিটার করে জায়গা খালি রাখা হবে। এক পাশে ১০ মিটার জায়গা খালি রাখা হবে ভবিষ্যতে মেট্রোরেল নির্মাণের জন্য।আরএসএর ঢাকা জোনের ইনচার্জ ইঞ্জিনিয়ার সবুজ উদ্দিন খান বলেন, গাবতলী থেকে সোয়ারিঘাট পর্যন্ত জমির কোনও সমস্যা নেই। স্বারিঘাট থেকে বাবুবাজার ব্রিজ পর্যন্ত বিভাগটি সরু। তারপরে সদরঘাট। এ সড়ক হলে গাবতলীর গাড়ি ঢাকায় ঢুকতে হবে না। উত্তরবঙ্গের গাড়িও এ পথে পদ্মা সেতুতে যেতে পারবে।