পদযাত্রায় সংঘর্ষ, আহত শতাধিক।সারাদেশে বিএনপির কর্মসূচিতে বাধা হামলা, আটক ১০৪
সারাদেশে সাংগঠনিক শক্তি দেখাতে বিএনপি জেলা সদরে পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করলেও অনেক জায়গায় তা করতে ব্যর্থ হয়েছে। অন্তত ছয় জেলায় পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের বাধায় কর্মসূচি স্থবির হয়ে পড়েছে। সংঘর্ষ ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় অন্তত ১৩১ জন আহত হয়েছেন। কর্মসূচি থেকে অন্তত ১০৪ নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। এর মধ্যে নীলফামারীতে বিএনপির মঞ্চ দখল, ভাংচুর ও ব্যানার ছিঁড়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে উল্লাস করার অভিযোগ রয়েছে। অপরদিকে চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গায় পদযাত্রার সময় অসুস্থ হয়ে মারা গেছেন উপজেলা সভাপতি আব্দুল জব্বার।
সরকারের পদত্যাগ, সংসদ ভেঙে দেওয়া, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারসহ ১০ দফা দাবিতে ৬৬টি সাংগঠনিক জেলা সদরে পদযাত্রা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। গতকাল ঝালকাঠির আমতলা রোড কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ মিছিল অবরোধ করলে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়। পাথর ছোড়ায় ওসি (অপারেশন) ফিরোজ কামাল, এসআই নজরুল, শফিকুলসহ পুলিশের ছয় সদস্য আহত হন। অন্যদিকে পুলিশের লাঠিচার্জ ও রাবার বুলেটে আহত হয়েছেন অন্তত ৩০ জন নেতাকর্মী। পরে ঘটনাস্থল থেকে বিএনপির ১৬ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়।
বিনা উসকানিতে লাঠিচার্জ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব শাহাদাত হোসেন। তবে ওসি নাসির উদ্দিন সরকার জানান, নৈরাজ্যের অভিযোগে ১৬ জনকে আটক করা হয়েছে।
বাগেরহাটে পদযাত্রা শেষে ফেরার পথে ৪০ নেতাকর্মীকে আটকের অভিযোগ করেছে বিএনপি। পুলিশ জানায়, নাশকতার পরিকল্পনা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পরে নাশকতার মামলায় তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে রয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-প্রচার সম্পাদক কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক প্রকৌশলী এটিএম আকরাম হোসেন তালিম।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নগরীর মুনিগঞ্জে মিছিলে বাধা দেয় পুলিশ। কর্মসূচি না করে ফেরার পথে প্রথমে পুলিশ তাদের ব্যানার কেড়ে নেয়। পরে শামীমসহ অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ঘটনায় অন্য কোথাও মিছিল করতে পারেনি বিএনপি।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মো. আসাদুজ্জামান বলেন, শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় কর্মসূচি স্থগিত করার নির্দেশনা উপেক্ষা করেছে বিএনপি। এ জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
নেত্রকোনায় মিছিলের চেষ্টায় বাধা দেয় ক্ষমতাসীন দল ও পুলিশ। সংঘর্ষে দুই পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন। পুলিশ পোস্টার, ব্যানার, প্ল্যাকার্ড কেড়ে নিয়ে পুড়িয়ে দেয়। পরে বিএনপির ১২ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়।
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক ডাঃ আনোয়ারুল হক জানান, ভোর থেকেই আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা শহরে প্রবেশের পথ অবরোধ ও মারধর করছে। কেড়ে নেয় ব্যানার-ফেস্টুন। নেত্রকোনা মডেল থানার ওসি খন্দকার সাকের আহমেদ জানান, দুই পক্ষের উত্তেজনা নিরসনে পুলিশকে কঠোর হতে বাধ্য করা হয়েছে। এ সময় ১২ জনকে আটক করা হয়।
যশোরে বিক্ষোভ মিছিল ঘিরে ৩৬ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছে বিএনপি। শুক্রবার রাতে সদর ও চৌগাছা উপজেলায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করে পুলিশ। গ্রেপ্তারের পরও গতকাল চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নাল আবদিন ফারুকের নেতৃত্বে শান্তিপূর্ণ মিছিল করেছে দলটি।
গতকাল দুপুরে কুমিল্লা উত্তর জেলা বিএনপি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চান্দিনা ও দেবিদ্বার সীমান্তের খাদঘর এলাকায় মিছিল করতে গেলে পুলিশ ব্যাপক লাঠিচার্জ করে। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। পুলিশ লাঠিচার্জসহ রাবার বুলেট ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আকতারুজ্জামানসহ অন্তত ২৫ নেতাকর্মী আহত হন।
চান্দিনা থানার ওসি সাহাব উদ্দিন খান বলেন, মিছিলের নামে মহাসড়কে বাধা সৃষ্টি করে বিএনপি নেতাকর্মীরা। সরানোর চেষ্টা করলে তিনি হামলা চালান। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে লাঠিচার্জ ও ৮ রাউন্ড শর্টগান ও ১৩ রাউন্ড রাবার বুলেট নিক্ষেপ করা হয়। উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আখতারুজ্জামান বলেন, শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি চলাকালে পুলিশ বিনা উসকানিতে লাঠিচার্জ ও গুলি চালায়।
নীলফামারীতে পদযাত্রাকে ঘিরে বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়েছে। দুপুরে জেলা পৌর সুপার মার্কেট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। উভয় পক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হয়েছে। পরে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিএনপির মঞ্চ দখল করে ভাংচুর ও ব্যানার ছিঁড়ে উল্লাস করেন।
জেলা বিএনপির সভাপতি একেএম আলমগীর সরকার বলেন, শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে ছাত্রলীগ হামলা চালিয়ে মঞ্চ দখল করে উল্লাস করেছে। ব্যানার ছিঁড়ে ১৫ জন আহত হয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে নীরবে দাঁড়িয়ে থাকে।
মনিরুল শাহ আপেল বলেন, কর্মসূচির নামে দেশবিরোধী স্লোগান দেওয়ায় তাকে বাধা দিয়েছি।
পিরোজপুরে পুলিশের বাধায় মিছিল থমকে যায়। এ সময় পুলিশের সঙ্গে নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়। সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিন। এমনকি পটুয়াখালীতেও পুলিশের বাধায় মিছিল করতে পারেনি বিএনপি।
বিএনপির কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন অসীমের নেতৃত্বে রাজবাড়ীতে বিক্ষোভ মিছিল করলে পুলিশ বাধা দেয়। পরে তারা দলীয় কার্যালয়ে ফিরে যান।
পুলিশ অনুমতি না দেওয়ায় সিরাজগঞ্জে মিছিল করতে পারেনি বিএনপি। নগরীর দলীয় কার্যালয় ও আশপাশের এলাকায় সকাল থেকেই সতর্ক অবস্থানে রয়েছে পুলিশ। তবে সদর থানার ওসি হুমায়ুন কবির জানান, অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে বিএনপি নিজেই কর্মসূচি স্থগিত করেছে।
চুয়াডাঙ্গায় বিক্ষোভ মিছিল করতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে মারা গেছেন আলমডাঙ্গা উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল জব্বার। পদযাত্রায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকা জাতীয় নির্বাহী কমিটির মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক আসিফা আশরাফি পাপিয়া তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।