• বাংলা
  • English
  • জাতীয়

    পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত নিয়ে নতুন পরিকল্পনা।ব্যক্তিগত ইজারা নাকী সরকারী ব্যবস্থাপনায়

    নগর জীবনের ক্লান্তি থেকে মুক্তি পেতে শুধু বন্দরনগরী চট্টগ্রামের নাগরিকরাই নয় পর্যটকরাও ছুটছেন পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে। অব্যবস্থাপনা সত্ত্বেও এই সমুদ্র সৈকত মানুষকে আনন্দের স্বাদ দিচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরেই সৈকতের এসব অব্যবস্থাপনা দূর করার দাবি জানিয়ে আসছেন পর্যটক ও স্থানীয়রা।

    সম্প্রতি চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চক বা সিডিএ) পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতকে বিশ্বমানের পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে লিজ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ও এ সিদ্ধান্তে সম্মত হয়েছে। তবে শহরবাসীর আশঙ্কা তাদের অবসর উদযাপনের জন্য একমাত্র খোলা জায়গাটি বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করা হবে। ফলে অবসর সময় কাটানোর সুযোগ হারাবে সাধারণ মানুষ। তাদের দাবি বেসরকারি ইজারা নয়, সরকারি ব্যবস্থাপনায় সৈকতকে আধুনিকায়ন করতে হবে।

    চক বলছে সমুদ্র সৈকতের কিছু অংশ লিজ দেওয়া হবে, তবে অন্য অংশ জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সৈকতের একাংশ বেসরকারিকরণ না করে বিশেষ পর্যটন অঞ্চলে (এক্সক্লুসিভ ট্যুরিস্ট জোন) পরিণত করা যেতে পারে। তবে পরিকল্পনা করতে হবে। তারা সব সংগঠনকে সংযুক্ত করে একটি সৈকত ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠনের কথাও বলছেন।

    চক সূত্রে জানা গেছে, চকের প্রস্তাব অনুযায়ী ‘পর্যটন অঞ্চল-১’ সমুদ্র সৈকতের পতেঙ্গা অংশ থেকে সিইপিজেড পর্যন্ত প্রায় ছয় কিলোমিটার এলাকা জুড়ে থাকবে। আকমল আলী রোড সংলগ্ন আউটার রিং রোডের পশ্চিম পাশে ‘পর্যটন অঞ্চল-২’-এর ২৩ একর জমি থাকবে। ট্যুরিস্ট জোন-১-এ পর্যটকদের জন্য চেঞ্জিং রুম, পাবলিক টয়লেট, উন্মুক্ত মঞ্চ, খাবারের স্টলসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থাকবে। টাকা দিয়ে এখানে ঢুকতে হবে। পর্যটন অঞ্চল-২-এ পর্যটকদের জন্য হোটেল, মোটেল ও রাইডসহ বিভিন্ন ধরনের অবকাঠামো নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। ২০ সেপ্টেম্বর, সিডিএ পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত এলাকায় একটি নির্দিষ্ট স্থানে একটি পর্যটন কেন্দ্র স্থাপন, উন্নয়ন, ব্যবস্থাপনা, সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য মন্ত্রণালয়ের কাছে অনুমতি চেয়েছিল এবং রাজস্ব আদায়ের জন্য এটি মন্ত্রণালয়ের কাছে ইজারা দেয়। ২৭ অক্টোবর গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রনালয় ইজারাটি অনুমোদন করেছে। দুটি জোন পরিচালনার জন্য খোলা দরপত্রের মাধ্যমে প্রাইভেট অপারেটরদের নিয়োগ দেওয়া হবে। তারা বাঁধের ছয় কিলোমিটার প্রসারিত রক্ষণাবেক্ষণ করবে, সিডিএ জানিয়েছে। তারা রাজস্ব আদায়ের একটি অংশও পাবে।

    চত্বরের প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, “সৈকত এখন আবর্জনার স্তূপে ছেয়ে গেছে। সমুদ্র সৈকতে আসা পর্যটকদের জন্য কোনো পাবলিক টয়লেট নেই। তাই একে পর্যটন অঞ্চলে পরিণত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। যদিও এর ছয় কিলোমিটার বেসরকারি ব্যবস্থাপনায়, তবে মাত্র ৮০০ মিটারের এক্সক্লুসিভ জোনে প্রবেশের জন্য টিকিট লাগবে। বাকি সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার সৈকত জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। এখন সবাই যেভাবে সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্য উপভোগ করছে, একইভাবে করবে। এর জন্য আপনার টিকিট লাগবে না। ‘ টেন্ডার প্রক্রিয়া নিশ্চিত করবে যে জোন-১-এ টিকিটের মূল্য খুব কম রাখা হয়েছে।

    তবে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন চট্টগ্রাম-এর প্রধান সম্পাদক আক্তার কবির চৌধুরী দ্বিমত পোষণ করে বলেন, সার্কিট হাউসের সামনের সবুজ উঠান ভেঙে ফেলা হয়েছে। টিকিটের দাম এত বেশি যে সাধারণ মানুষ আর ফয়’র লেকে লেকে যেতে পারে না। অন্তত পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত থাকুক- যেখানে সাধারণ মানুষ এখনও যেতে পারে। সব কিছু লেনদেন করা যায় না। ৫-১০ টাকা নামমাত্র প্রবেশ ফি নিয়ে, সিডিএ সমুদ্র সৈকত বজায় রাখতে পারে।

    বিক্ষুব্ধ জনতা ও বিভিন্ন সংগঠন: পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত ইজারা দেওয়ার চেষ্টা ‘প্রতিহত’ করেছে বিভিন্ন সংগঠন। বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী) চট্টগ্রাম জেলা কমিটির সদস্য সচিব শফি উদ্দিন কবির আবিদ বলেন, “সৈকতের মালিকানা সিডিএ নয়। তারা কিভাবে রাষ্ট্রীয় সম্পদ ইজারা দিতে পারে? আসলে সৈকত উন্নয়নের নামে চক বা সিডিএ কমিশন বাণিজ্যের আয়োজন করছে। উন্নয়নের নামে ইতোমধ্যে চট্টগ্রামে পাহাড়, খেলার মাঠ, পার্ক, নদী-জলাশয়সহ সব উন্মুক্ত স্থান ধ্বংস করা হয়েছে। সিআরবি প্রাইভেট ইউনাইটেড হাসপাতাল ইজারা নিয়ে ভেঙে ফেলার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। এখন একমাত্র খোলা জায়গা পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত অবরুদ্ধ করার প্রক্রিয়া চলছে। সিডিএর এই সিদ্ধান্ত জনবিরোধী। এ সিদ্ধান্ত বাতিল না হলে নগরবাসীকে নিয়ে বৃহত্তর গণআন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

    এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) নগর ও আঞ্চলিক পরিকল্পনা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মুহাম্মদ রাশিদুল হাসান বলেন, তবে অধিকাংশ অংশ সাধারণের জন্য উন্মুক্ত রাখতে হবে। ন্যূনতম সুযোগ-সুবিধাও নিশ্চিত করতে হবে। সিডিএ এটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। তাই জেলা প্রশাসন, সিটি করপোরেশন, পুলিশকে সম্পৃক্ত করে একটি সৈকত ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করা যেতে পারে।

    মন্তব্য করুন