নাইক্ষ্যংছড়িতে জিরো লাইনে আবারও গোলাগুলি, রোহিঙ্গা শিবিরে আগুন
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম-তুমব্রু সীমান্তে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া আগুনে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের প্রায় ৫ শতাধিক ঘরবাড়ি পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। সেখানে অবস্থানরত রোহিঙ্গারা বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের ভেতরে আশ্রয় নিয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকাল ৭টা থেকে ৮টার মধ্যে নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম-তুমব্রু সীমান্তের জিরো লাইন এলাকায় গোলাগুলির শব্দ শুনতে পান স্থানীয় লোকজন। এর আগে বুধবার মিয়ানমারের জিরো লাইনে দিনভর গোলাবর্ষণের ঘটনায় একজন নিহত ও দুইজন গুলিবিদ্ধ হন।
এ প্রসঙ্গে তুমব্রু সীমান্তের জিরো লাইনের রোহিঙ্গা নেতা দিল মোহাম্মদ বলেন, “বৃহস্পতিবার সকালেও এখানে গোলাবর্ষণ হয়েছে। আমাদের ক্যাম্পের ৬২১টি পরিবারের প্রায় ৫০০ বাড়ি আগুনে পুড়ে গেছে। অধিকাংশ মানুষ। মিয়ানমারের সীমান্তের ভেতরে আশ্রয় নিয়েছে।কিছু লোক বাংলাদেশেও আশ্রয় নিয়েছে।মূলত একটি সশস্ত্র দল জিরো লাইন থেকে সরিয়ে নিতে ক্যাম্পে আগুন দিয়েছে।’
সীমান্তের বাসিন্দারা জানিয়েছেন যে বৃহস্পতিবার সকালে তুমব্রু সীমান্তের কোনারপাড়া জিরো লাইন রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় মিয়ানমারের দুই সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (এআরএসএ) এবং রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের (আরএসও) মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। . একপর্যায়ে ক্যাম্পে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। প্রায় ৫ শতাধিক রোহিঙ্গার ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়। ফলে তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আশপাশের বেশ কয়েকটি এলাকায় রোহিঙ্গারা আশ্রয় নিয়েছে।
রোহিঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রোমেন শর্মা স্বীকার করেছেন যে কিছু রোহিঙ্গা বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘আজকের গোলাগুলির কথা জানি না। তুমব্রু সীমান্তে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। জিরো লাইনে থাকায় আন্তর্জাতিক আইনে হস্তক্ষেপ করার কোনো এখতিয়ার নেই আমাদের। তবে স্থানীয়দের কাছ থেকে শুনেছি জিরো লাইন রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বেশির ভাগ বাড়িঘর পুড়ে গেছে।
এর আগে বুধবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান গণমাধ্যমকে বলেন, “চার থেকে পাঁচজন রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকেছে। আমরা তাদের গ্রেপ্তার করেছি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। তাদের নিজ বাড়িতে পাঠানো হবে।”
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সাল থেকে তুমব্রুতে জিরো লাইনে স্থাপিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ৪ হাজার ২৮০ জন রোহিঙ্গা বসবাস করছে। গত বছরের সেপ্টেম্বরে, তুমব্রু সীমান্তে মিয়ানমারের পক্ষ থেকে দেশটির সেনাবাহিনী এবং স্বাধীনতার পক্ষের বিদ্রোহী আরাকান আর্মির মধ্যে প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে সংঘর্ষ হয়। ওই সংঘর্ষে মিয়ানমারের দিক থেকে মর্টার শেল তুমব্রু সীমান্তের বাংলাদেশের ভূখণ্ডে পড়ে। এ সময় বাংলাদেশে নিযুক্ত মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে কয়েক দফা প্রতিবাদ জানায় বাংলাদেশ। বাংলাদেশের ভূখণ্ডে মর্টার গোলাবর্ষণের জন্য বার্মা দুঃখ প্রকাশ করেছে। তারা জানান, ভুলবশত মর্টার শেল বাংলাদেশের ভূখণ্ডে পড়েছিল।