• বাংলা
  • English
  • বিজ্ঞান ও প্রজক্তি

    নবাবগঞ্জে বাণিজ্যিক চাষ।ডুমুরের লাভের আশা

    ‘আমি অন্ধকারে জেগে উঠে ডুমুর গাছের দিকে তাকাই / দেখি ভোর পাখি ছাতার মতো বড় পাতার নীচে বসে আছে’ – জীবনানন্দ দাশের বহু কবিতায় ডুমুর শব্দটি বিভিন্নভাবে উঠে এসেছে। একসময় গ্রামবাংলার রাস্তার ধারে ডুমুর গাছ গুল্মগুলিতে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যেত। ডুমুর দুই ধরণের ছিল। এর পাতা রুক্ষ, এটি বুনো; অখাদ্য ডুমুর গাছ, যা মসৃণ পাতা ছিল, কেবল পাকা এবং লাল হয়ে গেলে কেবল শিশু এবং কিশোররা খেতে পারত। প্রবীণরা অবহেলিত ছিল। পুষ্টির ও ঔষধি গুণগুলির কারণে সেই ডুমুরের প্রতি মানুষের আগ্রহ এখন বেড়েছে। বিশেষত আরব দেশগুলির মরুভূমিতে ডুমুরগুলি পবিত্র কোরআনে সূরা তুওয়ানের মধ্যে বর্ণিত। দুটির অর্থ ডুমুর।

    দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলায় এসব ডুমুর বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে। মতিউল মান্নান নামের একজন উদ্যোক্তা আরবীয় ডুমুর বাগানের গাছ লাগিয়ে এই অঞ্চলে সাড়া জাগিয়েছেনন। তার বাগান থেকে ডুমুরের বিপণন কয়েক দিনের মধ্যে শুরু হবে।

    উপজেলার মালারপাড়া গ্রামের মতিউল মান্নান পেশায় ব্যবসায়ী। অেবসর সময়ে তিনি গাজীপুরের একটি বাগান থেকে চারা কিনেছিলেন ৫২০টাকায়। তারপর তিনি তার চার বিঘা জমিতে ৯০০টি চারা রোপণ করেন। গাজীপুরের পর দিনাজপুর জেলার এটিই প্রথম উদ্যান। তার বাগানের নাম ‘ফাতেমা এগ্রো ফার্ম অ্যান্ড নিউট্রিশন’। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, জনপ্রিয় এই বাগানের ফল বা ডুমুরটি বিশাল বাগানে সাজানো হচ্ছে চারা রোপণের তিন মাসের মধ্যে ফল ধরতে শুরু করে, যার প্রতিটি ওজন ৮০ থেকে ১০০ গ্রাম। প্রায় ৭০ থেকে ৮০টি ফল। আজকাল লোকেরা প্রতিদিন তাঁর বাগান দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে আসেন।

    উপজেলার দাউদপুর গ্রামের সাগর হোসেন বলেন, “টিউন বাগানে দেখে আমি খুব আনন্দিত। আমি শুনেছি যে এই ফলটি খুব সুস্বাদু এবং ঔষধি গুণাবলী রয়েছে। আমি এই ফলটি আগে কখনও দেখিনি। বাগান মালিকের সাথে পরামর্শ  করে আমার একটা বাগান করার ইচ্ছা আছে।

    ডুমুরে আছে ভিটামিন-এ, ভিটামিন-সি, ভিটামিন-কে, ভিটামিন-বি, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, দস্তা, তামা, আয়রন ইত্যাদি রয়েছে এই ফলটি ডায়াবেটিস, শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি, হৃদরোগ সহ বিভিন্ন রোগের ওষুধ হিসাবে কাজ করে, ক্যান্সার, পাইলস, দুর্বলতা। পাকা ফল রসালো হয়। কাঁচা ডুমুর তরকারি রান্না করে খাওয়া যায়। জাম, জেলি, পুডিং এবং আচারও ডুমুর দিয়ে তৈরি।

    সৌদি আরবে ডুমুরকে ডুমুর নামে পরিচিত, তবে ভারত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, মিশর, তুরস্ক, আফগানিস্তান, ইরান এবং জর্ডান সহ মধ্য প্রাচ্যে ডুমুরকে ডুমুর বলা হয়। এর বৈজ্ঞানিক নাম ‘ফিকাস কারিকা’।

    ফাতেমা এগ্রোর স্বত্বাধিকারী মাতিউল মান্নান বলেছেন, “আমি ভাবছিলাম করোনায় কী করব। পরে আমার ছোট বোনের উৎসাহ নিয়ে আমি বাগানের গাছ লাগানোর উদ্যোগ নিয়েছিলাম। গত অক্টোবরে আমি চার বিঘা জমিতে ৯০০ টি চারা রোপণ করেছি। তিন মাস শেষে গাছে ফল ধরে। এখন ফল উঠেছে। আমি কয়েক দিনের মধ্যে বাজারে বিক্রি শুরু করতে সক্ষম হব। আশা করি, এটি প্রতি কেজি এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হবে। তিনি বলেন যে উত্তরের কোথাও কোনও টিউইন বাগান নেই। আমি প্রথম একটি বাগান  করেছি। প্রতিদিন এই বাগানটি দেখতে অনেক লোক আসেন।

    উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আরব ডুমুর বাংলাদেশের মানুষের কাছে নতুন। আমাদের জলবায়ুতে এই ফলের চাষাবাদ করার উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা বাগান মালিককে বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছি। এই ফলটি যদি বাণিজ্যিকভাবে দেশে ছড়িয়ে দেওয়া যায় তবে এটি যে  কোনও সময়ে বিদেশেও রফতানি করা যেতে পারে

    মন্তব্য করুন